সাত্তার সিকদার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম):
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছে গেলো ইউএন শরীফ উল্যাহ’র চিঠি।
২২ মে (সোমবার) উপজেলার দুইটি স্কুলে প্রায় দুই হাজার ২শ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর কাছে চিঠির কপি আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী এই কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শরীফ উল্যাহ।
ইউএনওর লিখিত চিঠিতে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদির অপব্যবহার, মাদকাসক্তি, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, অসামাজিক কার্যকলাপসহ বর্তমান প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে অনেকের মধ্যে সততা, নৈতিকতা, মানবিক গুণাবলি, ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ইত্যাদির চর্চার অভাবের কথাও উল্লেখ রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন অভিভাবকের করণীয় বিষয়েও চিঠিতে তিনি বিশেষভাবে গুরত্বারোপ করেন। গত বছর শিক্ষার মানোন্নয়নে তাঁর গৃহীত কার্যক্রমসমূহের শিক্ষার্থীরা কতটা লাভবান হয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। গত বছর শিক্ষা কার্যক্রমসমূহ সফলভাবে বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সহযোগিতার জন্য তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি আগামী দিনেও সকল কার্যক্রমে অভিভাবকদেরকে পাশে থাকার আহবান জানান।
ইউএনও কর্তৃক এমন অভিনব একটি চিঠি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলের দৃষ্টিগোচর হলে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।
লোহাগাড়া শাহাপীর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব আবু বকর জানান, শিক্ষার মানোন্নয়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের এই অভিনব কৌশল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। এই চিঠিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে ও বর্তমান প্রজন্মের সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম কবির জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত বিনির্মাণে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। উপজেলার ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে চিঠির মাধ্যমে মেসেজ দেওয়াও এক বিস্ময়কর ব্যাপার বলে তিনি মনে করেন।
ইউএনওর চিঠি হাতে পাওয়া অভিভাবকরা জানান, চিঠিটি আমরা পেয়েছি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা সচেতন হয়ে অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে উৎসাহ পাচ্ছি ৷
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ উল্ল্যাহ এবিষয়ে বলেন,
আজকে প্রতিষ্ঠান দুটির প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার অভিভাবককে দেওয়ার জন্য একটি করে চিঠি বিতরণ করা হয়। দ্রুত উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের হাতে চিঠিটি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আরো বলেন, মহামারী করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা এক কঠিন সময় পার করছি। তাছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ দিন দিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং সন্তানের উজ্জ্বল ও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে অভিভাবকদেরকে অবশ্যই সচেতন হয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। মূলত সেই চিন্তা থেকেই বাস্তবতার আলোকে কিছু মেসেজ দেওয়ার জন্যই অভিভাবকদের প্রতি আমার এই চিঠি । আশা করি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এর সুফল পাবেন।