এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে চার দিন বয়সী এক নবজাতককে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিশুটির বাবা ভ্যানচালক মাহবুবুর রহমান তাঁর স্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করেন সন্তানকে। গত শুক্রবার সকালের দিকে ওই শিশুকে বিক্রি করে দেওয়ার এক দিন পর শনিবার বিকেলে পুলিশের হস্তক্ষেপে শিশুটি উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। উপজেলার টাঙ্গালিয়াপাড়া গ্রামের ঘটনা এটি।
বুকের ধনকে হারিয়ে অসহায় মা রোকসানা খাতুন থানায় অভিযোগ করে তাঁর সন্তানকে ফিরে পাওয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁর স্বামী মাহবুবুর রহমান। তিনি লোক মারফত তাঁর স্ত্রীর কাছে তালাক দেওয়ার খবর পাঠিয়ে দেন। হুমকি দিয়ে বলে দিয়েছেন, ‘তোকে (স্ত্রী) আর আমি নেব না। দ্রুতই তালাকের কাগজ পেয়ে যাবি।’
শিশুটির মায়ের কাছ থেকে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলার কর্তিমারী এলাকার আকবর হোসেন নামের এক নিঃসন্তান দম্পতি চার হাজার টাকায় শিশুটিকে কিনে নেয়। থানায় খবর যাওয়ার পর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। এ অবস্থায় ভয়ে ওই দম্পতি শিশুটিকে রাজীবপুর থানায় পাঠিয়ে দেয়। গ্রামবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, মাহবুবুর রহমান প্রথম স্ত্রী থাকার পরও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তাঁর জমাজমি, সম্পদ বলতে কিছুই নেই।
শিশুটির মা রোকসানা খাতুন বলেন, “আমার বিয়ে হয়েছে এক বছরের বেশি সময় আগে। গত বুধবার আমার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। নাম রেখেছি ইসমাইল হোসেন। গত শুক্রবার আমার স্বামী বাবার বাড়িতে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে আমাকে বলে, ‘প্রসূতি মা ও নবজাতককে সরকার ভাতা দেয়। তাতে নাম লেখাতে হবে কইয়া সন্তানকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সকাল পার হইয়া দুপুর হয়, কিন্তু আমার সন্তানকে নিয়া বাড়িতে আইসে না। সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে আইসা কয় সন্তানকে বেইচা দিছি। এ অবস্থায় আমি কান্নাকাটি করে আমার বাবার বাড়িতে আসি।’
জানা গেছে, শিশুটির মা রোকসানা খাতুন দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। একই উপজেলার কাচারিপাড়া গ্রামে তাঁদের বাড়ি। তাঁর বাবা মোজাম্মেল হক অনেক আগেই মারা গেছেন। এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে টাঙ্গালিয়াপাড়া গ্রামের মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মাহবুবুর রহমানের পরিবারও খুব গরিব। তিনি ভ্যানগাড়ি চালান। রোকসানা খাতুন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। ঘটনার পর মাহবুবুর রহমান আত্মগোপনে চলে যাওয়ার কারণে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটির মা আমাদের কাছে এসে বিষয়টি বলার পরই আমরা শিশুটি বিক্রি করার মধ্যস্থতাকারী ফুল চানকে ধরে নিয়ে আসি। এরপর তার দেওয়া তথ্য মতে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।’