বরগুনা প্রতিনিধি।
বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও ফেয়ার প্রাইজ ডিলার সফিকুল ইসলাম সেন্টুর ঘর থেকে ১৫৭ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। স্থাণীয়রা অভিযোগ করেন উদ্ধারকৃত চাল সরকারী হলেও তা জব্দ করেননি তালতলী উপজেলা প্রশাসন।
স্থাণীয় সূত্রে জানাগেছে, শনিবার দুপুরে কড়ইবাড়িয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও ফেয়ার প্রাইজ ডিলার সফিকুল ইসলাম সেন্টুর ঘরের মধ্যে বসে খাদ্য অধিদপ্তরের সীল দেয়া ৩০ কেজি ওজনের বস্তাগুলো ভেঙ্গে ৫০ কেজি ওজনের নূরজাহান অটোরাইস মিল লেখা বড় বস্তায় ভরতেছে। এর কিছুক্ষন পরে তিনটি ব্যাটারী চালিত অটো গাড়ী এসে সেই চালের বস্তাগুলো বোঝাই করে আমতলীর দিকে চলে যায়। পুনঃরায় বিকেল ৪ টার পরে আবারও ৩টি অটো গাড়ী চাল নিতে আসলে স্থাণীয়রা তাতে বাঁধা দেয়। অটোগাড়ীগুলো চাল না নিয়েই চলে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পরে তালতলী থানা থেকে পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসলে ডিলার সফিকুল তার ঘরটি বন্ধ করে ওখান থেকে সটকে পড়েন। এরপর রাত ১০টার দিকে তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবী উল কবির জোমাদ্দার, নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সেলিম মিয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ছোট বগী ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুজ্জামান তনু ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিকা নাজনিন মনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় স্থানীয়দের চাপে ডিলার সেন্টু তার ঘর খুলতে বাধ্য হন। এ সময় তার ঘরে থাকা ১৫৭ বস্তা চাল পাওয়া গেলেও প্রশাসন তা জব্দ না করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ীতে করে ডিলার সেন্টুকে তালতলীতে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে কথা হয় কড়ইবাড়িয়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আল আমিন জোমাদ্দারের সাথে। তিনি জানান, কড়ইবাড়িয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও ফেয়ার প্রাইজ ডিলার সফিকুল ইসলাম সেন্টুর ঘরের মধ্যে বসে খাদ্য অধিদপ্তরের সীল দেয়া ৩০ কেজি ওজনের বস্তাগুলো ভেঙ্গে ৫০ কেজি ওজনের নূরজাহান অটোরাইস মিল লেখা বড় বড় বস্তায় ভরে তা তিনটি ব্যাটারী চালিত অটো গাড়ীতে করে অন্যাত্র সরিয়ে ফেলেছে।
কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিক আকন জানান তালিকায় নাম থাকা সত্বেও ডিলার সেন্টু অনেককেই ১০ টাকা কেজি দরের চাল দেন না। সেই চাল তিনি গোপনে বস্তা পরিবর্তন করে অন্যাত্র বিক্রি করেন।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আঃ মন্নান হাওলাদার জানান, ডিলার সেন্টু এর আগেও এভাবে চালের বস্তা পরিবর্তন করে গোপনে অন্যাত্র চাল বিক্রি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ঔষধ ব্যবসায়ী ইদ্রিছুর রহমান হৃদয় বলেন, ডিলার সেন্টু যে সরকারী চালের বস্তা ভেঙ্গে যে বড় বড় বস্তায় চাল ভরেছে তার সকল প্রমান আমার কাছে আছে।
কড়ইবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলতাফ হোসেন হাওলাদার বলেন, এই চাল আমাদের না। আমার ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্ধকৃত সকল চাল বিতরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়ন ফেয়ার প্রাইজ ডিলার সফিকুল ইসলাম সেন্টু মুঠোফোনে বলেন, আমার ঘর থেকে যে চাল উদ্ধার করা হয়েছে তা আমার না। ঐ চাল ইউপি সদস্য শাহজাহান হাওলাদারের। তবে ইউপি সদস্য শাহজাহান হাওলাদার তা অস্বীকার করেছেন।
তালতলী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিকা নাজনিন মনি মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গতকাল রাতে কড়ইবাড়িয়া বাজারে যে চাল পাওয়া গেছে তা ১০০% সরকারী চাল। শুধু বিক্রির জন্য বস্তা পরিবর্তন করে অন্যাত্র সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ডিলার কিছু চাল সরিয়েছে আর বাকীটা সরাতে পারেনি।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সেলিম মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ঘটনাস্থলের ঘর থেকে যে ১৫৭ বস্তা চাল পাওয়া গেছে সেগুলোর গায়ে সরকারী কোন সিল পাওয়া যায়নি। সরকারী সিল দেয়া কোন চালের বস্তা না পাওয়ায় চাল জব্দ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রেজবী উল কবির জোমাদ্দারকে মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।