সাংস্কৃতিক শক্তিতে বদলে যেতে পারে কক্সবাজারের পর্যটন
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। প্রতিবছর এখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও তা এখনো দেশের পর্যটন শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারছেন না। সমুদ্রভিত্তিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি কক্সবাজারে রয়েছে অনন্য সাংস্কৃতিক সম্পদ—রাখাইন, মারমা ও বাঙালি সংস্কৃতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা এক বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য। এই সাংস্কৃতিক শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে কক্সবাজার হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক পর্যটনের কেন্দ্র।
প্রথমত, স্থানীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে সমুদ্রসৈকত ও শহরের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত লোকসংগীত, নৃত্য, বাঁশি ,ঢোলের পরিবেশনা ও লোকগল্প-ভিত্তিক নাট্যমঞ্চায়ন আয়োজন করা যেতে পারে। এতে যেমন পর্যটকরা বিনোদিত হবে, তেমনি স্থানীয় শিল্পীরাও নিয়মিত মঞ্চ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।
দ্বিতীয়ত, কক্সবাজারকে সামনে রেখে আয়োজন করা যেতে পারে স্থানীয় হস্তশিল্প, তাঁতের পোশাক ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের উৎসব। এতে পর্যটকরা কাছ থেকে রাখাইন পাট্টি, বাঁশ-বেতের শিল্প, পাহাড়ি আচারসহ নানা পণ্য দেখার ও কেনার সুযোগ পাবেন। একইসঙ্গে স্থানীয় অর্থনীতিও প্রাণ ফিরে পাবে।
তৃতীয়ত, হোমস্টে প্রোগ্রাম চালু করা হলে পর্যটকরা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে থেকে গ্রামীণ জীবনধারা, খাদ্যসংস্কৃতি ও আতিথেয়তা ঘনিষ্ঠভাবে অনুভব করতে পারবেন। বিশ্বজুড়ে হোমস্টে এখন অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন ধারণা; কক্সবাজারেও এটি ব্যাপক সফল হতে পারে।
পাশাপাশি একটি স্থায়ী সাংস্কৃতিক তথ্যকেন্দ্র বা লোকজ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে মনে করি। এখানে কক্সবাজারের ইতিহাস, রাখাইন-মারমা সম্প্রদায়ের আবাসন, পোশাক, জীবনযাপন ও ঐতিহ্যের দলিল সংরক্ষণ করা গেলে পর্যটকরা এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক শেকড় সম্পর্কে গভীর ধারণা পাবেন।
ডিজিটাল সুবিধা বাড়ানোর অংশ হিসেবে চালু করা যেতে পারে সাংস্কৃতিক রুটম্যাপ, স্মার্ট গাইড ও মোবাইল অ্যাপ। পর্যটকরা কোথায় কী ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন হচ্ছে, কোন দোকানে কী পাওয়া যায়, কোন স্থানে কী ইতিহাস ,এসব তথ্য ডিজিটালভাবে পেলে তাদের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।
বার্ষিক আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করা গেলে কক্সবাজারের পরিচিতি সীমান্তের বাইরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। স্থানীয় শিল্পীদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন ও আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সঙ্গে যৌথ কর্মশালা আয়োজন করাও জরুরি।
উল্লেখযোগ্য যে, কক্সবাজারের আঞ্চলিক গান ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে ‘অঁলা’ নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যে কাজ করছে। তাদের উদ্যোগে স্থানীয় লোকসংগীত, পাহাড়ি সুর ও সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের ঐতিহ্য নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে এবং পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করছে।
সবশেষে, এসব উদ্যোগকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে হবে সমন্বিত ডিজিটাল প্রচারের মাধ্যমে। ঠিকভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা গেলে কক্সবাজার কেবল সমুদ্রসৈকতকেন্দ্রিক পর্যটন নয়, একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
লেখক:
শরীফা সুলতানা শাওন
কক্সবাজার।