মোহাম্মদ মন্জুরুল আলম চৌধুরী।
বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রামবাসীর দুর্ভোগ দুর্দশা ভোগান্তির অন্ত থাকেনা। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম শহর। “চলতি বর্ষা মৌসুমের তৃতীয় দিন গতকাল ভারী বর্ষণ হয়েছে নগরে। এতে তলিয়ে যায় শহরের নিচু এলাকা। সড়ক থেকে অলিগলি সবখানেই ছিল পানি আর পানি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। প্রধান সড়কে হাঁটু থেকে তার বেশি পানি হওয়ায় থমকে যায় যান চলাচল। পানি ঢুকে নষ্ট হয় সিএনজিসহ অনেক গাড়ি। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে পথচারীদের পকেট কাটায় ব্যস্ত ছিলেন রিকশাচালকরা” {সূত্র দৈ/ আজাদী, ১৮ জুন’২৩}।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, ওয়াসা মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসড়োলা, চকবাজার কঁচাবাজার, ফরিদারপাড়া, চান্দগাঁও আবাসিক, বারইপাড়া, বাকলিয়া ডিসি রোড, বাকলিয়া, রহমতগঞ্জ, আতুরার ডিপো, আগ্রাবাদ, জুবিলি রোড তিন পোলের মাথা, পতেঙ্গা, জিইসি মোড়, পশ্চিম খুলশী, অলংকার মোড়, আতুরার ডিপো ও মুহাম্মদপুর মাজার রোডসহ অনেক এলাকা তলিয়ে যায়। বৃষ্টি থামার পরও পানি আটকে ছিল সেখানে। পতেঙ্গা
আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গায় ১৪ মিলিমিটার এবং আমবাগনে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। পাশাপাশি চাক্তাই খালে রেগুলেটর এর কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে জোয়ারের সময় পানি ঢুকে গেছে। তাই চকবাজার ও বহদ্দারহাটে পানি নামতে অনেক সময় লেগেছে। এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটির সভাপতি মোবারক আলী বলেন, প্রথম বৃষ্টি হওয়ায় খালগুলোর উজান থেকে ময়লা–আবর্জনা নিচের দিকে চলে এসেছে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা খাল ও নালা–নর্দমা থেকে প্রতিবন্ধকতা অপসারণে কাজ করেছেন।
অপরদিকে, “নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, শহড়জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। তাই পানি নামতে একটু সময় লেগেছে। এটা জলাবদ্ধতা না। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রকল্পের যে ডিজাইন তাতে এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যাবে। ওই জায়গা থেকে আমাদের সন্তুষ্টির বিষয় হচ্ছে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে গেছে। দীর্ঘ সময় পানি আটকে ছিল এমন কোনো খবর আমাদের কাছে নেই”{সূত্র দৈ/ আজাদী, ১৮ জুন’২৩}।
এদিকে লালখান বাজার থেকে–বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ এড়াতে বিভিন্ন যানবাহন চালকরা বিকল্প হিসেবে ফ্লাইওভার বেছে নেন। কিন্তু বহদ্দারহাটে পানি থাকায় যানবাহনগুলো এগুতে পারেনি। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম লেগেছিল ফ্লাইওভারেও।
বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে মাত্র। অল্প বৃষ্টিতে মানুষ যে ভোগান্তি দুর্ভোগ দুর্দশায় পতিত হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। ভবিষ্যৎ যে আরও ভয়াবহ দুর্বিষহ ভয়ংকর হবে তা সহজেই অনুমেয়। কেননা দিন মুজুর তাঁর কাজ করতে পারেনি। শ্রমজীবি মানুষ অফিস আদালতের কর্মচারী কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীরা সময় মতো অফিসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারেনি। মানুষের শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। পকেট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়েছে। যানবাহন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দোকান পাটে পানি ঢুকে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নষ্ট হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ঘর বাড়িতে ময়লা পানি ঢুকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। সাধারণ মানুষকে হাঁটু জলে ময়লা ও কাদা জলে দুর্ভোগ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে নালা নর্দমার পানি একাকার হয়ে গেছে। যা মানুষের রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এমনিতেই চট্টগ্রামে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া এবং কলেরায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গুর কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
করোনাভাইরাসের পরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যু আশঙ্কাজনকভেবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা ডেংগু রোগ, কলেয়ারা ডায়রিয়ার প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দেবে একথা অনস্বীকার্য। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক বছর আগে শেষ হয়ে গেলেও ইতোমধ্যে মাত্র ৭৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা জানিনা এ প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে। পাশাপাশি রয়েছে সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে বিবাদ বিস্মাদ। অন্যের ঘাড়ে দোষ দেয়ার অপ কৌশল।
প্রশাসক এবং জনপ্রতিনিধির মধ্যে কাঁদা ছোড়াছোড়ি। মাঝে পাটার বলি হচ্ছে চট্টগ্রামবাসী। সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের কাজ এখনো সুচারুরূপে শেষ করতে পারেনি। অন্যদিকে চসিক নালা নর্দমার ময়লা বর্জ্য অপসারণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। গেল কয়েক বছরের বর্ষায় নালা নর্দমা এবং খালে পড়ে অনেকে মারা গেছেন একজনের লাশের হদিসও মেলেনি। আমরা জানিনা এ বছর মৃত্যুহানির সংখ্যা কেমন হবে। নালা নর্দমা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বেশ উদাসীন বলা যায়। রাজনীতিবিদ শাসক আছে জন প্রতিনিধি আছেন কিন্তু তাঁরা জন দরদী এবং চট্টল দরদী হয়ে উঠতে পারেন নি। নিজ নিজ পদ ও পদবীর দম্ভ অহংকার পরিত্যাগ করে জনগণের সেবক,সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে পারেননি। সঙ্কীর্ণ মন-মানসিকতা এবং ব্যাক্তি-স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জন স্বার্থকে প্রাধান্য না দিলে, ব্যাক্তিগত এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা ও মমত্ববোধ, নৈতিকতা, মানবিকতা না থাকলে চট্টগ্রামবাসী জলজট এবং জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে কখনোই মুক্তি পাবে না। এমন কি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও।