মোসাঃ তানজিলা :
চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে টাইগার পাসের কাছেই অবস্থিত বাটালি হিল, যা স্থানীয়দের কাছে জিলাপী পাহাড় নামেও পরিচিত। আমরা যখন পাহাড় আর ঝরনা দেখতে চট্টগ্রামে এসেছিলাম, তখন এই মজাদার নামের পাহাড়টি দেখতে আগ্রহ জন্মায়। শহরের খুব কাছে, ইস্পাহানি মোড় হয়ে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়।
একসময় ব্রিটিশ আমলে এই পাহাড়ের চূড়ায় বাতিঘর এবং বিমান বিধ্বংসী কামান স্থাপন করা হয়েছিল, যা যুদ্ধের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হতো। কথিত আছে, এর সর্বোচ্চ চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগরও দেখা যেত। তবে এখন চারপাশের উঁচু দালানগুলোর ভিড়ে সেই দৃশ্য আর আগের মতো নেই। আর না হয় আমরা সঠিক জায়গাটি খুঁজে পাইনি।
পাহাড়টির প্রবেশপথে নামফলক প্রায় মুছে গেছে, যা দেখে মনে হয় এটির খুব একটা যত্ন ও নেওয়া হয় না। আমরা সেখানে যেতে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়েছিলাম। যখন গিয়েছিলাম (সকাল ১১টায়), পর্যটকদের খুব একটা ভিড় ছিল না।
ছোট ছোট সিঁড়ি বেয়ে ২৮০ ফুটের এই পাহাড়ে ওঠা তেমন কঠিন নয়, তবে পর্যাপ্ত পানি সাথে রাখা জরুরি।জানা যায় চূড়ায় ওঠার এই সিঁড়িপথটি “১০০ সিঁড়িপথ” নামে প্রচলিত। এটি দারুণ এক সহজ ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা দেয়। আমরা চারজন ২ লিটারের বেশি পানি নিয়েছিলাম। এখানকার প্রকৃতিতে প্রায় ৫০ প্রজাতির ১৪,০০০ গাছগাছালি রয়েছে, যা পুরো পাহাড়টিকে এক সবুজে মোড়া অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। আঁকাবাঁকা পথের জন্যই এর আরেক নাম জিলাপি পাহাড়।
পাহাড়ের পথে পথে চোখ নামালেই দেখা যায় ভীষণ ঘন বন-জঙ্গল, উপর থেকে বৃষ্টির পানি সরে যেতে তৈরি হওয়া আপনপথ কিংবা সমতলের গাড়ি-বাড়ি-দোকান-পাট, ব্যস্ত জনজীবন।
মনকে সান্ত্বনা দেয়ার বা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ার এক মহৌষধও হতে পারে এই জায়গাটি।
মনের দুশ্চিন্তার পাহাড়কে ঝেড়ে ফেলতে সুন্দর এক সমন্বয় গাঢ় সবুজ গভীর পাহাড়ী বন ও খাদের।
পাহাড়ের চূড়ায় ‘শতায়ু অঙ্গন’ নামে একটি বিশ্রামস্থল আছে, যেখানে মানুষ বসে বিশ্রাম নিতে পারে। সেখানে একটি ছোট ছেলে চা-বিস্কুট বিক্রি করছিলো। গরমের কারণে আমরা চা না চেয়ে বরং আইসক্রিম চেয়ে তার সাথে কিছুটা দুষ্টুমি করেছিলাম।
তবে এই শতায়ু অঙ্গনই বাটালি হিলের সর্বোচ্চ চূড়া নয়। শতায়ু অঙ্গনের উপরে রয়েছে একটি সুন্দর বাংলো, যেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।এছাড়া গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের আরো কয়েকটি বাংলো দেখা যায়।
আমাদের ধারণা, হয়তো এই বাংলোর ভেতর দিয়েই সেই আসল চূড়ায় পৌঁছানো যেত যেখান থেকে বঙ্গোপসাগর দেখা যায় এবং পুরো চট্টগ্রাম শহর ও।
পাহাড়ের নির্জন জায়গাগুলোতে পুলিশের গাড়িগুলো টহল দিতে দিচ্ছিলো। এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ, কারণ এতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাসচলাকালীন সময়ে এখানে আসা নিষেধ।অশালীন কর্মকান্ড ও ধূমপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
বাটালি হিলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ঝুম সবুজ প্রকৃতি একে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে যা পাহাড়ময় চট্টগ্রামের বুকে এক ঐতিহ্যের পাহাড়।