ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

“সড়ক যেন মরণফাঁদ” বন্যা আক্তার

প্রতিবেদক
নিউজ ভিশন
২ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

প্রায় প্রতিনিয়তই খবরের পাতা আর টিভির পর্দা জুড়ে আসে মর্মস্পর্শী সড়ক দুর্ঘটনায় অনিবার্য সংবাদ। যন্ত্রদানবের নৃশংস তান্ডব যেন পাল্লা দিয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠছে প্রতিদিন। অকালে ঝড়ে যাচ্ছে কতো প্রাণ। মৃত্যুর এই মিছিলে যুক্ত হচ্ছে কতো প্রিয়জনের নাম। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করা গেলে, সড়ক দুর্ঘটনা নামক গণমৃত্যুর এই ফাঁদ কি কিছুতেই রোধ করা যায় না?

একটি দূর্ঘটনা সাড়া জীবনের কান্না। শহরের অলিতে-গলিতে সব জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনার খপ্পরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নাগরিক জীবন। একদিকে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে আহত হয়ে পঙ্গুত্বের বোঝা। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বাকরুদ্ধ স্বজনরা। পিতার কাঁধে উঠছে প্রিয় পুত্রের লাশ। অথবা সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগে বড় রাস্তার ট্রাকের চাপায় বাবার চিরতরে বিদায়ের ঘটনা যেনো বর্তমান সময়ের নিত্যনৈমিওিক ব্যাপার। কখনো কখনো একই পরিবারের ৫-৬জনের নিহতের ঘটনা ও শোনা যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যাক্তি যখন পঙ্গুত্বের শিকার হন, সেই পরিবারটি কে যে পথে বসতে হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কতো মেধাবী মুখ হারিয়ে যাচ্ছে, যেই অপূরনীয় ক্ষতি বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য বরাবরই হতাশাজনক।

সড়ক দুর্ঘটনার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। আমরা যদি গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান গুলো পর্যবেক্ষন করি তাহলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পারবো। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতি এবং নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)এর প্রতিবেদন বলে, ২০২০ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫ হাজার ৭৩৫ টি।নিহত ৪ হাজার ৪৩১ জন, আহতের সংখ্যা ৭হাজার ৩৭৯জন।২০১৮ সালের তুলনায়২০১৯ সড়ক দুর্ঘটনা১হাজার ৫৯৯ টি বেশি হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪হাজার ৩৯ জন নিহত ও ৭ হাজার ৪২৫’জন আহত হয়েছিল। আর ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৩৪৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬৪৫ জন নিহত ও ৭ হাজার ৯০৮ জন আহত হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় ২ মাস লকডাউনে পরিবহন সেবা বন্ধ থাকার পরও ২০২০ সালে দূর্ঘটনার হার বেড়েছে ০.৮৯ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ২০ জনেরও বেশী প্রাণ যায় সড়কে, পঙ্গুত্বের শিকার হন ২২০ জন। সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকায়, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ। এবং সবচেয়ে কম সিলেটে।

ঘর থেকে দুয়ারে পা ফেলার সাথে সাথে সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। বাংলাদেশে মূলত যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে কারণ দর্শালে বোঝা যাবে এর জন্য কে বা কারা দায়ী? পরিবহন একটি সেবা। যার মূল চালিকাশক্তি চালক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে, বেশির ভাগ চালক ই অদক্ষ, নেই প্রশিক্ষন।অপ্রাপ্তবয়স্ক,অনেকের কাছে পেশাদারিত্বের বিষয় টি অবহেলিত ।

জরিপে দেখা যায়, চালকের অসর্তকতা আর অবহেলার কারণে বেশির ভাগ দূর্ঘটনা ঘটে (২ সেকেন্ডের অমনোযোগে একটি বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। রাস্থায় চালকের মনোযোগ অন্য দিক থেকে ফিরিয়ে আনতে সময় লাগে ২৭ সেকেন্ড)।চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, প্রতিযোগিতা মূলক মনোভাবেই যাত্রীদের কে দূর্ঘটনার সম্মুখীন করে। দেশে মোট ৩৩ লাখ যানবাহন। যার ১৮ লাখ লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও বাকি ১৫ লাখের লাইসেন্স নেই। অভার টেকিং, অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া, ট্রাফিক সিগনাল না মানা, ত্রুটিপূর্ণ যান, হাইওয়ে তে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা (হার্ড ব্রেক নেই), রাস্তায় ভিটের সংখ্যা কম, বাইকারদের হেলমেট ব্যাবহার না করা, গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা, হেডফোন ব্যবহার করা,সরু -ভাঙা রাস্তা, চালকদের নেশায় আসক্ত,ফুটপাতের উপর বাজার, যেখানে সেখানে স্টপেজ ইত্যাদি মূলত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রধান কারণ। এছাড়া পরিবহন সেবায় চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক ইন্ধন ও দূর্ঘটনার জন্য কিছু টা দায়ী।পথচারীদের অসাবধানতার ফলেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, ফোনে কথা বলে রাস্তা পার হওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনায় রুপ নিয়েছে। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের প্রচলন খুব কম।উল্লেখিত কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় কবলে পরতে হচ্ছে সবাই কে।

কোনো কিছুই জীবনের থেকে দামী নই।সড়ক দূর্ঘটনার বর্তমান পরিস্থিতি দূর্যোগে রূপ নেওয়ার আগেই এটি নির্মূল করতে হবে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যতো মিছিল, মিটিং, সমাবেশ তা দুই তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয় না (২০১৮ সালে ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন তাই প্রামান করে)। তাই মিটিং, মিছিলের পাশাপাশি উচিত নিজে সচেতন হওয়া অন্য কে সচেতন করা।পরিবহন সেবায় যুক্ত ব্যাক্তিদের সাথে সহনশীল আচরণ করা।অনেকেই চালকদের সাথে খারাপ আচরণ করে, অনেক সময় হাতাহাতি, মারামারি পর্যন্ত গড়ায়।বিআরটির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কে প্রশিক্ষনের জন্য সুযোগ দেওয়া। চালকদের পেশাদারি মনোভাব তৈরি করা, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া। ভেতন, ভাতা ও স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়া।লাইসেন্সের ব্যাপারে সরকারের কড়া নজরদারি আরোপ। গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা,মালিক – শ্রমিক সমিত সংঘের সুসম্পর্ক নিশ্চিত। পথচারীদের উচিত সচেতনতার সাথে রাস্তা পারাপার করা,ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহিত করা। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রধান ও জরিমানা দেওয়া, ভ্যাম্যমান আদালতের তৎপরতা বৃদ্ধি এক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর। সরকার আর জনগণের সচেতনতায় পারে দূর্ঘটনা বিহীন একটি নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে। সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য সচেতনতা তৈরি করা জরুরি, একটু সচেতনতাই পারে কতো জীবন বাঁচিয়ে দিতে, সুস্থ সুন্দর হউক পৃথিবী।আর নয় সড়ক দুর্ঘটনা, বাংলাদেশ হউক সড়ক দুর্ঘটনা নির্মূলের রোল মডেল।

লেখক : মোছাঃ বন্যা আক্তার
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

605 Views

আরও পড়ুন

শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার

সাংবাদিক হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় লোহাগাড়ায় সাংবাদিক সমাজের মানববন্ধন

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শান্তিগঞ্জে সেমিনার

শান্তিগঞ্জে জনসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ 

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশ অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামী থেকে মুক্ত হতে পারেনি–অধ্যাপক মুজিব

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের মতবিনিময় সভায় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান 

চট্টগ্রামে জামায়াত নেতার পায়ের রগ কেটে হাত ভেঙে দিয়েছে চাঁদাবাজরা

ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রদল সহ-সভাপতি রাসেল আকন আটক

শান্তিগঞ্জে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষক দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠনের অভিযোগ 

সংবর্ধিত হলেন সেরা কনটেন্ট নির্মাতা শিক্ষক ফারুক ইসলাম

নাগেশ্বরীতে কেন্দ্রীয় ড্যাব নেতার ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

বুটেক্সে নতুন বিভাগ চালু- সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ