এম.এ ওয়াহিদ :
তিনি একজন স্ত্রী, একজন মা, একজন গৃহিণী, রাঁধেন এবং চুলও বাঁধেন। এ সব কিছুই একজন নারীর গতানুগতিক উপাধি। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে ১৮ হাজার শ্রমিকের অভিভাবক হয়ে ওঠা অনেক নারীর পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তিনি পেরেছেন। তিনি হেলানা জাহাঙ্গীর। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। নিজের মেধা, মননশীলতা, কর্মনিষ্ঠা এবং একাগ্র প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্টসশিল্পে হেলেনা জাহাঙ্গীর একটি আলোকিত মুখ। তিনি বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্পের পৃথক পৃথক খাতে একাধারে চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ প্রসঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি ১৯৯৬ সালে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছি। শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টে সব সময় তাদের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই হেলানা জাহাঙ্গীরকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা আর মানসিক শক্তির কারণে বিয়ের পর তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকলেও নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদ থেকে শুরু করেন ব্যবসা। ছোট্ট একটি কারখানার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে একে একে ছয়টি কারখানা গড়ে তুলেছেন।
‘প্রিন্টিং, এমব্র্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার ও ওভেন গার্মেন্টস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমি যুক্ত। সম্প্রতি গ্রিনফ্যাক্টরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। নারীদের মধ্যে কাজের একাগ্রতা, গতি ও স্পৃহা আছে। নারীরা যে কাজ করেন, তা অত্যন্ত মনোযোগ ও নিষ্ঠার সঙ্গে করেন। নারীরা নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই পুরুষের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলছে। তবু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনো নারীদের অংশগ্রহণে ঘাটতি রয়েছে’ বলে মনে করেন হেলানা জাহাঙ্গীর।
একজন গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী হয়ে উঠতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একজন নারীকে ঘরের বাইরে কাজ করতে হলে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। প্রথমেই বাধা আসে পরিবার থেকে। এরপর সমাজ আর রাষ্ট্র তো আছেই। আমি নিজেও নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আমি কখনো আত্মবিশ্বাস হারাইনি। লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি। সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে এ দুটি জিনিস খুব জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ গ্রহণ করতে নারী উদ্যোক্তাদের পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এতে অনেক নারী উদ্যোক্তা ব্যবসাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন। আমরা এসব সমস্যা কাটাতে কাজ করছি। এ জন্য সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন।’
হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসার বাইরে বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি রোটারি কাবের একজন মেজর ডোনার। মেজর ডোনার হিসেবে তিনি এ বছর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়া তিনি গুলশান সোসাইটি, গুলশান জগাসর কাব, ইন্টারন্যাশনাল জন্টা কাব, ডব্লিউইভি, উত্তরা লেডিস কাবের সক্রিয় সদস্য। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইনার হুইল কাবের প্রেসিডেন্ট, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল ও গুলশান হেলথ কাবের নির্বাহী সদস্যও। হেলেনা জাহাঙ্গীর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সদস্য। সফল এই নারী উদ্যোক্তা ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের জননী।
তথ্যসূত্র : আমাদের সময় ডটকম
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০