নিগার সুলতানা সুপ্তি
‘নারী’ শব্দের প্রথমেই আসে ‘না’ কথাটি, তাই হয়তো বা একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীকে শুনতে হয় ‘না’। তুমি যেতে পারবে না, তুমি কাজটি করতে পারবে না, এমন হাজারো না কথা উপেক্ষা করে যে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখায়, সে ই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় সবক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ লক্ষণীয় কিন্তু সেই অংশগ্রহণের রাস্তাটি সবার জন্য সহজ নয়।
বলছিলাম রংপুরের ছোট্ট মেয়েটির কথা। রংপুরের ছোট্ট মেয়েটির মধ্যে ছিলো অপূর্ব এক ইচ্ছে শক্তি। লেখাপড়া চালিয়ে যাবে অনেক দূর। স্বপ্ন কে সত্যি করবে। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণের সেই পথটা কিছুটা ব্যতিক্রম। ছোট বেলা থেকেই বাড়ির সবকাজ সামলে তারপর স্কুলে যেতেন। এজন্য প্রতিদিন ঠিক সময় স্কুলে উপস্থিত হতে পারতেন না। আবার বিয়ে হয়ে যায় অল্প বয়সে। কিন্তু তার ছিল অসম্ভব মেধা। আর সেই মেধার জোরেই এগিয়ে চলছিলেন সামনের দিকে। আর এভাবেই উচ্চ মাধ্যমিককের পর সুযোগ হয় মেডিকেল কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার। কিন্তু বাধ সাধলো পরিবার। যদিও পরিবারের সবাই নিজ নিজ ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যস্ত কিন্তু তাকে বলা হলো রংপুর কারমাইকেল কলেজে পড়ালেখা করতে। সালটা তখন ১৯৬৯,দেশ উত্তাল। একদিন খুব সকালে একা একা বের হয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে। উদ্দেশ্য যে করেই হোক ঢাকা পৌঁছাতে হবে। ভার্সিটিতে ভর্তি হতেই হবে। ঢাকা আসলেন। আত্মীয়র বাসায় উঠে ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করলেন। এরপর উঠলেন হলে। এরপর নিজের পুরোটা দিলেন পড়ালেখা আর গবেষণার প্রতি। স্নাতক, স্নাতকোত্তরে হলেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।
গল্পটা বাংলাদেশের প্রথম নারী পরজীবিবিদ, প্রফেসর ড. হামিদা খানম এর। যিনি নিজের ইচ্ছে আর সাহস দিয়ে জয় করেছিলেন সমস্ত প্রতিকূলতা কে। পারিবারিক প্রতিকূলতা তাকে কখনোই আটকে রাখতে পারেনি। কাজের জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কাজ করেছেন পরজীবী তত্ত্ব নিয়ে। ১৯৭৫ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসাবে। মাছ সহ বিভিন্ন প্রাণীর দেহে ক্ষতিকর জীবানুর আক্রমণ, জনস্বাস্থ্য, রোগতত্ব সহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে গিয়েছেন সারাজীবন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরজীবি বিদ্যার উপর প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরজীবী বিদ্যার উপর দেশে গবেষণার ক্ষেত্র বাড়াতে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় চালু করেন পরজীবীবিদ্যা শাখা। গবেষনা কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন থেকে স্বর্ণপদক সহ অর্জন করেছেন দেশি-বিদেশি বহু সম্মাননা। সারাজীবনে মানুষ এবং অন্য প্রাণী নিয়ে গবেষণা করে দেশি বিদেশি জার্ণালে প্রকাশিত হয়েছে ২৬০ টি গবেষণা পত্র। এছাড়া তার হাজারো ছাত্র-ছাত্রী আজ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে। যারা বিভিন্ন পদে থেকে শিক্ষা গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। গবেষণা কাজে কর্মরত ছিলেন ন্যাচারল হিস্ট্রি মিউজিয়াম সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তিনি অনারারি প্রফেসর হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি মেয়ে এক একটি ইন্সটিটিউশন। আর মেয়েদের পড়ালেখার কোন বিকল্প নেই।” আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এমন নারীদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।
নিগার সুলতানা সুপ্তি
প্রাণিবিদ্যা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।