রফিকুল ইসলাম জসিম: মাত্র আট বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কোরআন মাজিদ হেফজ (মুখস্থ) করে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে শাহরাস্তির এক প্রান্তিক পরিবারের সন্তান ছায়েদুজ্জামান তানভীর। মাত্র ১৭৫ দিনে (৫ মাস ২৫ দিন) কোরআনের হাফেজ হয়ে সে দেখিয়েছে অদম্য মনোবল, একাগ্রতা ও আত্মনিবেদন কতটা অসীম হতে পারে।
পবিত্র কোরআন হেফজ শেষ করার পর শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা সদরের প্রখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহরাস্তি দারুল কুরআন মাদরাসা তানভীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাফেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আলেম, সাংবাদিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা।
তানভীরের বাবা মোহাম্মদ নূরুন্নবী শাহরাস্তি পৌরসভার নিজমেহার মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা তিনি একজন পান বিক্রেতা। সীমিত আয়ের পরিবারে জন্ম নিয়েও ধর্মীয় শিক্ষার অদম্য সাধনায় ছেলে আজ এক গৌরবময় অবস্থানে। তার তিন ছেলের মধ্যে তানভীর মেজো।
মাদরাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান বুলবুলি বলেন, ‘তানভীর অত্যন্ত বিনয়ী ও মনোযোগী ছাত্র। ধারাবাহিকভাবে কঠোর অধ্যবসায়ের ফলেই সে মাত্র ১৭৫ দিনে কোরআনের হেফজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। তার মধ্যে এক ধরনের নিঃশব্দ সাধনার পরিচয় পাওয়া যায়। মাদরাসাটির ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যদিও এর আগে আরেক ছাত্র তৌহিদুল হাসান তাহসিন ৪ মাসে কোরআন হেফজ শেষ করেছে, তবে বয়স ও ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনায় তানভীরের কীর্তি ব্যতিক্রম।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মাওলানা আবুল হোসাইন, বিশেষ অতিথি ছিলেন হাজীগঞ্জ আহমদিয়া কামিল মাদরাসার হেড মুহাদ্দিস আবু নছর আশরাফি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মন্টু, শাহরাস্তি ইসলামি কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মাও. খলিলুর রহমান, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল ইসলাম কাজল, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা সচিব মাও. আবু সুফিয়ান রাজাপুরীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
এ সময় হাফেজ তানভীরকে সংবর্ধনার পাশাপাশি মাদরাসার নতুন ৩৩ জন ছাত্রের পাঠদান কার্যক্রমেরও শুভ উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘তানভীরের মতো শিশুদের কীর্তি আমাদের সমাজে আলো ছড়ায়। প্রযুক্তি আর প্রতিযোগিতার সময়ে যারা কোরআনের আলোয় নিজেদের গড়ছে, তারা আগামী দিনের সত্যিকারের নেতা।’
তারা আরও বলেন, ‘এ অর্জন শুধু পরিবারের নয়, গোটা সমাজের জন্যই এক অনুপ্রেরণা। এমন শিশুদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। তানভীরের এ অর্জন কেবল তার একক শ্রমের ফসল নয় এটি তার পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতিচ্ছবি। ১৭৫ দিনের কঠোর সাধনা কোরআনের সঙ্গে তার হৃদয়ের যে সম্পর্ক গড়েছে, তা যেন জীবনভর আলোর পথ দেখায়। আমরা দোয়া করি, তানভীর যেন কোরআনের আলো নিজের জীবনে ধারণ করে একদিন ইসলামি জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবিকতা নিয়ে সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারে।