নিজস্ব প্রতিবেদক :
সুন্দরবন অধ্যুষিত দক্ষিণ বাংলার বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলাধীন শতবর্ষী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান আমতলী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ, মেধাবী শিক্ষাউদ্যোক্তা ড. আব্দুল্লাহ আল মিজান। বিদ্যুৎসাহী প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন দেশের নন্দিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মো: লুৎফর রহমান।
গত ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শামসুল আলমের অনুমোদনক্রমে রেজিস্ট্রার ড. আইয়ুব হোসেন কমিটির সভাপতি ও বিদ্যুৎসাহী প্রতিনিধির চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
ড. আব্দুল্লাহ আল মিজান
তিনি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শেখ সাইদুর রহমানের সরকারি চাকুরির সুবাদে খুলনা শহরে বেড়ে ওঠেন।
তিনি আমতলী মরহুম পীর সাহেবের প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল ও আলিম পাশ করেন। পরবর্তীতে দেশের শ্রেষ্ঠতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে বোর্ডস্টান্ডসহ ফাজিল ও কামিলে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে সর্বোচ্চ গ্রেড নিয়ে সফলতার সাথে অনার্স এবং মাস্টার্স পাস করেন।
একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ‘তুলনামূলক ধর্ম তত্ত্বে’র উপর গবেষণা করে ২০১১ সালে শিক্ষা জীবনের সর্বোচ্চ সম্মাননা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনে জেলা পর্যায়ে সরকারি বৃত্তি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বৃত্তি, মাদ্রাসা বোর্ড বৃত্তি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অগ্রণী ব্যাংক বৃত্তি, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা সম্মাননাসহ নানাবিধ খ্যাতি অর্জন করেন।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি কিছুদিন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. এর একজন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (খণ্ডকালীন) সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন।
২০০৫ সালে ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা খিলগাঁওয়ে কোয়ালিটি এডুকেশন কলেজ নামে তিনি একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি বর্তমানে বেশ কয়েকটি শাখায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন নিয়ে শিক্ষায় অবদান রেখে চলেছে। কলেজটি ২০১১ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ষষ্ঠস্থান অর্জনসহ অসংখ্যবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের টপ টেনে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২ জন ছেলে সন্তানের জনক। তিনি ঐতিহ্যবাহিত আমিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার স্বনামধন্য প্রিন্সিপাল ও ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সম্মানিত সভাপতি, মাওলানা জয়নুল আবেদীনের দ্বিতীয় কন্যাকে বিবাহ করেন।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে গবেষণা আর্টিকেল লেখালেখির পাশাপাশি তিনি অসংখ্য বই-পুস্তক প্রনেতা, বাংলাদেশের প্রায় সকল টেলিভিশনে টকশোতে ও ইসলামিক প্রোগ্রামে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঐতিহ্যবাহী দর্শক নন্দিত প্রোগ্রাম ‘ইসলাম ও জীবন’ এবং ‘প্রসঙ্গ খুতবা’ এ দুটি অনুষ্ঠানের তিনি নিয়মিত আলোচক।
শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে তিনি ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভুটান, সৌদি আরবসহ বিভিন্নদেশে আন্তর্জাতিক সেমিনার ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। নিজ এলাকা ও ঢাকায় অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
আল্লামা লুৎফর রহমান:
তিনি আমতলী মাদ্রাসার অন্যতম কৃতি ছাত্র। পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করে তিনি দাখিল থেকে কামিল পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। এরপরে তিনি ব্যাচেলর ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে পেশাগত জীবনে অবতীর্ণ হন।
মাওলানা লুৎফর রহমান দেশের আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন উলামা মাশায়েখ পরিষদের মুখপাত্র। তিনি বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতীয় মসজিদ বাইতুল মুকাররমের সন্মানিত মুসল্লী পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স জামে মসজিদের খতীব।
কুরআন – সুন্নাহ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্ত্বাধিকারী মাওলানা লুৎফর রহমান বিটিভি, আরটিভি, বাংলাভিশনসহ ১৭টি টেলিভিশন চ্যানেলের ইসলামিক ও কালচারাল অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
আরটিভির জনপ্রিয় ইসলামিক অনুষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত “আলোকিত কুরআন”, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের “সময়ের সেরা হাফেজ”, জিটিভির “কুরআনের ছোঁয়া”সহ পবিত্র রমজান মাসে টেলিভিশনে প্রচারিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও পরিচালনা করে থাকেন।
পবিত্র কুরআনের আলোকে ডকুমেন্টারি তৈরি করতে তিনি মিসর, মরোক্কো, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ওমান, চীন, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, উজবেকিস্তান, জর্দানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেছেন। তিনি ওই সকল দেশের কৃষ্টি কালচার বাংলাদেশের দর্শক – শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরেছেন।
ড. আব্দুল্লাহ আল মিজান এবং আল্লামা লুৎফর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমতলী মাদ্রাসা তার হারানো ঐয়িহ্য ফিরিয়ে আনবে বলে মাদ্রাসার সাবেক, বর্তনান ছাত্র-শিক্ষক এবং এলাকাবসীর প্রত্যাশা।