মোঃ রেজাউল করিম সবুজ
কালিগঞ্জ প্রতিনিধি:
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনে নরিম আলী মাষ্টার সভাপতি এবং এনামুল হোসেন ছোটকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষনা করেছে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে বৃহস্পতিবার বেলা ১টার সময় সোহরাওয়ার্দী পার্কে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুুতি কমিটির সদস্য সচিব ধলবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সজল মুখার্জীর সঞ্চলানায় এবং সম্মেলন প্রস্তুুত কমিটির আহবায়ক থানা আওয়ামীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও তারালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল ছোটর সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলহাজ্ব ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক। প্রধান অতিথি ডাঃ রুহুল হক তার বক্তব্যে বলেন তলা বিহিন জুড়ি থেকে দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে গেছে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা মানে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতীক তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। যে কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছে এবং দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে। দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দলীয় কোন্দল মতভেধ ভুলে ঐক্যবন্ধ ভাবে তার হাতকে শক্তিশালি করতে হবে। এজন্য জামায়াত-বিএনপি হতে কোন অনুপ্রেবেশকারি দলে প্রবেশ করে জঙ্গীবাদ বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সাতক্ষীরায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ স্থাপন, ভোমরা স্থল বন্দর বাইপাস সড়ক, নলতায় নাসিং ইনস্টিটিউট ও হেল্থ ইনস্টিটিউট গড়া ছাড়া সকল উপজেলা হাসপাতাল ৫০ শয্যা উন্নিতসহ সকল কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোর গড়ায় পৌছে দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য এস.এম. কামাল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বিদ্যুৎতের লোড শিডিংএর প্রতিবাদ করতে যেয়ে মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছে। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌছে দিয়ে তার নজির স্থাপন করেছে। এখন আর লোড শিডিং কথা মানুষ ভুলে গেছে। গ্রাম উন্নয়নের জন্য প্রধান মন্ত্রী ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। ভূতুর্কি দিয়ে কৃষকের সার-কীটনাশক দেওয়া ছাড়াও এখন আর সার নেওয়ার জন্য মানুষকে লাইনে দাড়িয়ে মরতে হয়না। এজন্য দেশে ঘুষ,দূর্নীতি দূর করতে সুশাসন দরকার। আওয়ামীলীগের কেউ পাপ করলে তার দায় প্রধান মন্ত্রীর ঘাড়ে যেয়ে পড়ে। এজন্য দলে কোন চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক ব্যাবসায়ী, কেসিনো ব্যাবসায়ী, জঙ্গীবাদ ও জামায়াত- বিএনপির হাইব্রিডদের দলে স্থান দেওয়া যাবে না। মানুষকে ভালবেসে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধ কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দেশ পরিচালনা করায়। জামায়াত বিএনপি জোট যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দেশে হাওয়া ভবনের নামে সিন্টিকেট করে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করা সহ দেশকে জঙ্গী, মৌলবাদী রাষ্টে পরিণত করেছিল। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট যেমন বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে হত্যা করে নিচিহ্ন করতে চেয়েছিল। তেমনি ভাবে নেতৃত্ব শূন্য করতে ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট গেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামীলীগের বহু নেতা কর্মীর উপর এ হত্যা যোগ্য চালিয়েছিল। বর্তমান প্রধান মন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সাধারণ জনগণকে ১০ টাকা কেজি চাউল, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, ভিজিডি, ভিজি এফ, মাতৃত্ব ভাতা, গৃহীনদের বাড়ী নির্মান, মৃক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো এবং বাড়ী নির্মান ছাড়াও বছরের শুরুতেই আমাদের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে বই পৌছে দিয়ে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি-জামায়াত মিথ্যা গুজব ছাড়িয়ে সরকারের ভাবমুক্তি নষ্ট করেছে। বিশ্বব্যাংক তদন্ত করে ভূল স্বীকার করে বাংলাদেশকে সর্ব্বো” সহায়তা দেওয়া জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আগমীতে অতিদ্রুত পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ ক্ষমতায় থাকতে সেদিন জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা বাবা মার সামনে পূর্নিমাকে ধর্ষন করে বিশ্বে আলোচিত হয়েছিল। সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলায় র্দীঘদিন কমিটি না থাকার সুযোগে হাইব্রিড কাউয়াদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কমিটি গঠনের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারিদের দল থেকে বের করে দেওয়ার আহবান জানান। আগমীতে দলকে এবং শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালি করতে ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। বৃহস্পতিবার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উদ্বোধক হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মুনছুর আহম্মেদ, প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা সহ-সভাপতি সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সংসদ সদস্য এস.এম জগলুল হায়দার, সম্মেলন তদারকি কমিটির আহবায়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাক্ষ জাফরুল আলম বাবু প্রমুখ। এছাড়াও উক্ত সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ, ফিরোজ কামাল শুভ্র, দপ্তর সম্পাদক হারুঅর রশিদ, কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদী, নির্বাচন তদারকি কমিটি সদস্য ও জেলা আআওয়ামীলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক শফিউল আলম লেনিন, শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান বাবু, আশাশুনি থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ. বি মোস্তাকিন, কলরোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক থানা সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ, দেবহাটা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, জেলা আওয়ামলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ওসমান গণি, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর বেগম, কালিগঞ্জ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দিপালী রানী ঘোষ প্রমুখ। এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৩টার সময় প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হয়। বিকাল ৪টায় উপজেলা পরিষদ মিলনাতায়নে দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনছুর আহম্মেদ উক্ত সভায় কাউন্সিলাদের সমাবেশ স্থলে রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং জেলা নেতৃবৃন্দ আলোচনা শেষে এক সমঝোতার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস.এম কামাল নরিম আলী মাষ্টারকে সভাপতি এবং এনামুল হোসেন ছোটকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষনা করে। উক্ত ঘোষনায় বাহিরে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ কেন্দ্রীয় নেতাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে নেতারা দ্রুত সমাবেশ স্থল ত্যাগ করে চলে যায়। ঘোষনার পর কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ নির্বাচন না দিয়ে মনগড়া পকেট কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাস্তায় বিক্ষোভ করতে হবে। র্দীঘদিন কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি শূন্য থাকায় যোগ্য নেতা নির্বাচনের জন্য সকাল থেকে ১২ টি ইউনিয়নের নেতা-কর্মী সমর্থকরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশ স্থলে হাজির হতে থাকে। দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিলাদের উপেক্ষা করে কমিটি ঘোষণা দেওয়াকে কেন্দ্র করে আগমীকাল থেকে কঠোর কর্মসূচি দেবেন বলে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বেলা ১টার সময় সমাবেশ স্থলে প্রধান অতিথি ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হকের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা ও ১২টা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উত্তোলন করে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মৃতবরণ কারি নেতা-কর্মীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।