স্ক্যাবিস: এক নীরব মহামারী
তীব্র চুলকানিতে রাতের ঘুম হারাম? পরিবারের একাধিক জন হঠাৎ করে চুলকানিতে ভুগছেন? যদি এই উপসর্গগুলো আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে সাবধান হোন
এটা স্ক্যাবিস হতে পারে।
স্ক্যাবিস এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ। চোখে দেখা না গেলেও এর অস্তিত্ব ত্বকের গভীরে, এবং এটি অল্প সময়ের মধ্যে একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
স্ক্যাবিস কী?
স্ক্যাবিস হয় একটি অতিক্ষুদ্র পরজীবী Sarcoptes scabiei নামক মাইটের কারণে। এই মাইট ত্বকের নিচে গর্ত করে ডিম পাড়ে। এরপর সেখানে জন্ম নেয় নতুন মাইট, যা ত্বকে জ্বালা, ফুসকুড়ি আর অসহনীয় চুলকানির সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রাতের বেলায় যখন শরীর গরম হয়
তখন এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায়।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
স্ক্যাবিস যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে বেশি দেখা যায়
শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে
হোস্টেল, মেস, বা শরণার্থী শিবিরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে
পরিবারের একাধিক সদস্য একই বিছানা বা তোয়ালে ব্যবহার করলে
গরিব বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে
যাদের ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে না
প্রধান লক্ষণগুলো
স্ক্যাবিস শনাক্ত করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট লক্ষন,যেমন:
রাতের বেলা তীব্র চুলকানি
আঙুলের ফাঁকে, কব্জি, কোমর, নাভির চারপাশে, বগল বা লিঙ্গের পাশে ফুসকুড়ি
সরু রেখার মতো গর্ত, লালচে দানা বা ফোসকা
একই পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হওয়া
শিশুদের ক্ষেত্রে হাত-পায়ের তালু বা মুখে পর্যন্ত ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া
চুলকানির কারণে অনেক সময় জায়গাটা ঘা হয়ে যায়, পুঁজ বের হয়, এমনকি সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কীভাবে ছড়ায়?
স্ক্যাবিস সরাসরি ত্বক থেকে ত্বকে ছড়ায়।
একই বিছানায় ঘুমানো
একই পোশাক, তোয়ালে বা চাদর ব্যবহার
এই অভ্যাসগুলো স্ক্যাবিস সংক্রমণের জন্য দায়ী। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো,একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবার বা হোস্টেল ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, যদি সচেতনতা না থাকে।
প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা:
স্ক্যাবিস প্রতিরোধে কিছু সহজ কিন্তু জরুরি অভ্যাস রপ্ত করতে হবে;
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: প্রতিদিন গোসল করুন। কাপড় ধুয়ে রোদে শুকান। বিছানাপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
ব্যক্তিগত জিনিস ভাগাভাগি নয়: তোয়ালে, বালিশ, কম্বল, চাদর—এই জিনিসগুলো ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করুন।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখুন: একই ঘরে হলেও তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র আলাদা করুন এবং নিয়মিত রোদে শুকান।
পরিবার বা রুমমেটদের সচেতন করুন: একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও সতর্ক করুন। সবাই মিলে প্রতিরোধ না করলে এই রোগ চলে গেলেও আবার ফিরে আসবে।
শেষ কথা:
স্ক্যাবিস কোনো অভিশাপ নয়। এটি প্রতিরোধযোগ্য, নিয়ন্ত্রণযোগ্য
শুধু প্রয়োজন সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা এবং দায়িত্বশীলতা।
নিজ থেকেই শুরু হোক প্রতিরোধ।
লেখক;নজির নোবেল
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ
শুভ