রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মী কাজী আশফিক রাসেলকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদ এবং অভিযুক্ত সিন্ডিকেটের দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মসূচিটি পালিত হয়।
ভুক্তভোগী কাজী আশফিক রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার খালিশাপাড়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে। অভিযুক্ত ফারুক আহমেদ তালুকদার নেত্রকোনার দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওআমী লীগের উপদেষ্টা। তিনি দূর্গাপুর উপজেলার কাকৈরগড়া গ্রামের বাসিন্দা।
মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, রাসেল ভাই একজন কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি সবসময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। আওয়ামী লীগের আমলে আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি। এখন নতুন বাংলাদেশেও সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বিগত কিছুদিন ধরে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে। পতিত ফ্যাসিস্ট আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাচ্ছে। রাসেলের ঘটনা সারা বাংলাদেশের একটি খণ্ডচিত্র। আপনারা এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
এসময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, আশফিক রাসেল ভাইয়ের ঘটনা পুরো বাংলাদেশের চিত্র। এটি কোনো এককক ঘটনা না। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের যে পুনর্বাসন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার একটি অংশ এই ঘটনা। যেভাবে আওয়ামী লীগ ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিলো, তারই একটি চিত্র আমরা আবার দেখতে পাচ্ছি। ছায়া ফ্যাসিস্টরা আবার সেরকম চিত্র ফুটিয়ে তুলছে। ফ্যাসিস্টদের বিচার হচ্ছে না। প্রশাসন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিন কাটাচ্ছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের সাবধান করছি। বিচারহীনতা মব জাস্টিসের দিকে নিয়ে যায়। মব ঠেকাতে জাস্টিস প্রয়োগ করুন। অনতিবিলম্বে রাসেলকে হুমকির বিচার করুন। সাথে স্বৈরাচারের বিচারও নিশ্চিত করুন।
সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ফারুক আহমেদ ২০০৩ সাল থেকে সুসং সরকাররি ডিগ্রি কলেজে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রশিক্ষণ ছাড়াই কম্পিউটার শাখার প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নিয়োগের প্রক্রিয়া থেকেই তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরে গত ১০ নভেম্বর ভুক্তভোগী রাসেল সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের আহ্বায়ক হিসেবে অভিযুক্ত ফারুক আহমেদ ও তার স্ত্রী আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন্নাহারসহ একটি সিন্ডিকেটের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমাণসহ একটি লিখিত অভিযোগ দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ ফারুক ও তার সহযোগীরা কাজী আশফিক রাসেলকে অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে জীবননাশের হুমকি দিতে থাকেন।