ছুটির দিনগুলোতে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে এই রিসোর্টগুলো হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য। সাধারণত সারাবছরই অধিকাংশ রিসোর্টে রুম ভাড়ার ওপর বিভিন্ন অফার চলতে থাকে। এই রিসোর্টগুলোর খুঁটিনাটি জানব আজ।

ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রামের প্রবেশপথছবি: সংগৃহীত
রফিকুল ইসলাম জসিম
ছুটির দিনে একটু অবকাশ, একটু প্রকৃতির সান্নিধ্য কে না চায়? পাহাড়, চা-বাগান, ঝরনা আর জীববৈচিত্র্যের রাজ্য কমলগঞ্জ যেন অপরূপ— এমনই কিছু সৌন্দর্যের সম্ভার সাজিয়ে রেখেছে যা একদিনেই দেখে নেওয়া সম্ভব।
ঢাকা কিংবা সিলেট শহর থেকে ট্রেনে কিংবা গাড়িতে এসে আপনি সকালেই পৌঁছে যেতে পারেন কমলগঞ্জে। সারাদিন ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার আগেই ফিরে যেতে পারবেন। তাই যারা ব্যস্ততা থেকে একটু ছুটি নিয়ে নতুন বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চান, তাদের জন্যই এই ভ্রমণ পরিকল্পনা।
মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কমলগঞ্জ। এই জনপদ বহু ভাষাভাষী, বর্ণ-গোত্র আর ধর্মাবলম্বীদের এক অপূর্ব সূতিকাগার। প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় সিক্ত এই এলাকার জনজীবনও তেমনই সৌহার্দ্যপূর্ণ ও মমতায় ভরপুর। বলা হয়ে থাকে কমলগঞ্জ প্রকৃতির এক জীবন্ত জাদুঘর।
কমলগঞ্জ যেন পুরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। পযর্টনে বিপুল সম্ভাবনার কমলগঞ্জ। এ উপজেলার অনেক স্থানে ছড়িয়ে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান। চলুন জেনে নেই একদিনে ঘুরে দেখা যায় কমলগঞ্জের কয়েকটি মনোরম জায়গার তালিকা:- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হাম হাম জলপ্রপাত, মণিপুরী পল্লী, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, চা বাগান, শমশের নগর গলফ মাঠ ও ক্যামেলিয়া লেক। এসবের অধিকাংশই কমলগঞ্জে অবস্থিত।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ রেইন ফরেস্ট। এটি একদিকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, অন্যদিকে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গসদৃশ স্থান। ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এই বন ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়। জীববৈচিত্র্য, ট্রেইল হাঁটা ও বানর, উল্লুকসহ নানা প্রাণীর দেখা মিলবে এখানে।
এটির একপাশে রয়েছে কমলগঞ্জ শহর, অন্যপাশে শ্রীমঙ্গল—উভয় দিক থেকেই সহজে যাওয়া যায়।এখানকার ভেতর দিয়েই চলে গেছে একটি রেললাইন—যেটি এই বনের সৌন্দর্যে আরও মায়া এনে দেয়।
সংক্ষেপে, যদি আপনি প্রকৃতির গভীর নিস্তব্ধতা, বনের গন্ধ, ও প্রাণীদের অবাধ বিচরণ দেখতে চান—তবে লাউয়াছড়া আপনার জন্য পরিপূর্ণ গন্তব্য।
মাধবপুর লেক
মাধবপুর লেক মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে, শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১০–১২ কিলোমিটার পূর্বে, এবং কমলগঞ্জ সদর থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত । ১৯৬৫ সালের দিকে চা-বাগানের পানির চাহিদা মেটাতে পাহাড়ি তিনটি টিলায় বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় এই প্রাকৃতিক জলাধার। তার পরিধি প্রায় ৫০ একর, দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিমি এবং প্রস্থ সীমানায় ৫০–৩০০ মিটার পর্যন্ত আছে ।
চারপাশে উঁচু টিলা এবং চা-বাগানের সারি, উদ্ভিদজগত: নীল ও বেগুনি শাপলা, গোলপাতা ও শালুকে আলোকিত জলরাশি । শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে, আর মাঝে মাঝে হাঁস, পানকৌড়ি, সরালি, জলপিপি দেখা যায় । পরিবেশের সৌন্দর্য সেমিস্ট্রি; দুর্দান্ত প্রকৃতির শান্তি উপভোগের জন্য বেশ আদর্শ জায়গা ।
মাধবপুর লেক হলো চা-বাগানের টিলায় নির্মিত এক মায়াবী জলরাশি, যেখানে প্রকৃতির বিশুদ্ধতা, পাহাড়ী চা-বাগানের সৌন্দর্য, নীল–বেগুনি শাপলা আর অতিথি পাখির ভিড় এক অপূর্ব প্রকৃতি সৃষ্টি করে। দিনের একটি অংশ এখানে কাটালে আপনি সত্যিই “সবুজে” নিমজ্জিত হয়ে যাবেন।
মণিপুরী অধ্যুষিত দুটো এলাকা। বাংলাদেশে মণিপুরী নৃগোষ্ঠীর প্রায় সবাই মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জেই বেশি বাস করেন তারা। মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরীদের মহারাসলীলা অনেক বিখ্যাত। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক সারাদেশ থেকে এই উৎসবে আসেন।
কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের শিব বাজারে মণিপুরী ললিতকলা অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষণ সেন্টার, প্রশাসনিক ভবন, গেস্ট হাউজ ও ডর্মিটরি বিল্ডিং রয়েছে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে মনিপুরী সম্প্রদায় জাঁকজমকভাবে রাস উৎসব পালন করে। মণিপুরী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব এই মহারাসলীলা।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই চা-বাগান সংলগ্ন ধলই সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এই স্মৃতিসৌধটি। এটি মাধবপুর লেক থেকে মাত্র ৫–৬ কিলোমিটার দূরে। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর, সিপাহী মোঃ হামিদুর রহমান বীরত্বপূর্ণ অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্তিশালী বাঙ্কার ধ্বংস করেন এবং প্রাণ হারান। তাঁর এই সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক “বীরশ্রেষ্ঠ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে তাঁর সেই আত্মত্যাগের স্থানে, যেখানে তিনি শহীদ হয়েছিলেন—ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ধলই সীমান্তচৌকিতে।স্মৃতিসৌধটি একটি ছোট পাহাড়ের ঢালে নির্মিত।ওপরে রয়েছে শহীদের প্রতিকৃতি ও নামফলক খচিত একটি সৌধ, এবং নিচে রয়েছে একটি খোলা মঞ্চ ও ফটক। সৌধটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
ধলই চা-বাগানের সবুজ প্রকৃতি ঘেরা এই স্থানটি একদিকে যেমন ঐতিহাসিক, অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য এটি একটি ইতিহাসচর্চার স্থানে পরিণত হয়েছে। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ শুধু একটি পর্যটন স্থান নয়; এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ত্যাগ আর বীরত্বের চিরস্মরণীয় প্রতীক। কমলগঞ্জ ঘুরতে গিয়ে এই স্থানে না গেলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
হাম হাম জলপ্রপাত
কমলগঞ্জ উপজেলার হাম হাম জলপ্রপাত আরেকটি দর্শনীয় স্থান। দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা এই জলপ্রপাত ২০১০ সালের শেষ দিকে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সঙ্গে একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রাজাকান্দি রেঞ্জ। এ রেঞ্জের ৭ হাজার ৯৭০ একর আয়তনের কুরমা বন বিট এলাকার পশ্চিম দিকে চম্পারায় চা-বাগান। এই কুরমা বন বিটের প্রায় ৮ কিলোমিটার ভেতরে দৃষ্টিনন্দন হাম হাম জলপ্রপাতটি অবস্থিত। এটি ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় সীমান্তবর্তী জায়গা। এখানে এখনো সরাসরি পৌঁছানোর সড়ক বা ব্যবস্থা নেই।
কমলগঞ্জ উপজেলার চৌমোহনা চত্বর থেকে কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তায় স্থানীয়ভাবে চলাচল করা বাস, জিপ অথবা মাইক্রোবাসে করে যেতে পারলেও পাহাড়ি এলাকা বলে বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ঝরনার পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে যায় জলপ্রপাতটিতে। এখানে হেঁটে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগে। হাম হাম জলপ্রপাত দেখা আসলেই এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
ক্যামেলিয়া লেক
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগরে ব্রিটিশ কোম্পানি ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন শমশেরনগর চা-বাগানে দৃষ্টিনন্দন এ লেকের অবস্থান। এ বাগানের আয়তন প্রায় ৪৩২৬ দশমিক ৪৭ একর। চা-বাগানগুলোতে সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে ছাঁটাই করা চা-গাছে পানি সেচের জন্য চা-বাগানের মধ্যে ছোট-বড় লেক দেখতে পাওয়া যায়। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে লেকের কাছে যেতে দেখা মেলে অনেক বানর গাছে গাছে ঝুলছে। শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়ক ধরে দক্ষিণে তিন কিলোমিটার সামনে গেলেই পাওয়া যায় ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। ডানকান ব্রাদার্সের ১৫টি চা-বাগানের শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার সদস্য, কর্মচারী ও ব্যবস্থাপকদের চিকিৎসাসেবা দানে ১৯৯৪ সালে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। ডানকান ব্রাদার্সের মূল কোম্পানি ক্যামেলিয়া পিএলসির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়।
চারদিক শব্দহীন চা-বাগানের উঁচু–নিচু বেশ কয়েকটি টিলায় চায়ের গালিচা। মাথার ওপরে নীল আকাশ। আকাশের সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে নিচের লেকের পানিতে। আর লেকের পানিতে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখি। চারপাশে যত দূর চোখ যায়, ছোট-বড় পাহাড়ি টিলা ঢাকা চা-বাগান। এরই মধ্যে টলটলে পানির অপরূপ লেক। চা-বাগানের শ্রমিকদের কাছে যে লেকের নাম ‘বিসলার বান’। তবে এর প্রকৃত নাম হলো ক্যামেলিয়া লেক। এটি সবার কাছে এখন সুপরিচিত। যাওয়ার পথটাও নিরিবিলি। ভ্রমণপিপাসুরা সেখানে যেতে পারেন। খোলামেলা এ লেকের পানিতে গোসল করা, সাঁতার কাটা, লেকের পাশে পাহাড়ে ওঠা, তা ছাড়া ছবি তোলার জন্য খুবই সুন্দর পরিবেশ। ফেরার পথেই আবার দেখা মেলে শমশেরনগরের মনোমুগ্ধকর গলফ মাঠ।
শমশেরনগর গলফ মাঠ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ মাঠে পড়ন্ত বিকেল বেলা অনেক পর্যটকরা শমশেরনগর গলফ মাঠে বেড়াতে আসতে দেখা যায়। সবুজ ঘাসের গালিচা, মায়ায় ভরা উচু্ নিচু টিলা, ছোট ছোট লেক এ যেন পর্যটকদেরকে আরো আকর্ষণ করছে।
গলফ মাঠের ভিতরে প্রবেশ পথে সবুজ চা বাগান দেখা যাবে। চা কন্যারা আপন মনে চা পাতা চয়ন করছেন। পর্যটকরা কেউ কেউ ঘাসের বুকে হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার বসে ছবি তুলছেন। বিশাল এলাকা জুড়ে শমশেরনগর গলফ মাঠ অবস্থিত। এখানে বৃক্ষ রাজি বাতাসের সাথে সাথে দোলা দিচ্ছে। অনেক পর্যটকরা শহর থেকে একটু শান্তি ও স্বস্থি পেতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ছুটে যাচ্ছেন।
কমলগঞ্জের প্রকৃতি যেন সবসময় আহ্বান জানায়— “চলো যাই!” আপনিও কি তৈরি? একদিনেই ঘুরে আসুন, প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিন।
এছাড়াও চাইলে কমলগঞ্জের রাজকান্দি রেঞ্জের আদমপুর বনে ঘুরে আসতে পারেন। পর্যটকদের চাপ না থাকায় অরণ্যপ্রেমী হলে দারুণ উপভোগ করবেন সন্দেহ নেই।
আদমপুরের জঙ্গলে। ছবি: লেখক
কোথায় থাকবেন
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ
ছবিঃ গ্রান্ড সুলতান রিসোর্ট
সিলেটের প্রথম পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ ঢাকা থেকে মাত্র চার ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত বিলাসবহুল ও ব্যয়বহুল এই রিসোর্টটি গত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মুভি থিয়েটার, সুইমিং পুল, প্লে গ্রাউন্ডসহ এখানে রয়েছে তিনটি রেস্টুরেন্ট ও দুইটি ক্যাফে।
এখানে রয়েছে আট ধরনের মোট ১৩৫টি রুম এবং স্যুট। রুমের ধরন অনুযায়ী দুজনের জন্য এক রাতের ভাড়া ৩১ হাজার ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া চার জনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের ভাড়া এক রাতের জন্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
নভেম ইকো রিসোর্ট
রাধানগরে অবস্থিত নভেম ইকো রিসোর্ট চা বাগানের সবুজে ঘেরা অনন্য সুন্দর এক রিসোর্ট। রিসোর্টটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট টিলা ও চা বাগান। এখান রয়েছে স্পোর্টস রুম, সুইমিং পুল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট ইত্যাদি। এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন কাঠের ব্রিজ রয়েছে। এ ছাড়া এই রিসোর্টের সবকিছুতেই রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া। রুমভেদে ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকার বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে নভেম ইকো রিসোর্টে।
দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা
দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা গিয়াসনগরে অবস্থিত অন্যতম বিলাসবহুল একটি রিসোর্ট। বিশাল জায়গা জুড়ে নির্মিত এই রিসোর্টে সুইমিং পুল, স্পা, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, মুভি থিয়েটার, সাইকেল রাইডিং ও জিমসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। চারপাশে গাছগাছালি ও ১ হাজার ফুট লম্বা একটি সুবিশাল লেক রয়েছে।
এখানে থাকার জন্য হোটেল রুম ও ভিলা দুই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। হোটেলে এক রাতের ভাড়া ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা। সাত ধরনের ভিলার ভাড়া ২১ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরসঙ্গে ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য।
গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুর
গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুর রামনগরে অবস্থিত। চা বাগানের সবুজের মাঝে এই রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে। এখানে থাকার জন্য রুম এবং স্যুট দুই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। রুমের ভাড়া দুইজনের জন্য ৫ হাজার ৫০০ টাকা, চারজনের জন্য ৭ হাজার ৫৪৫ ও পাঁচজনের জন্য স্টুডিও ডিলাক্সের ভাড়া ৯ হাজার ৫২৫ টাকা। এ ছাড়া ফ্যামিলি স্যুটের ভাড়া ১০ হাজার ২৫০ টাকা। সবুজ চা বাগানের মাঝে একান্ত কিছু সময় কাটাতে চলে যেতে পারেন এখানে।
সুইস ভ্যালি রিসোর্ট
সুইস ভ্যালি রিসোর্ট শমসেরনগরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটির পাশে অবস্থিত সবুজের ছায়াঘেরা একটি চমৎকার রিসোর্ট। গ্রামীণ আবহে তৈরি এই রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব সব উপাদান দিয়ে। দুই জনের জন্য নন-এসি রুম ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং এসি রুম ৩ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে সুইস ভ্যালি রিসোর্টে।
বালিশিরা ইকো রিসোর্ট
এই রিসোর্টটির বিশেষত্ব হিসাবে আপনি পাবেন নিজস্ব এয়ারপোর্ট শাটল সার্ভিস এবং প্রাইভেট সুইমিং পুলের ব্যবস্থা। তিন তারকাবিশিষ্ট এই ইকো রিসোর্টটিতে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম, যেমন ফ্যামিলি রুম উইথ ব্যালকনি, ডিলাক্স ডাবল রুম, প্রাইভেট পুল ভিলা ইত্যাদি। অনেকগুলো রুম থেকে সামনে পাহাড়ের সবুজ দেখা যায়।
সকালের কমপ্লিমেন্টারি নাশতায় রয়েছে কন্টিনেন্টাল, ভেজিটেরিয়ান মেন্যু, দুপুর এবং রাতের খাবারে দেশি খাবারের পাশাপাশি চাইনিজ মেন্যুর ব্যবস্থা থাকে। রাতে বারবিকিউয়ের সুবিধাও রয়েছে। রিসোর্টটিতে মৌসুমভেদে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ এবং ডিস্কাউন্ট অফার থাকে। রুমের ব্যালকনিতে বসে অদূরে পাহাড়ের গায়ে ঝি ঝির ডাক এবং ছোট ঝরনার পানি বয়ে চলার মৃদু শব্দ শুনতে মন্দ লাগবে না। বালিশিরা রিসোর্টের কক্ষভেদে ভাড়া ১১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ১৩ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত হতেবপারে।
টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ
গ্রামীণ প্রকৃতির আবহে তৈরি এই রিসোর্টের সবকিছুতেই পাওয়া যাবে মাটির ছোঁয়া। এই রিসোর্টে রয়েছে পাঁচটি মাটির ঘর, চারটি অত্যাধুনিক এসি ভিলা এবং একটি প্রাইভেট পুল ভিলা। এ ছাড়া আছে একটি কমন সুইমিংপুল এবং একটি লেক ভিউ ওপেন রেস্টুরেন্ট। এখানে মাড হাউজের এক রাতের ভাড়া ৫ হাজার ৫০০ টাকা, এসি ভিলা ৭ হাজার টাকা এবং প্রাইভেট পুল ভিলা ১১ হাজার টাকা। গ্রামীণ আবহে সময় কাটাতে চাইলে টিলাগাঁও হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।
শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্ট
এই রিসোর্টটিতে একটি দ্বিতল কাঠের বাড়ি এবং দুটি বাঁশের কটেজের ব্যবস্থা রয়েছে। কাঠের বাড়িতে কক্ষগুলোর ভাড়া ৩ হাজার টাকা, এবং কটেজের রুম ভাড়া ২ হাজার টাকা। রয়েছে দেশি খাবারের সুব্যবস্থা, তবে চাইলে নির্ধারিত মেন্যুর বাইরে নিজের পছন্দমত খাবারও খেতে পারবেন। শহর থেকে সিএনজি বা বাসে করে রাধানগর এসে গ্রাম্য মেঠোপথে ১০ মিনিট হাটলেই চোখে পড়বে এই সুদৃশ্য রিসোর্টটি।
নিসর্গ ইকো রিসোর্ট
লেমন গার্ডেন রিসোর্ট
দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ৩০০ টাকা, সঙ্গে থাকবে কমপ্লিমেন্টারি হালকা নাশতা। এ ছাড়াও রিসোর্টটিতে রয়েছে সুইমিং পুল ও স্পা, শিশুদের প্লেগ্রাউন্ড, কনফারেন্স হলের সুবিধা। রিসোর্টটিতে কন্টিনেন্টাল, ভারতীয়, চাইনিজ এবং দেশি- এই চার রকমের মেন্যুর খাবার পরিবেশনের সুব্যবস্থা রয়েছে। এই রিসোর্টটির অদূরে লাউয়াছড়া ইকো পার্ক অবস্থিত। এ কারণে দর্শনার্থীদের জন্য সুলভ মূল্যে থাকার জায়গা হিসাবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই রিসোর্টটি।
টি হেভেন রিসোর্ট
সবুজ প্রকৃতি, চা-বাগান আর হাইল হাওড়ের শান্ত জলরাশি এই রিসোর্ট থেকে উপভোগ করা যায়। এই রিসোর্টে হামহাম, ছায়াবৃক্ষ এবং ক্যামেলিয়া নামের তিনটি এক্সিকিউটিভ রুম ছাড়াও ফ্যামিলি ডিলাক্স রুম, টুইন শেয়ার রুম এবং কাপল ডিলাক্স রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। রুমগুলোর ভাড়া ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
রিসোর্টটিতে রয়েছে সুদৃশ্য কনফারেন্স রুম, দেশি খাবারের রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল এবং শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য দেখার জন্য রেন্ট এ কারের সুব্যবস্থা। হবিগঞ্জ রুট ধরে শ্রীমঙ্গল শহরে প্রবেশের পথেই চোখে পড়ে এই দৃষ্টিনন্দন রিসোর্টটি।
টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম
নয়নাভিরাম টিলা এবং চা-বাগানে ঘেরা ২৫ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে ভাড়াউড়া চা-বাগানের কাছে রিসোর্টটির অবস্থান। মূলত পুরোনো একটি ব্রিটিশ বাংলোকে এই রিসোর্টে রূপান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিকভাবে এই রিসোর্টটি পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এই রিসোর্টের টি মিউজিয়াম, টেনিস কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, স্যুভেনির শপ, ক্যাফের সাজসজ্জায় রয়েছে এক অভিজাত ছোঁয়া। ছবির মতো সুন্দর এই রিসোর্টটির ইকনোমি রুমের ভাড়া শুরু হয় ২ হাজার টাকা থেকে এবং এসি বাংলোর কক্ষের ভাড়া ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা (সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য)।
ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রামের প্রবেশপথছবি: সংগৃহীত
গ্র্যান্ড সুলতান থেকে খুব দূরে নয় শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম, নোভাম, বালিশিরা কিংবা পাঙ্গান রিসোর্ট। নূরজাহান চা বাগানে যাওয়ার পথে পাবেন লেমন গার্ডেন রিসোর্ট। আবার কমলগঞ্জের শমসেরনগরের সুইস ভ্যালিও থাকার জন্য চমৎকার। তাদের মাটির চুলায় রান্না করা খাবারের আকর্ষণই আলাদা। আর কপালগুণে চা বাগানের কোনো ম্যানেজার পরিচিত থাকলে বাগানের বাংলোতে থাকার চেয়ে আনন্দময় আর কিছু হবে না।