এম.এ ওয়াহিদ :
বাংলাদেশে দুর্গা পুজা এলেই মন্দিরে হামলা কিংবা প্রতিমা ভাংচুরের মতো অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার খবর আমরা শুনতে পাই। এই খবরগুলো ভীষণ অমানবিক সন্দেহ নেই। কিন্তু, মানবিক খবরও আছে প্রকাশ করার মতো। কোনো এক অজানা কারণে সম্প্রীতির খবরগুলো নিয়ে লেখা হয় কদাচিৎ আমাদের দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায়। আজকে এক অনন্য সম্প্রীতির খবরটা বলতে চাই।
আপনি স্বচক্ষে এই অভূতপূর্ব ঘটনাটি দেখতে চাইলে রমনা কালী মন্দিরের ওদিকটায় যেতে পারেন। মুসলমান ধর্মাবলম্বী স্বেচ্ছাসেবকগণ রমনার কালী মন্দিরের ওখানটায় নামমাত্র মূল্যে পূজার পোষাক বিক্রয় করছেন। এই স্টলে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি পূজার পোষাক বিক্রয় করা হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে।
শারদীয় দুর্গাপূজা অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এমন উৎসব উদযাপনে চাই নতুন জামা। কিন্তু, সবার হয়ত সঙ্গতি এক নয়। তাই বলে নতুন জামার অভাবে কি এতো বড় উৎসবে মনমরা হয়েই কাটাতে হবে?
এই দুর্গাপূজায় শহরর কোনো সুবিধাবঞ্চিত শিশু যেন নতুন জামা বঞ্চিত না থাকেন, পছন্দের একটা পোষাক পড়েই যেন রঙ্গিন কাটে পূজার সময়টুকু সেই ভাবনা থেকেই এই স্টলের উৎপত্তি। মাত্র ৭ টাকায় এই স্টলে প্রতিটি পোষাক বিক্রয় করা হয়। ৭ টাকা এজন্যেই নেয়া হচ্ছে, যেন পোষাকটিকে ভিক্ষের পোষাক মনে না করেন। হীনমন্যতা বোধ না করেন।
একদম পয়শা খরচ করে নতুন জামা কেনার যে আনন্দ এবং নিজে কিনেছি এই অনুভূতি নিয়েই যেন সবাই পোষাক পায়, তাই এই মূল্য রাখা হচ্ছে। আগ্রহ সহকারে প্রতিদিনই আসছে অনেকে পোষাক কিনতে। স্টলের মুসলমান স্বেচ্ছাসেবকগণ আন্তরিকতা মাখা আয়োজনে সব তদারকি করছেন। এই উৎসবের ছোঁয়া তাদেরও লেগেছে। ধর্মের ঊর্ধ্বে তাই এখান্র জিতে গেছে সম্প্রীতি।
৭ টাকায় পুজোর বাজার নামে এই উদ্যোগটি শুরু করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে চলছে এই আয়োজন, চলবে দশমীর দিন পর্যন্ত। দুর্গাপূজার উৎসবকে কেন্দ্র করে এই উদ্যোগ নেয়া হলেও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা এখান থেকে পোষাক কিনতে পারবে। দুর্গাপূজার কল্যাণে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যে নতুন পোষাক পছন্দ করে কেনার সুযোগ পাচ্ছে, তার চেয়ে দারুণ ব্যাপার আর কি হতে পারে!
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্টলে শিশুদের ভীড়
আর পূজাকেন্দ্রিক এই আয়োজনটার সবটুকুজুড়ে যখন আছেন মুসলিম স্বেচ্ছাসেবক তখন মনে হয়, একদম এরকম একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন আমি দেখি। যেখানে ধর্ম যার যার কিন্তু মানবিকতা সবার। মানুষ হৃদয় দিয়ে অনুভব করবে অন্যকে, সবার শক্তি দ্বন্দ্বের উৎস না হয়ে সম্প্রীতির উৎস হয়ে থাকবে। এখানে কেউ ঘৃণা ছড়াবে না, সবাই নিজস্বতা নিয়ে বাঁচবে।
এই ছোট্ট স্টল যে মানবিক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, তা ভাইরাল হবে কিনা জানি না, তবে মনে প্রাণে চাই আমাদের গোটা দেশ এরকম একটা সম্প্রীতির স্টল হয়ে উঠুক।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০