ঢাকাসোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

গৌরবের ৫৮ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

——-
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছে। ২১০০ একরের সমতল ও পাহাড়ি এলাকা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে।

১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ফতেপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ নানা আয়োজনের মাধ্যমে ৫৮তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, একটি অনুষদের অধীনে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন শিক্ষক ৮ জন এবং শিক্ষার্থী ছিল ২০৪ জন। বর্তমানে ১০টি অনুষদের অধীনে ৫৪টি বিভাগ, ৭টি ইনস্টিটিউট ও ৬টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৭,৫০০ জন শিক্ষার্থী ও প্রায় ৯০০ জন শিক্ষক রয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রালগ্নে প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান মল্লিক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম ও প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

শহরের যান্ত্রিকতা ও কোলাহল থেকে মুক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার। প্রকৃতি আর মানব প্রাণের এক চমৎকার মেলবন্ধন এখানে পরিলক্ষিত হয়। সবুজ পাহাড়, অজস্র পশু-পাখির এক জীবন্ত জাদুঘর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ছোট ছোট পাহাড় আর পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নজরকাঁড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার। প্রাকৃতিক ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু, চালন্দা গিরিপথ, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, উদ্ভিদ উদ্যান, সুবিশাল মাঠ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে সোজা সামনের দিকে দুই পাহাড়ের মাঝ বরাবর একটি রাস্তা চলে গেছে যা কাটা পাহাড় রোড নামে সুপরিচিত। এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলে। মাঝে মধ্যে মায়া হরিণ কিংবা বিরল প্রজাতির সাপ নজরে পড়ে। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক পাহাড়ি ঝর্ণা। স্থানটি ছাত্র-ছাত্রী আর আগত ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় সবসময় মুখরিত থাকে। রাঙামাটির সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও রয়েছে ঝুলন্ত সেতু। সেতুটি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন। কলা অনুষদের ঝুপরির পাশে রয়েছে চালন্দা গিরিপথ। দুঃসাহসিক ভ্রমণ পিপাসুদের স্থানটি বেশ আকৃষ্ট করে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন রয়েছে টেলিহিল। যেখানে ওপর থেকে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন রয়েছে বিশ্বশান্তি প্যাগোডা। সেখানে রয়েছে একটি ওয়াচ-টাওয়ার। প্যাগোডার নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। প্যাগোডার পাশেই রয়েছে সুইসগেইট। বর্ষাকালে সুইসগেইট তার চিরচেনা রূপ ফিরে পায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য বিরল প্রজাতির গাছ-গাছালি আর জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের হাতছানি। পাহাড়ের ওপর ফুল, ফল আর কাঠ জাতীয় গাছের শোভা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রাণীবিদদের ভাষ্যমতে, ক্যাম্পাসে ৩০৮ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিরল প্রজাতির গিরগিটি, বাগডাসা, সজারু, কাঠবিড়ালি রয়েছে এই ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে আড়াইশ প্রজাতির বৃক্ষের সংগ্রহ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ ভোমরা বলা হয় শাটল ট্রেনকে। ১৯৮৪ সালের দিকে ছাত্রছাত্রীদের চলাচলের জন্য দুটি শাটল ট্রেন চালু হয়। প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম শাটল ট্রেন। পৃথিবীতে একমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চলাচল করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক খ্যাতিমান ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষক রয়েছেন। এ বিদ্যাপীঠ অনেক গুণী মানুষের জন্ম দিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন নোবেল বিজয়ী এবং একাধিক একুশে পদক বিজয়ী রয়েছেন। বিশ্ববিখ্যাত ভৌত বিজ্ঞানী প্রফেসর ইমিরেটাস জামাল নজরুল তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। তাঁর অনেক গ্রন্থ আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশ্বের খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে তাঁর গ্রন্থগুলো পাঠ্যক্রম হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে। সাহিত্যিক সৈয়দ আলী আহসান, আনিসুজ্জামান, আহমদ শরীফ, চিত্রশিল্পী মর্তুজা বশীর, চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরী, সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ, ড. অনুপম সেন, আবু হেনা, মোস্তফা কামাল -এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। সাংস্কৃতিক, নাট্য এবং সংগীতাঙ্গনেও পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

দেশের ক্লান্তিলগ্নে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দুর্বার গতিতে এগিয়ে চললেও কিছু সমস্যা থেকে এখনো বের হতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির নানা সংকটের মধ্যে আবাসন সংকট অন্যতম। শিক্ষার্থীরা এখনও পুরোপুরি আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে না। এজন্য নতুন করে আরও কিছু আবাসিক হল নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগে প্রকৃত মেধাবীদের প্রাধান্য দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হবে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন আনয়ন করলে এবং পুরনো শিক্ষাকাঠামো থেকে বেরিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন করলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়টির সুনাম অনেক বেড়ে যাবে।

———-
মো. আশরাফুল ইসলাম
শিক্ষক ও কলাম লেখক

230 Views

আরও পড়ুন

পাঠকের অনূভুতিতে ❝কলিজার আধখান❞

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বিএনপি সন্দেহ করছে–ড. হুমায়ুন কবির

বিশ্বরূপ চন্দ্র বিশ্বাসের কবিতা:- হাসি

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণসংবর্ধনা ও কাউন্সিল শুক্রবার

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণ সমাবেশ সফল করার লক্ষে সংবাদ সম্মেলন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ