ঢাকাশুক্রবার , ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

নব্য ক্রুসেডের দামামা : ৯/১১ ইহুদী মার্কিন সাজানো নাটক

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

Link Copied!

“সভ্যতার দ্বন্ধ” তত্ত্বের ধোয়া তুলে ইসলাম ও পাশ্চাত্যকে সম্মুখে যুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে দুই মার্কিন ইহুদী পন্ডিত বানার্ড লুইস ও স্যামুয়েল হান্টিংটন। গোটা বিশ্বের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের পেছনে মূল নাটের গুরু যে, ইহুদীরা তা উক্ত তত্ত্বের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো। তবে সবচেয়ে আতংকের ব্যাপার হচ্ছে যে, ইহুদীদের এ মানবতা বিধ্বংসী উগ্র জঙ্গীবাদী ও সন্ত্রাসী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে খ্রিস্টান বিশ্ব; আর এর মাধ্যমে ইহুদীরা ইসলাম /মুসলিম বিশ্ব ও খ্রিস্টান বিশ্বকে এক সাথে শেষ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে করছে । একেই বলে এক ঢিলে দুই পাখি! যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে, এর মাধ্যমে শুধু মুসলিম বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিলেই বোঝা যাবে খ্রিস্টান বিশ্বের ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপরটা । যা সচেতন মানব মাত্রই বুঝতে পারবেন। মধ্যযগে ইসলামকে নির্মূলের জন্য খ্রিস্ট বিশ্বের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপের নেতৃত্বে যে প্রায় তিনশত বছর ব্যাপী মুসলিশ বিশ্বের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, তা এখনো চলমান। পৃথিবীর সকল খ্রিস্টান শক্তি এ বর্বরতায় সর্ব শক্তি দিয়ে নেমে পড়েছিল। তাই একে “খ্রস্টীয় ক্রুসেডের বর্বরতা” নামে অবহিত করা হতো। কিন্তু তখন ক্রুসেড যুদ্ধের ব্যর্থতায় এর রুপটা পরিবর্তিত হয়েছিল মাত্র। ক্রুসেড যুদ্ধ তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান। বিগত কয়েক শতকের খ্রিস্টান বিশ্বের তৎপরতা পর্যালোচনা করলে এ সত্যটি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠে। একদিকে সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে মুসলমানদের গণহত্যা, অপরদিকে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্টার নামে তাদের আকিদা-বিশ্বাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে নির্মূল করার নিরন্তর প্রয়াস চলছে। আর অর্থনৈতিক যাঁতাকলে তো মুসলিম বিশ্বকে অনেক আগে থেকেই পিষ্ট করা হচ্ছে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ও পেন্টাগনে বিমান হামলার যে নাটক মঞ্চস্ত করা হয়েছে, তার পেছনে সম্পূর্ণ মার্কিন ও ইহুদী মস্তিষ্ক কাজ করেছে। এটি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে একটি সুগভীর চক্রান্ত এবং নব্য ক্রুসেডের সূচনা মাত্র।

নব্য ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট ঃ
সাভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বের একক পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আর্বিভাব ঘটে। মার্কিন সাম্রজ্যবাদ তার জন্মলগ্ন থেকেই ক্রুসেডের একনিষ্ট সেবক ছিল। মধ্যযুগের ক্রুসেড শেষ হলেও ক্রুসেডের দামামা এখনও বন্ধ হয়নি; বরং ক্রুসেডের রুপ পাল্টেছে মাত্র। এরই প্রতিধ্বনি করে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে ফরাসী পত্রিকা মোন্ড ডিপ্লোমেট একটি নিবদ্ধ প্রকাশ করে, এতে পত্রিকাটি লিখেছে, “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধূ সামরিক ময়দানে হবে না; বরং সভ্যতা ও সংস্কৃতির ময়দানেও লড়াই হবে, আর এটাই হবে চূড়ান্ত লড়াই।” যার বাস্তব প্রমাণ আমরা দেখতে পেয়েছি আফগানিস্তানে, ইরাক, লিবিয়া সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে। তৎকালিন সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করে দেখা যায় যে, তৎকালিন বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এমন কিছু পরিস্থিতির সূত্রপাত হয় যা পশ্চিমা বিশ্বকে নব্য ক্রুসেডের পথে পরিচালিত করে।
১. উগ্রবাদী ওলফ্রেডস মতবাদের বাস্তাবায়ন ঃ
২০০০ সালে সিনিয়র বুশের পুত্র জর্জ বুশ জুনিয়র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কর্ণদ্বার হন। তখন তিনি উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পল ওলফেড্সকে নিয়ে আসেন , যিনি বুশ সিনিয়র ও রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। পল ওলফেড্স দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকান পার্টির নিউ কনজারবেটিভ এর নেপথ্য নায়ক হিসেবে পরিচিত। সেই রোনাল্ড রিগ্যানের সময় থেকেই তিনি বছরের পর বছর ধরে আমেরিকার প্রশাসনকে বুঝাতে চেয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক চুক্তি, আইন এবং জাতিসংঘের মত বহুজাতিক সংস্থাগুলোর ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গির পূর্ণবিবেচনা করা। বিশ্বময় সামরিক আধিপত্যের এক বদ্ধমূল মৌলবাদী ধারণা সর্ব প্রথম রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অর্ন্তভূক্ত হয় বুশ সিনিয়র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থাকাকালিন সময়ে। সে সময় থেকেই পল ওলফেড্স তার উগ্র মৌলবাদী মতবাদ বাস্তবায়নে তৎপর হন। ১৯৯২ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে কাজ করার সময়ে সে তার উগ্রবাদী মতবাদের ধারণা আমেরিকান প্রশাসনের সামনে পেশ করেন। সেখানে পল ওলফেড্স বলেন, “ বিশেষভাবে আমরা অতিরিক্ত শক্তি সংগ্রহ এবং তা সংহত করতে বরাবর প্রস্তুত, যে কোন বিবাদী শক্তিকে আঞ্চলিক আধিপত্য অর্জন থেকে বিরত রাখতে হবে, নতুন ধারার বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং তা রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তার নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রমাণ করতে হবে, নতুন প্রতিদ্বন্ধী উত্থান রুখতে হবে, উপসাগরীয় তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলে অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে।” এসব উগ্রবাদী পরিকল্পনা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার কারণে ২০০০ সালে তা আবার নতুন মোড়কে উপস্থাপন করেন। সেখানে পল ওলফেড্স বলেন, “ আমেরিকার সামরিক ব্যয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নিত করা, অন্যান্য দেশকে মহাকাশ ব্যবহার থেকে বিরত রাখা, দৃঢ়তার সাথে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া, সংকট সৃষ্টির হওয়ার আগেই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রন করা এবং ইরাকের মত রাষ্ট্রগুলোকে কঠোরভাবে দমন করা।” এসব উগ্রবাদী পরিকল্পনা দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক কোন সমর্থনই তারা পায়নি। তারাও জানতেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য যদি কোন বিপ্লব সংগঠনেরও প্রয়োজন হয়, তবুও তা তাদের জীবন দশায় দেখে যাওয়ার ভাগ্য হবে না। তাই তাদের দরকার পার্ল হারবার অথবা নাইন ইলেভেনের মতো অকস্মাৎ বজ্রপাতের কোন ঘটনা । দেখুন কি অদ্ভুত মিল! সেপ্টেম্বর ২০০০ সলে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলো ঠিক এক বছর পর সেপ্টেম্বর ২০০১ এ আমেরিকায় বিমান হামলা।
২. আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রসার ঠেকানো ঃ
ইসলাম ইউরোপ আমেরিকায় সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। ১৯৯৩ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ লক্ষ লোক ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হচ্ছে। খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্মানুসারীদের ব্যাপক সংখ্যাধিক্যের সুবাদে হোয়াইট হাউজে দুই ধর্মের পতাকা উঠত। কিন্তু বিল ক্লিনটনের সময়ে এসে এক নতুন প্রেক্ষাপটের সৃষ্টি হয়। ইহুদী তখন ছয় মিলিয়ন আর অন্যদিকে মুসলমানদের সংখ্যা ছয় মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাচ্ছিল, এরই ফলে ইহুদীদের একচেটিয়া আধিপত্য কমার আশংকা শুরু হয় ক্রমবর্ধমান হারে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে। এসব প্রেক্ষাপটে শুরু হলো ইসলাম নির্মূলের মিডিয়া ক্রুসেড। ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় ১৯৯৩-২০০০ সাল জুড়ে চলে মুসলমান, ইসলাম ও মুসলিম বিশ্ব বিরোধী চর্তুমূখী সাড়াঁশি প্রোপাগান্ডার মিডিয়া সন্ত্রাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও মিডিয়া দুটোই ইহুদী নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে সরকার ও মিডিয়া যৌথভাবে মুসলমানদের ক্রমবৃদ্ধি ঠেকাতে এবং ধর্মান্তরিত অনুৎসাহিত করতে উঠে পড়ে লাগে। দীর্ঘদিন মিডিয়া ক্রুসেডের কারণে ইহুদী খ্রিস্টানদের ধর্মান্তরিত গওয়ার প্রবণতা কিছুটা রোধ করা সম্ভব হয়েছিল, এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জননিরাপত্তা আইনে সংযোজন করা হয়েছিল ‘সিক্রেট ইভিডেন্স’ যার উদ্দেশ্য ছিল এর ফাঁদে ফেলে বেছে বেছে মুসলমানদের জেলে অন্তুরীণ করা। এসব তৎপরতার বারণে ১ লাখ মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হওয়ার সংখ্যা কমে ২০ হাজারে নেমে আসে। আর এ ধারা বর্তমানে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে এম‌েরিকায় যেমন মুসলমানদের অত্যধিক ক্রমবৃদ্ধি ঠেকানো গেলো, পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী এর প্রসারের রেশও টেনে ধরা গেল। মূলত এ দুটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নব্য ক্রুসেড ঘোষনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। এছাড়াও ইসরাইলকে সুরক্ষা এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ লুন্ঠনের জন্যও নব্য ক্রুসেড ঘোষনার প্রয়োজন দেখা দেয়।

নব্য ক্রুসেড ঘোষনা ঃ
২০০১ সালের নয় এগারোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়র সরকারীভাবে ক্রুসেড যুদ্ধের ঘোষনা দিলেও বাস্তবে আমেরিকার রাজনীতিতে এই ক্রুসেড অঘোষিতভাবে শুরু হয় বিল ক্লিনটনের সময়কাল থেকেই। ২০০১ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ক্রুসেড ঘোষনার আগে এর প্রস্তুতি পর্ব এবং প্রাথমিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাত বছর আগে ১৯৯৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী। এফবিআই পরিচালক তখন ১৯৯৩ সালের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে বোমা হামলার পর ঘোষনা দেন, ওমর আবদেল রাহমানের এক অনুসারী মুহাম্মদ সালেগ এ হামলার জন্য দায়ী। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এর অপারেটিভ জে.সে.হাদাস এই হামলার নেপথ্য নায়ক। (সূত্র-সংকাপন্ন সময়ে বিব্রতকর প্রশ্ন-জেমস এস অ্যাডাম) সিএনএন প্রথমে স্বীকার করে, যদি বোমা হামলাকারীরা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ধ্বংস সাধনের চেষ্টা করত; তাহলে বিস্ফোরক রাস্তার সমতলে বিস্ফোরণ ঘটাতো যার ফলে শত শত লোকের মৃত্যু হতে পারত। এ ঘটনার কিছুদিন যেতে না যেতেই সিমথি ম্যাগার্থে সবেমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগেই মামুলি একটি গাড়ী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সম্পূর্ণ ইমারত ধুলিসাৎ করার চেষ্টা চালায়। এতে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের গায়ে তেমন আচড়ঁ লাগে না; কারণ বোমা বিস্ফোরণটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল। এতে কয়েকজন মাত্র আহত হয়, কিন্তু এ ঘটনায় প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধি ভীষম সাড়া জাগানো খবরের গুরুত্ব। (সূত্র-নয়া দিগন্ত) ইহুদী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রকে হামলার টার্গেট করার মূল কারণই হলো পৃথিবীবাসীকে বোঝানো যে, বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলা মানেই পৃথিবীর সকল বাণিজ্যের ওপর হামলা চালানো। আসলে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে প্রথম এই মহড়াটি একটি অভ্যন্তরীণ কৌশল, যার মাধ্যমে লক্ষ্য ছিল প্রচার মাধ্যমে স্পর্শকাতর অনুভূতি সৃষ্টি করে মুসলমানদের সন্ত্রাসী ব্যান্ডে খোদিত এবং পরিবেশিত করা এবং আমেরিকানদের সতর্ক ও উত্তেজিত করে তোলা। এভাবে ধারাবাহিকভাবে হামলার ক্ষেত্র তৈরি করে পূনার্ঙ্গ হামলা চালানো হয় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর । বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ও পেন্টাগনে এক যোগে বিমান হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়। কিন্তু চার হাজার ইহুদীর একজনও সেদিন নিহত হয়নি; এতেই বুঝা যায় এর পেছনে নাটের গুরু কারা! নিহতের পরিসংখ্যান বিশ্নেষন করলে দেখা যায় এটি একটি তুচ্ছ ঘটনা; কারণ মার্কিন বা ইসরাইলিদের একদিনের আগ্রাসনেও এ পরিমাণ মানুষ নিহত হয়। কিন্তু মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় সেটাকে উপলক্ষ বানিয়ে ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনে ক্ষেত্র বানালো হায়েনার দল। কারণ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার নাটকটিই করা হয় মূলত মুসলিম বিশ্বে আগ্রাসন পরিচালনার জন্য।

বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলা ‘নাটকের ’ উদ্দেশ্য ঃ
বিশ্ব বাাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার নাটকটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নির্জ্জলা মিথ্যা। অনেকে এটিকে ‘বেদনামূলক প্রতারণা’ বলেও আখ্যা দিয়েছে। বেশ কিছু উদ্দেশ্য কে সামনে রেখে এ নাটকটি মঞ্চস্ত করা হয়।
* ১১ সেপ্টম্বরের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো, ভূ-পৃষ্ঠকে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ থেকে মুক্ত করা। এ কারণেই পাশ্চাত্য এ যুদ্ধের নাম দিয়েছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (নব্য ক্রুসেড)। এ প্রতারণাপূর্ণ আগ্রাসনের মূল টার্গেট দ্বীনি মাদরাসাগুলো, যা মুসলিম উম্মাহর সর্বশেষ দূর্গ। শক্তি ও অর্থের বলে এই দূর্গ গুড়িঁয়ে দেওয়ার নিরন্তর প্রয়াস চলছে। এ দূর্গ গুড়িঁয়ে দেওয়ার মিশনে সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় দোসররা মাদরাসাকে ‘জঙ্গীবাদের প্রজনন কেন্দ্র’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন মাদরাসার বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করেছিল।
* ১১ সেপ্টেম্বরের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল, এ ঘটনার আড়ালে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রেপাগান্ডার পরিবশে তৈরি করা, যার পুরো দায়িত্ব নিয়েছে ইহুদী মিডিয়া। যা পরিচালিত হচ্ছে সম্পূর্ণ পেন্টাগনের তত্ত্বাবধানে। এই প্রচারণায় আল কায়েদা, তালেবান ও তাদের নেতা ওসামা বিন লাদেনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়।
১১ সেপ্টম্বরের পর প্রোপাগান্ডার ও গুজবকে ভিত্তি বানিয়ে সুসংগঠিত ও সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মার্কিন স্বার্থে আঘাত আসার সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করা হতে থাকে। ওসামা বিন লাদেনকে ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব আখ্যা দেয়ার জন্য নিত্য নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। তার সাথে বিভিন্ন ঘটনা উপন্যাসের মতো বার বার ধরণ পাল্টিয়ে প্রকাশ করা হয়। কখনো বলা হয়, আফগানিস্তানে বসে সে হাজার দূরে থেকে মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানতে সক্ষম। কখনো বলা হয়, তার সংগঠন আল কায়েদা এত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত যে, ওরা মাাির্কন প্রেসিডেন্টের ওপরও হামলা করতে সক্ষম। কখনো বলা হয়, ওসামা বিন লাদেনের নিকট পারমানবিক ও রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে।
* ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার আরেকটি মৌলিক উদ্দেশ্য হলো, আফগানিস্তান ও ইরাক দখল করে মধ্য এশিয়ার কাম্পিয়ান সাগর অঞ্চলও দখল করা; কারণ এসব অঞ্চলে উপসাগরীয় দেশ সমূহ থেকেও বেশি মূল্যবান প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্টোল, স্বর্ণ, ইস্পাতসহ মূল্যবান ধাতব পদার্থ ও খনিজ সম্পদে ভরপুর।
১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে পুঁজি করে ইউরোপ আমেরিকায় বিশেষভাবে গোটা বিশ্বে কর্মতৎপর ও সক্রিয় মুসলিম দাঈ, দ্বীন প্রচারক ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের গ্রেফতার, সক্রিয় ইসলামী সংগঠন ও সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এক কথায় ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে নির্মূল করার জন্য যা কিছু করা হচ্ছে একং হবে তার বৈধতার পূঁজি ও বুনিয়াদ হলো ১১ই সেপ্টেম্বরের নাটক। (সূত্র-পশ্চিমা মিডিয়ার স্বরুপ) এ জন্যই এ নাটক করা হয়েছিল! ১১ই সেপ্টেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার নাটক ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নব্য ক্রুসেডের সূচনা কার্যক্রম মাত্র।

৯/১১ ট্ট্যাজেডী ঃ ইহুদী মার্কিন সাজানো নাটক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যমান বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন ও মিলিশিয়াদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞগণ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ও পেন্টাগনের ওপর হামলার ধরণ দেখে সাথে সাথে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ‘এর পেছনে আল কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেনের হাত রয়েছে।’ এর পেছনে ইহুদী ও মার্কিন প্রশাসনেরই হাত রয়েছে, তার প্রমাণই বেশি যাওয়া যায়। ২০০৬ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর টাইমস অফ ইন্ডিয়া লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক অবজার্ভারের সূত্রে উল্লেখ করেছে যে, ৭৫ জন মর্কিন গবেষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের গবেষনার আলোকে এ কথা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়, এই নাটক হোয়াইট হাউসের তৈরি। আমেরিকার বিভিন্ন ইউভার্সিটির ৭৫ জন প্রফেসর দীর্ঘ পাঁচ বছর ব্যাপী অনুসন্ধানের পর যে রির্পোট দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, এ দুর্ঘটনা এমন একটি ষড়যন্ত্র, যাতে মার্কিন গোড়া রাজনীতিক, শাসক ও প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন শামিল রয়েছে, এর উদ্দেশ্য প্রথমে আফগানিস্তান, এরপর ইরাক সর্বশেষ ইরানের ওপর হামলার বৈধতা সরবরাহ করা যাতে ইসলামী বিশ্বকে সহজে পদানত করা যায়। নয় এগারোর সন্ত্রাসী হামলার এক দশক পূর্র্তিতে বিবিসি, রয়টর, এএফপি পরিবেশিত সংবাদ হচ্ছে, “আসলে কি ঘটেছিল ২০০১ এ দিনে? সত্যিই কি আল কায়েদা সেদিন মার্কিন শৌর্যে আঘাত হেনেছিল নাকি সবই পাতানো?”
‘আমেরিকান ফ্রি প্রেস উইকলি’তে প্রকাশিত এক রির্পোটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৯/১১ এ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ৯/১১ এর ঘটনায় ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এর সম্পৃক্ততার পক্ষে ‘নিউ ইর্য়ক টাইমস’ ও কিছু তথ্য উল্লেখ করেছে। উইকলি’তে উল্লেখ করা হোয়াইট হাউসের নির্দেশে সিআইএ ৯/১১ এর ঘটনায় ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এজেন্টদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি গোপন করেছে; কেননা ৯/১১ পুরো বিমান হামলার ঘটনাটিই সিআইএ ও মোসাদ এর যৌথ প্রেযোজনায় ঘটানো হয়েছে, এর লক্ষ্য ছিল, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানোর পটভূমি তৈরি করা। (সূত্র-রেড়িও তেহরান)
৯/১১ এর একাদশ বার্ষিকীতে মার্কিন খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক মার্ক ড্যানকফ ইরানের ইংরেজি টিভি চ্যানেল প্রেস টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০১ সালের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে ইহুদীবাদী ইসরাইল। এ হামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইসরাইলই এর সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি যথেষ্ট খোলোমেলাভাবে বলেন, আমি বিশ্বাস করি ৯/১১’র ঘটনা ছিল অভ্যান্তরীণ ও সাজানো ঘটনা। মানুষ যদি একটু ঘনিষ্ঠভাবে খেয়াল করে তাহলে দেখতে পাবেন ইসরাইলের সে উদ্দেশ্য ছিল, তাদের হাতে সে উপায় ছিল, তাদের সে সুযোগ ছিল, এটা করার জন্য তাদের সে পরিমান অর্থ সম্পদও ছিল , তাদের অভ্যন্তরীণ সে যোগাযোগ ছিল এবং সর্বোপরি আমেরিকান গণমাধ্যমে ইসরাইলের লোকজন ছিল, মার্কিন সরকারও এই হামলার তাদেরকে সেভাবে সুরক্ষা দিয়েছে। মার্ক ড্যানকফ আরো বলেন, যারা ১১ বছর আগের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত চাইবেন তারা আমেরিকয় দেশদ্রোহী বলে পরিচিত হবেন। (সূত্র-রেডিও তেহরান) এরপরও কি বিশ্বাস করবেন এ সন্ত্রাসী হামলা আল কায়েদা, ওসামা বিন লাদেনের বা সাদ্দাম হোসেনের কাজ?

নব্য ক্রুসেডের দামামা ঃ
বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার নাটক মঞ্চস্ত করার পর জর্জ বুশ নব্য ক্রুসেডের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দিয়ে মুসলিম বিশ্বের ওপর সামরিক আগ্রাসনে নেমে পড়লেন। সাথে ছিলেন পশ্চিমা বিশ্বসহ অন্যান্য দালাল রাষ্ট্রগুলো। মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য বিশ্ব সব্য ক্রুসেডের দামামা বাঁজাতে শুরু করলেন। তাদের প্রথম আগ্রাসনের শিকার হলো ইসলামী রাষ্ট্র আফগানিস্তান, এরপর ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন। তাদের নব্য ক্রুসেডের একে একে সমৃদ্ধশালী মুসলিম দেশগুলো ধ্বংস স্তুপে পরিণত হতে লাগল। মানবতা ও মানবধিকারকে তারা গলাটিপে হত্যা করতে লাগল। তাদের নিষ্ঠুরতায় স্তম্ভিত সভ্য দুনিয়া! বর্তমান আধুনিক যুগেও প্রাচীন যুগের শাসকদের মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে লাগল বুশ ব্লেয়াররা।
নব্য ক্রুসেডের প্রথম শিকার আফগানিস্তান ঃ
নব্য ক্রুসেডের নাটক সফলভারে বাস্তবায়নের পর এবার ক্রুসেড বাস্তাবায়নের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হলো। প্রথম শিকার আফগানিস্তার। অনেক দিনের ক্ষুধার্ত হিং¯্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো আফগানিস্তানের ওপর। বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার অজুহাত তুলে ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করে আফগানিস্তানের ওপর সন্ত্রাসী হামলা শুরু করল মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ। টুইন টাওয়ার নাটক মঞ্চায়নের এক মাসের মধ্যে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে বিশ্ব সন্ত্রাসের নব্য ক্রুসেডের বর্বরতা শুরু করে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ। ওসামা বিন লাদেনকে ধরা ও তালেবান দমনের নামে ইতিহাসের ঘৃণ্য মুসলিম গণহত্যা চালানো হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ মন্দির সব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাড়ী-ঘর সব কিছুকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। আফগানিস্তানকে জীবন্ত কবরস্থানে পরিণত করে ঘৃণিত সা¤্রাজ্যবাদ। লক্ষ লক্ষ নিরীহ নারী-শিশু-যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার মানুষকে আফগানিস্তান জুড়ে নির্মিত কারাগারে বন্দী রেখে তাদের ওপর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম নির্যাতন চালানো হয়। দুই গণহত্যা চালানোর পর আফগানিস্তানকে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ দখল করে নিতে সক্ষম হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ খ্রিস্টাবাদের হিং¯্র হায়েনার হাত থেকে বাঁচার জন্য পার্শ্ববতী দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। শান্তি সুখের আফগানিস্তানকে মার্কিনীরা পরিণত করল নরকের কুন্ডে। সেই নরককুন্ড থেকে বের হওয়ার জন্য বীর আফগানিরা প্রানান্তকর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের চোখের ঘুমকে কেড়ে নিয়েছে তালেবান জওয়ানরা।

নব্য ক্রুসেডের দ্বিতীয় শিকার ইরাক ঃ
আফগানিস্তানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর এবার তাদের নজর পড়ল তেলের ওপর ভাসমান ইরাকের ওপর। আফগানিস্তানে ব্যাপক গণহত্যা চালানোর দুই বছরের মধ্যেই ইরাকের তেল সম্পদ দখলের জন্য মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য বিশ্ব ২০০৩ সালের ২০ই মার্চ ইরাকের ওপর গণহত্যার মিশন শুরু করে। দীর্ঘ ১১ বছরে ইরাকে হত্যা করা হয়েছে ২৭ লাখের অধিক ইরাকীকে। সভ্য পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘৃণ্য, বর্বর ও নিষ্ঠুরতম গণহত্যার নজির নেই! সংখ্যার দিক থেকে এ ব্যাপক গণহত্যাকে মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসের সেরা গণহত্যা নামে অবহিত করা যায়। ইরাকে এমন কোন পরিবার নেই, যাদের পরিবারের কেউ না কেউ হত্যার শিকার হয়নি। সহিংসতা, নৃশংসতা ও মার্কিন হায়েনাদের বর্বরতায় দেশত্যাগ করেছে ৩০ লক্ষ ইরাকী। অভ্যান্তরীণ উদ্বাস্তু হয়েছে ২৫-৩৫ লক্ষ ইরাকী। আহত ও বন্দী হয়েছে হাজার হাজার ইরাকী। বন্দীদের রাখা হয়েছে মার্কিন বাহিনী পরিচালিত জঙ্গী কারাগারগুলোতে। তাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনা জানা যায় ফাঁস হওয়া বিভিন্ন তথ্য থেকে । আবু গারিব কারাগারের নির্মমতা মানুষের মনুষত্যকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে? একই রকম নির্যাতন ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এছাড়া নিখোঁজ হয়েছে লক্ষ লক্ষ ইরাকী। দখলদারীত্বের ১১ বছরে ইরাকের অবস্থা হয়েছে মারাত্মক ভয়াবহ, যেখানে মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই, নেই খাদ্য, পানীয় ও বিদ্যুতের নিরাপত্তা। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও আর্ন্তজাতিক রেডক্রস এবং বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা সেখানকার পরিস্থিতিকে মারাত্মক বিপর্যস্ত বলে মন্তব্য করেছেন। ইরাকের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বর্ণনা মতে, ৮০ শতাংশ বেশি বালিকা-তরুণী স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে না ধর্ষণ আর অপহরণের ভয়ে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে হাজার হাজার শিক্ষক। মুসলিম উম্মাহকে নেতৃত্ব শৃণ্য করার জন্য গত ১০ বছরে শুধু ইরাকেই মোসাদ ও সিআইএ হত্যা করেছে ৫ হাজারের অধিক ইরাকী বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞকে। বিধবা হয়েছে ১৫ লাখের অধিক নারী। চলমান বর্বরতায় ৫০ লাখ শিশুকে এতিম বানিয়েছে। গত ১১ বছরে প্রতিষ্ঠিত একটি দেশকে এভাবেই বিধংস্ত বানিয়েছে বুশ ব্লেয়ার নামের নরপশুরা। গণতন্ত্র পুরুদ্ধারের নামে পাশ্চাত্য ইরাকে গণতন্ত্রকে জীবন্ত দাফন করেছে। বর্তমানের ইরাক যেন এক মৃত্যু ফাঁদ!

নব্য ক্রুসেডের শিকার লিবিয়া ও সিরিয়া ঃ
নব্য ক্রুসেডারেরা শুধু আফগনিস্তান ও ইরাককে ধ্বংস করে ক্ষান্ত নয়! তাদের এ ক্রুসেড থেকে নিস্তার পাইনি লিবিয়া এবং সিরিয়াও। গাদ্দাফীকে হঠানোর ইহুদী মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদীচক্র হাজার হাজার নিরীহ লিবিয়ানদের হত্যা করেছে। এমনকি গাদ্দাফীকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে নির্মম ভাবে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে লিবিয়াকে পরিণত করেছে ধ্বংসের স্তুপে। নব্য ক্রুসেডের নির্মমতার বলি লিবিয়ায় এখনো হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে।
লিবিয়ায় হত্যাযজ্ঞের রেশ কাটতে না কাটতে এবার নব্য ক্রুসেডের নজর পড়ল অস্থিময় সিরিয়ায়। অস্ত্র আর অর্থ দিয়ে বাশার বিরোধী সাজিয়ে দফায় দফায় হামলা চালানো হয় সিরিয়ায়। বাশার সরকারকে হঠানোর নামে গত ৩ বছরে প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু বাশার সরকারকে হঠানো সম্ভব হয়নি, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এখনো চলমান।

নব্য ক্রুসেডের ধারাবাহিক নির্মমতার বলি গাজা উপত্যকা ঃ
মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের অস্ত্র আর অর্থের জোরে পৃথিবীর অভিশপ্ত নরপশু ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের ওপর চালাচ্ছে ধারাবাহিক ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মমতা। ইসরাইল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ হত্যার মিশন আজ অবধি চলমান। এমন কোন দিন ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের রক্তে ইসরাইলিদের হাত রঞ্জিত হচ্ছে না! বর্তমানে তাদের নির্মমতার সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। নব্য ক্রুসেডের দামামা বাজানোর পর থেকেই অভিশপ্ত ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলে পড়েছে। নানা বাহানায় নিত্যদিন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। যেন ফিলিস্তিনিদের রক্তের কোন দাম নেই! গাজায় হামাস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাদের নির্মমতা আরো বেড়ে যায়। অবরোধের নিষ্ঠুরতায় ক্ষত বিক্ষত গাজা বাসীর জীবন। চর্তুমূখী চাপিয়ে দিয়ে গাজাবাসীকে তীলে তীলে শেষ করার মহা চক্রান্ত বাস্তবায়ন করছে বর্ণবাদী ইসরাইল। জনপ্রিয় ইহুদী লেখক রবার্টস লিখেছেন, ১৯৪০ সাল থেকে ইসরাইলিরা প্যালেস্টাইদের ঘর-বাড়ী দখল করছে এবং নিয়মিতভাবে তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আরেক ইহুদী লেখক জনাথন কুক লিখেছেন, গণহত্যা ইসরাইলিদের পুরনো পরিকল্পনার অংশ। ড. গিডিয়ান পলিয়া লিখেছেন, ১৯৩৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সন্ত্রাসী ইহুদীরা ২০ লাখ প্যালেস্টাইনিকে হত্যা করেছে। (সূক্র-নয়া দিগন্ত) নব্য ক্রুসেডের পর থেকে ইসরাইলি গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের নেতৃত্ব শুণ্য করার জন্য ফাতাহ ও হামাসের শীর্ষ নেতদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে বারবার। টুইন টাওয়ারে নাটকের পর ২০০১ সালের ১০ই অক্টোবর পিএলও সদর দখল করে নেয় ইসরাইল সেনাবাহিনী, ২০০২ সালে বুলডোজার দিয়ে গাজা আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ধ্বংস করে দেয়া হয়, ২০০২ সালের ১ শে জানুয়ারী ডিনামাইট ফাঁটিয়ে ফিলিস্তিনি বেদার কেন্দ্র ধ্বংস করে দেয়া হয়, ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে জেনিন শরনার্থী শিবিরের হামলা চালিয়ে শত শত নিরীহ শরনার্থীকে হত্যা করেছে ইসরাইল, ২০০৩ সালে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে ১০০০ নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি পশুবাহিনী, ২০০৬ সালে সামরিক আগ্রাসনে খুন করে ৫০০ ফিলিস্তিনিকে, ২০০৮ সালের সামরিক সন্ত্রাসে হত্যা করে ১৩৯১ জন নিরীহ ফিলিস্তিনিকে, ২০১০ সালে গাজাগামী তুর্কি ত্রানবহরে হামলা চালিয়ে ১০জন ত্রানকর্মীকে হত্যা করে, ২০১১ সালে ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, ২০১২ সালের আগ্রাসনে ২শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়, ২০১৩ সালেও একাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়, ২০১৪ এ পর্যন্ত সামরিক আগ্রাসনে হত্যা করা হয় ২২০০ ফিলিস্তিনিকে যাদের ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু, তাদের এ হত্যাযজ্ঞে বাদ যায়নি মসজিদ, হাসপাতাল, আবাসিক ঘর-বাড়ী, এমনি গাজাবাসীর বিদ্যুতের একমাত্র অবলম্বন গাজার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও এবার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে আল আকসা টিভি স্টেশনকেও। ইসরাইলের এক নরখাদক সংসদ সদস্য তো ফিলিস্তিনিদের সকল নারী ও শিশুকে হত্যার জঙ্গী হুমকি দিয়েছে । এরাই নাকি আবার মানবতাবাদী! সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনিদের ১০০০একর ভূমি দখলের নির্দেশ জারী করেছে মানবতার শক্রু ইসরাইল। এভাবে চলছে ইহুদীদের গণহত্যা মিশন।
এ হলো সংক্ষেপে নব্য ক্রুসেডের দামামায় ধ্বংসযজ্ঞে হিং¯্রতার শিকার হওয়া বর্বরতার আংশিক খতিয়ান মাত্র। তাদের হিং¯্রতা ও নিষ্ঠুরতার বর্ণনা করতে গেলে বিশাল বিশাল বিশ্বকোষ রচনা করা যাবে। এভাবেই মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদীচক্র নব্য ক্রুসেডের দামামা বাঁজিয়ে মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীজুড়ে গণহত্যা, সামরিক আগ্রাসন, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। বিশ্ব শান্তির এ হুমকি ইহুদী মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদী চক্রকে প্রতিরোধ করার জন্য সভ্য দুনিয়াবাসীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। শান্তির পৃথিবীকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং পৃথিবীর আবর্জনা ইহুদী মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদকে নির্মূলের জন্য ইস্পাত কঠিন দৃঢ় ঐক্যের প্রয়োজন। পৃথিবীর ১৭০ কোটি মুসলিমকে সব ভেদাভেদ ভুলে কোরআন এবং হাদীসের নিরীকে একই সারিতে একতা বদ্ধ হতে হবে, হাতে হাত রেখে সিসার ঢালা প্রাচীরের মতো। খালেদের মতো, তারেকের মতো এবং গাজী সালাউদ্দীন আয়ুবীর মতো নব্য ক্রুসেডকে নির্মূল করে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষার জন্য জিহাদের কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ আমাদের সহায়।
লেখক-সাংবাদিক, কলামস্টি ও ব্লগার
sanaullahcoxs@gmail.com

52 Views

আরও পড়ুন

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

শান্তিগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ

বুটেক্সে শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম

লোহাগাড়ায় প্রবাসী বাইক আরোহীকে চাপা দিয়ে পালালো অজ্ঞাত গাড়ি

বুটেক্সে চলছে তিন দিনব্যাপী ইসলামিক বুক ক্যাম্পেইন

এক মহাজাগতিক বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে চলছে বিশ্ব

সাংবাদিক তৈয়বুরের বাবার মৃত্যু, দাফন সম্পন্ন : শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের শোক

চলে গেলেন কবি মার্জেনা চৌধুরী

হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আমাদের আমানত, তা‌দের রক্ষা কর‌তে হ‌বে- মির্জা ফখরুল

গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে অপচিকিৎসা, দায়ী কে?

মানবতার দেয়াল এখন মৌলভীবাজারে