-----------------
আমরা সবাই কম বেশি আমাদের শরীরের সুস্থতার ব্যাপারে সচেতন। সামান্য জ্বর কিংবা সর্দিতেই ডাক্তারের কাছে ছুটোছুটি করি। নাপা, প্যারাসিটামল, এন্টিবায়োটিক কতো রকম ঔষধ খাই। আর ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ হলে তো কথাই নেই। পাড়লে নিজের বাসাতেই একটা ছোটখাটো ফার্মেসী দিয়ে নিই।
শারীরিক সুস্থতার উপসর্গগুলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অধিকতর স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হওয়ায় এ ব্যাপারে আমাদের একটি সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। আমরা আমাদের শারীরিক সুস্থতার ব্যাপারে যতটা যত্নবান, আমাদের মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে ততটাই অমনোযোগী। কারণ মানসিক রোগের উপসর্গগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের বোধগম্য নয়। অথবা সম্পূর্ণ ব্যাপারটিকে আমরা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে থাকি। কেননা অধিকাংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অজ্ঞ।
আমাদের সকলের জীবনেই কোন না কোন সময়ে আমরা সাময়িক ভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হই। আমাদের ব্যাক্তিগত বা কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক সময়ই আমরা মানসিক অবসাদগ্রস্ততা বা বিষন্নতা অনুভব করি। এক পর্যায়ে যখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলো বাধাগ্রস্ত হয়। আর তখনই আমাদের মানসিক অসুস্থতার প্রশ্নটি আসে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর প্রতিবেদন অনুসারে সুস্থতা হলো- মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি অবস্থার প্রেক্ষাপটে একটি ভারসাম্যপূরণ ও স্বাস্থকর সমন্বয়।
সহজ কথায়, সুস্থতা হলো শারীরিক বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি হতাশা, বিষন্নতা, অবসাদ, মানসিক চাপ ইত্যাদি মানসিক সমস্যা থেকে মনকে মুক্ত রেখে সমাজে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হয়ে বসবাস করতে পারা।
অনেক সময় মানসিক অসুস্থতা শারীরিক সুস্থতর উপর প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাব ফেলে। ফলে মনের পাশাপাশি আমাদের শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে অসুখটা যে শারীরিক না মানসিক তা অনেক সময়ই আমরা বুঝতে পারি না।
মানসিক সুস্থতা হলো এমন একটি ইতিবাচক মানসিক অবস্থা, যে অবস্থায় একজন মানুষ তার নিজের সক্ষমতা বুঝতে পারে, জীবনের স্বাভাবিক চাপসমূহের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে এবং উৎপাদনশীল কর্মের মাধ্যমে নিজ সম্প্রদায়ে অবদান রাখতে পারে। মানসিক সুস্থতার দরুন আমরা আমাদের জীবনের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করি।
মানসিক সমস্যার রূপগুলো বিভিন্নরকম হতে পারে। যেমন- অবসাদগ্রস্ততা, হতাশা, বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি। এছাড়া স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বাইপোলারের মতো সমস্যাও উল্লেখযোগ্য।
মানসিক সমস্যাগুলোর উপসর্গসমূহ চিহ্নিত করে উপযুক্ত চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রয়োজনে মানসিক রোগগুলোর চিকিৎসার জন্য সাইকোথেরাপি এবং মেডিটেশনের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যাগুলো নিরাময়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্যা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। সাধারনত মানসিক সমস্যা দেখা দিলে তার সঠিক চিকিৎসা করানো হয় না। মানসিক রোগের উপসর্গগুলোকে অবহেলা করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ সময় সমস্যাগুলোকে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। বিশেষকরে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলগুলোতে মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে সচেতনতা নেই বললেই চলে। ফলে যখনই কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সেটাকে জ্বীন-ভূতের আছর, জাদু টোনা ইত্যাদি কুসংস্কারমূলক অপব্যাখ্যা দেয়া হয়। রোগীকে তার রোগের সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে বিভিন্ন কথিত কবিরাজের ঝাড়ফুঁক জাতীয় কুসংস্কারের আশ্রয় নেয়া হয়। ফলে রোগীর মানসিক অবস্থা আরো বিগরে যা। এক পর্যায়ে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়।
বাংলাদেশে রাজধানী ও জেলা শহর পর্যায়ের কয়েকটি সরকারি মানসিক হাসপাতালসহ বেশ কিছু বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিউট সারা দেশব্যাপি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনা সৃষ্টির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।
কাজেই যখন আমরা অথবা আমাদের পরিবারের কোন সদস্য, বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত কেউ মানসিক ভাবে অসুস্থ বা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে তখন কোন প্রকার কুসংস্কার বা অবহেলার বশবর্তী না হয়ে সঠিক চিকিৎসা সেবার ব্যাবস্থা করতে হবে।
লেখক--
সিয়াম আহমেদ
শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০