রফিকুল ইসলাম জসিম
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের মণিপুরী মুসলিম (পাঙাল) শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার (শিউলি) কোচিং ছাড়া নিজ চেষ্টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় নিষ্ঠাবান ও আত্মপ্রত্যয়ী ফারহানা। নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে বাড়িতে বসে একাকী অধ্যবসায়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোচিং বা গাইডলাইন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই তরুণী।
শিক্ষাজীবনে ধারাবাহিক সাফল্য রয়েছে ফারহানার। তিনি তেতই গাঁও রসিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭২ এবং আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৫৮ অর্জন করেন। তার এই সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক, পাড়া-প্রতিবেশী এবং পুরো পাঙাল সমাজ আনন্দিত ও গর্বিত।
ফারহানার বাবা মো. সালাহ উদ্দিন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য এবং মা জয়নব বেগম একজন গৃহিণী। পরিবারিক ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মেয়ের প্রতি তাদের আস্থা ও সহানুভূতি ছিল অবিচল।
ফারহানার বড় ভাই শাহাদাত হোসেন বাবলু সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস-এ নন-ক্যাডার পদে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইন্সট্রাক্টর (ফার্ম মেশিনারি) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। একই পরিবারের দুই ভাইবোনের এই অর্জন আজ কমলগঞ্জ এবং মণিপুরী মুসলিম সমাজের গর্বের প্রতীক।
শিক্ষার্থী ফারহানার অনুভূতি
“আলহামদুলিল্লাহ। আমি শাবিপ্রবির বাংলা বিভাগে ভর্তি হতে পেরে খুবই আনন্দিত। এটি আমার জীবনের অন্যতম বড় স্বপ্ন ছিল। কোচিং ছাড়াই নিজে নিজে পড়াশোনা করে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। আমার পাশে ছিল পরিবার, আর ছিল নিজের আত্মবিশ্বাস। আমি চাই আমার এই সাফল্য পাঙাল তরুণীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক।”
ভাই শাহাদাত হোসেনের বক্তব্য
“আমার ছোট বোনের জন্য সবাই দোয়া করবেন। সে নানান শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে, কোচিং ছাড়া একা একাই প্রস্তুতি নিয়ে এই অর্জন করেছে। আমাদের পরিবারের জন্য এটি একটি বড় অর্জন। আমরা সত্যিই গর্বিত।”
ফারহানার এই সংগ্রাম ও অর্জন প্রমাণ করে—আত্মপ্রত্যয়, কঠোর পরিশ্রম এবং পারিবারিক সহযোগিতা থাকলে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা জয় করে স্বপ্নপূরণ সম্ভব। তার এই সাফল্য মণিপুরী মুসলিম তরুণ সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।