-----------------------
গত নিশিতে মোর খুপরিতে
বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন
আমি তখন ঘোর নিদ্রামগ্ন
হঠাৎ তাঁর কণ্ঠ শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলুম
এই কণ্ঠ আমি কতবার শুনেছি রেসকোর্সে, পল্টনে, বেতারে
এই আমার চিরচেনা স্বর
অন্ধকার মোর ছোট্ট কুটির
মুহূর্তে আলোকিত হয়ে উঠল
পুষ্পখচিত স্বর্গীয় আরামকেদারায় নিজস্ব ভঙ্গিতে বসলেন
ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী, মুজিব কোট
মুখে তাঁর চিরচেনা পাইপ
বুকে রক্তলাল বৃত্ত জ্বলজ্বল করছে
যেন স্বাধীন বাংলার পতাকা
অনেক গল্প শুনালেন
সংগ্রামী জীবনের গল্প
হার না মানার গল্প
জেল জীবনের গল্প
জয় বাংলার গল্প
রোমন্থন করলেন অতীত স্মৃতি অকপটে
দুঃখ করে বললেন, "অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি বলে
ওরা আমাকে বহিষ্কার করে দিল
আমিও মাথা নত করিনাই
এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমি গর্ব করব কেন
এ বিশ্ববিদ্যালয়, এদেশ গর্ব করবে আমাকে নিয়ে"
তিনি আমার কাধে হাত রেখে বললেন
দেশ ও জাতির জন্য কাজ করো
অন্যায়, অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে লাড়াই করো
তবে এ পথ বড় বন্ধুর
যারা অপরের জন্য ভাবে
নিজেকে তাদের উৎসর্গ করতে হয়
তোমাকেও প্রচুর যন্ত্রণা সইতে হবে
মুখ খুললেই খাঁচায় বন্দি করা হবে
চালানো হবে অত্যাচারের স্টিমরোলার
দেখনাই, আমাকে দীর্ঘ তেরটি বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে
দিনের পর দিন অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে
পরিবারপরিজন, আরাম আয়েশ বিসর্জন দিতে হয়েছে
দেখনাই, নিজের জীবন, যৌবন উৎসর্গ করলাম
এদেশ, এদেশের মানুষের জন্য
অথচ ওরা আমাকে গুলি করে মারল!
পরিবার পরিজন সহ
কি অপরাধ ছিল আমার
আমি তো ওদের সুখি দেখতে চেয়েছিলাম
আমিতো দেখতে চেয়েছিলাম ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা
আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আজকাল দেশ কেমন চলছে?
বেশ উন্নতি করছি তো আমরা
ঐ পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, রামপাল
তিনি আমাকে থামিয়ে দিলেন
বললেন, আইয়ুব খানও অনেক উন্নয়ন করেছিল
কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের গলাচেপে ধরেছিল বলে
আমরা আন্দোলন করেছিলাম
জুলুমশাহীকে উৎখাত করেছিলাম
তিনি আমাকে বাহান্নের আত্মত্যাগ
বাষট্টির আন্দোলন
ছেষট্টির বাঁচার দাবি
উত্থাল উনসত্তর আর স্বাধীনতা গল্প শুনালেন
জেল জীবনের কষ্টের কথা
নিপীড়িত দেশবাসীর কথা
সংগ্রামি পরিবারের কথা
অকপটে বলে গেলেন
অনেক বিষয় আমি জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছি
সবিশেষ তাঁর কাছে আমাদের ছাত্র রাজনীতির কথা পাড়লাম
তিনি বিমর্ষ মুখে আমার দিকে তাকালেন
মনে হল লজ্জিত
তার মুখ থেকে রক্তিম আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে
গর্জে উঠলেন সেই ৭ই মার্চের মতো
আঙ্গুল উঁচিয়ে বললেন
আমি আবার আসব এই বাংলায়
যারা আমার রাজনীতিকে কলুষিত করেছে
তাদের ঘাড় মটকে দিতে
হনহন করে বেরিয়ে গেলেন খুপরি থেকে আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম
ততক্ষণে সূর্যের আলোয় পূর্বাকাশ আলোকিত হয়ে গেছে
তিনি ঐ পথে অদৃশ্য হয়ে গেলেন
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০