ঢাকারবিবার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

সীমান্ত আগ্রাসন আর কতকাল?

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ৪:২৬ অপরাহ্ণ

Link Copied!

* কেস স্টাডি-১

গুলি করে ১৩ বছরের আব্দুর রকিবকে খুন

১৩ মার্চ ২০০৯ । নোয়াগাঁয়ের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের গোচারণ ভূমিতে গরুকে ঘাস খাওয়াতে এনেছিল কয়েকজন কিশোর।গরু ছেড়ে দিয়ে নিজেরা খেলায় মেতে উঠেন তারা। আরেকজন কিশোর পাশেরই একটি ডোবায় মাছ ধরছিল। এ সময় সেখানে হঠাৎই হাজির হয় এক বিএসএফ জওয়ান। মাছ ধরতে থাকা কিশোরের কাছে কয়েকটি মাছ দাবী করে সে। অবোধ কিশোর মাছ দিতে রাজী হয় না। বিএসএফ জওয়ান তখন তাকে হুমকি দমকি দিতে থাকে। তার কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ বন্দুক তাক করে গুলি শুরু করে। দিক বিদিক ছুটতে থাকে গ্রামের দুরন্ত কিশোর দল। কিন্তু একজন পারে না। তার নাম আব্দুর রকিব। অন্য কয়েকজনের সঙ্গে ১৩ বছরের এই কিশোরের গায়েও এসে লাগে গুলি। মারা যায় রাকিব। বাংলাদেশের ভূ-খন্ডের ভেতরেই, সীমান্ত থেকে ২০ মিটার দূরে প্রতিবেশি দেশের গুলিতে মারা যায় এই ছেলেটি। তারপর খুনী সেই বিএসএফ সদস্য সেই ছেলেটির মৃতদেহ টেনে হিঁছড়ে ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। পরের দিন ১৪ মার্চ বিএসএফ –বিডিআর পতাকা বৈঠকে মৃতদেহটি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে এই নিহত কিশোরকে একজন গরু চোরাচালানী বলে চিহিৃত করার অনেক প্রচেষ্টা চলে। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকান্ডটির অনেক প্রত্যক্ষদর্শী থাকায় বিএসএফের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। অবশেষে বিএসএফ তাদের দায় ম্বীকার করে নিজ বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যের বিচারের আশ্বাস দিয়ে পতাকা বৈঠক শেষ করে। সেই বিচার হয়েছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। বিচার হয়েছে এমনটা বোধ হয় বিশ্বাসও করে না কেউ। কিন্তু জীবন দেখার আগেই যে, কিশোরের প্রাণ ঝরে গেল , সেই কিশোর আর কোনদিন তার মা-বাবার কাছে ফিরে যাবে না। পৃথিবীর সুখ শান্তি প্রেম ভালবাসা না বুঝার আগে হিং¯্র হায়েনার আঘাতে অকালে ঝরে গেল এক সম্ভবনাময় কিশোর। ধিক! ঘায়েনার দল বিএসএফ ধিক!!।

* কেস স্টাডি-২

১২ বছরের সুমিকে গুলি করে হত্যা

৪ অক্টোবর ২০০৯ সাল। রমজান মাস। কুড়ি গ্রামের নওদাপাড়া গ্রামের সুমি সেদিন সময়ের অনেক আগেই স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিল। স্কুল শিক্ষিকা তাকে পাঠালেন তার কাসের বাকি মেয়েদের খুঁজে আনতে। একটু পরেই কাস শুরু হবে। অথচ তখনও স্কুলে এসে পৌঁছায়নি অনেকেই। সুমি স্কুল থেকে বেরিয়েই একটু দুরে দেখতে পেল একটা পুকুর পাড়ে তার বান্ধবীরা খেলছে। শিউলি, মীনা, মৌসুমী, শিল্পীসহ আরো অনেকেই। পুকুরটা বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে; সীমান্ত পিলার ১০৬৩ আর ১০৬৪ এর মাঝখানে অবস্থিত। শিক্ষিকা খোঁজ করতে পাঠিয়েছেন শুনে খেলা বাদ দিয়ে এই শিশুরা ফিরে যাচ্ছিল স্কুলে। একটি সুন্দর ভোরে সবাই প্রাণচঞ্চল। আচমকা পেছনে গুলির শব্দ। মুহুর্তেই ঢলে পড়ে সুমি । তার কাপড় রক্তে ভেসে যায়। পরদিন উত্তেজিত গ্রাম বাসী বিডিআর ক্যাম্প ঘেরাও করলে বিডিআর সদস্যরা জানায়-পাশের শাহাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প থেকে গুলি করা হয়েছে সুমিকে। বিডিআর পতাকা বৈঠকের উদ্যোগ নেয়। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে অক্টোবর মাসে কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকে বিএসএফ কমান্ডার রাজেশ ঘটনার জন্য আরেকবার দুঃখ প্রকাশ করেন। রাজেশ জানান-ঘটনার জন্য দায়ী বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কতটুকু পালিত হলো, সে ব্যাপারে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি (তথ্যসূত্র-রাজকুট)। আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিএসএফের হত্যাকান্ড নিয়ে “ট্রিগার হ্যাপি” শিরোনামে এক রির্পোট প্রকাশ করেছে, উপরের দুটো কাহিনী সেখান থেকে নেওয়া। এভাবে বিএসএফ নিরীহ বাংলাদেশীদের দিনে দুপুরে বিনা কারণে হাসিরচ্ছলে গুলি করে, নির্যাতন করে হত্যা করছে। বাংলাদেশের খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এ রকম অসংখ্য কাহিনী প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, বিনা কারণে নিরীহ বাংলাদেশীদের কিভাবে গুলি করে, ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করছে ভারতীয় কিলার বাহিনী। অপ্রয়োজনে উসকানিমূলক ভাবে যখন তখন যেন নিরীহ বাংলাদেশী হত্যা যেন তাদের একমাত্র মিশন। গত এক দশকে প্রায় ১ হাজার বাংলাদেশীকে গুলি করে বা নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে ভারতীয় সেই কিলার বাহিনী বিএসএফ। ভারতীয় কিলার বাহিনীর ধারাবাহিক হত্যাকান্ড এখন এমনই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে, মিডিয়ায় তা এখন আর আলাদা গুরুত্ব বহন করে না। একই অবস্থা নতজানু সরকারেরও। হাজার বাংলাদেশী হত্যার নূন্যতম প্রতিবাদ করতে পারে না নতজানু সরকার। লজ্জিত গোটা জাতি সরকারের এ ভূমিকায়। কুটনৈতিক সভাগুলোতে মিন মিনিয়ে কিছু আলাপ আলোচনা ছাড়া দিনের পর দিন বাংলাদেশীদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করার ব্যাপারে কোন সরকারই তেমন উচ্চবাক্য করেনি। কিন্তু কেন? কিসের এতো ভয়? জনগনের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলে ক্ষমতায় এসে হাজার বাংলাদেশীর এ নির্মম হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির এ নিলিপ্ততা সত্যিই দুঃখ জনক। কারণ তাদের কাছে দেশের মানুষের চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই বরং ক্ষমতায় মূখ্য। তাই ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতায় গিয়ে দাদা বাবুদের সব হত্যাকান্ডে নিরবে সহ্য করে । ধিক! আওয়ামীলীগ ধিক বিএনপি!। এমনটা চলতে পারে না। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্তে এমন কোন উত্তেজনা চলছে না যেখানে প্রতি সপ্তাহে একাধিক বাংলাদেশীকে হত্যা করতে হবে। গত ৮ জানুয়ারী ২০১০ সালে কুড়িগ্রামে ফুলবাড়ি সীমান্তে বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যাকান্ড ছিল বর্তমান সময়ের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা। ফেলানীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ভারতে থাকে বসবাস করে আসছে এবং তারা ওই দিন সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ফিরছিল। বিয়ের গয়না সহ পরণে ছিল ফেলানীর গায়ে। আসার আগে তার মা তাকে নববধুর সাজে অলংকার পরিয়ে দিয়েছিল, এর একদিন পর বাংলাদেশে খালাত ভাইয়ের সাথে তার বিয়ের কথা ছিল। মা আসতে পারবেনা তাই বিয়ের অলংকার পরিয়ে দিয়ে দোয়া করছিল তাকে। কিন্তু সেই দোয়া যে তার জীবনের শেষ দোয়া হবে তা কে জানতো? কাটা তারের বেড়া পার হতে গিয়ে ফেলানীর কাপড় কাটাতারে আটকে গেলে ভয়ে ফেলানী তার বাবাকে ডাকতে থাকে। ওই কিশোরীকে গ্রেফতারের কোন চেষ্টা না করে সরাসরি গুলি করে বিএসএফ। হতভাগ্য ফেলানীর লাশ কাটাতারে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝুলতে থাকে, তারপর রাত গভীর হলে কাটাতার থেকে মুুমুর্ষ ফেলানীকে নামিয়ে পার্শ্ববর্তী ক্ষেত্রে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় কিলার বাহিনী গণধর্ষণ করে হত্যা করে তাকে। পরে মৃত্যুর ৩২ ঘন্টা পর বিডিআরের কাছে লাশ হস্তান্তর করে (আমাদের সময়) । এই হত্যাকান্ডে সারা দেশের মানুষ শোকাক্রান্ত হলেও ভারত প্রেয়সী সরকার কোন উচ্চ বাক্য করেনি, বরং এটা নিয়ে বিরোধী দলের প্রতিবাদ নিন্দাকে সমালোচনা করেছিল সরকার।

* বিএসএফের কিলার মিশন ঃ-

লাশের মিছিল বাড়ছে, আর দুর্বৃত্ত খুনে ব্যস্ত বিএসএফ। ফেলানীর পর হত্যা করা হলো ২৫ বছরের যুবক শাহজান আলীকে। শাহজানকে হত্যা করা হয়, বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে। বিএসএফ সমস্যরা তাকে মালদহ ব্যাটালিয়ানের ভরপুর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন চালায়। ভেঙ্গে দেয়া হয় তার হাত পা, নির্যাতনের পর তাকে সীমান্তে ফেলে যায় তাকে। বিজিবির সহায়তায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হলেও পরদিন মারা যান শাহজান। আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব হত্যাকান্ডের দায়ে বিএসএফ সদস্যদের দায়ী করে বিচারের কথা বলা হলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মোটেও কর্ণপাত করছে না। কারণ এ হত্যাকান্ড ভারতের ঐতিহ্যের একটি অংশ। খুন,ধর্ষন, মানবাধিকার লংঘন ভারতের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। খুনের রাজত্বে পৃথিবীতে তিন অক্ষ শক্তির মধ্যে ভারত অন্যতম। তাই খুন ও ধর্ষণ তাদের বিনোদনের অন্যতম অংশ। শুধু বাংলাদেশী নয় ভারতীয়রাও বিএসএফের হাতে নিরাপদ নয়। গত কয়েক মাসে বিএসএফের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা, নির্যাতন সহ ৮০০ অভিযোগ ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের দপ্তরে রয়েছে। বিএসএফ প্রধানের সীমান্তে হত্যা বন্ধের অঙ্গীকার, দেশী বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন সমূহের প্রতিবাদসহ নানা প্রতিবাদ ও সমালোচনার মধ্যেও থামছে না বিএসএফের কিলার মিশন। গত পাঁচ বছরে বিএসএফ প্রায় ৪ শত নিরীহ বাংলাদেশীকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। ২০০৭ সালে বিএসএফ ১২০ জন নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে, আহত ৮২ জন, অপহরণ ৯৮ জন। ২০০৮ সালে হত্যা ৬২ জন, আহত ৪৭ জন, অপহরণ ৮১ জন। ২০০৯ সালে হত্যা ৯৮ জন, আহত ৭৭ জন, অপহরণ ২৫ জন। ২০১০ সালে হত্যা ৭৪ জন, আহত ৭২ জন, অপহরণ ৪৩ জন। ২০১১ সালে হত্যা ৩১ জন (সূত্র-অধিকার)। সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি এবং সরকারের ধারাবাহিক কূটনৈতিক শৈথিল্যের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষ। ভারতীয় কিলার বাহিনীর বন্দুকের নলের সামনে প্রতিনিয়ত বাস করতে হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিয়ে। অন্যদিকে ভারতীয় এ কিলার বাহিনীর এই হত্যাকান্ড থামানোর কোন উদ্যোগ ভারতীয় পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না। বরং তাদের হত্যাকান্ডকে যৌক্তিকতা প্রমাণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বার বার। ছি! নির্লজ্জ কিলার বাহিনী ছি!। ২০১০ সালের ২৩ শে সেপ্টম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের পাঁচদিন ব্যাপী সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহা পরিচালক রমন শ্রীবাস্তব জানান, সীমান্তে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয় না। এই যে শত শত বাংলাদেশী তাদের গুলিতে মারা যাচ্ছে তাদেরকে তিনি চোরাচালানি বলে অভিহিত করেন। কি নির্লজ্জ মিথ্যাচার!! উপরের যে দুটি কাহিনী পেশ করা হল তারাও কি চোরাচালানী? তা এ রমন শ্রীবাস্তবকে পড়ে দেখতে বলবো। হে নির্লজ্জ বেহায়া রমন কয়েক দশকে হাজার বাংলাদেশী হত্যার প্রতিটি কাহিনী পড়ে দেখুন, সেখানে দেখতে পাবেন প্রতিটি হত্যাকান্ডই ছিল অন্যায়। প্রতিটি হত্যাকারীই ছিল নিরীহ। কি অপরাধে ১৩ বছরের আব্দুর রকিব আর ১২ বছরের সুমিকে হত্যা করা হলো তার জবাব তোমাদের আছে কি? নাকি তারাও চোরাচালানী? ছি! ছি!! ভারতীয় কিলার বাহিনীর এ নির্লজ্জ মিথ্যাচার হিটলারের মিথ্যাচারকেও হার মানিয়েছে।

* চোরাচালানের খোঁড়া অজুহাত বনাম সীমান্তে ভারতীয় অস্ত্র ও ফেনসিডিল কারখানা ঃ-

বিশেষ লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, ভারতীয় কিলার বাহিনী যাদেরকেই হত্যা করছে, সব সময়ই একই মুখস্ত অজুহাত দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে, সীমান্তের ওপারে থেকে গরু আনতে গিয়ে চোরাচালানিরা মৃত্যুবরণ করছে। ভারতীয় কিলার বাহিনীও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কথাতে যদি সত্যের লেশ থাকত তাহলে এতদিনে ভারত গরু শূণ্য হওয়ার কথা ছিল। উপরের কেস স্টাডিতে দেখানো হয়েছে তারা গরু চোর বলে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে ভারত থেকে গরু নিয়ে আসা সহজ নয়। গরু মই বেয়ে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে আসতে পারে না। এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখার জন্য ধিরে ধিরে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য বানানোর নিমিত্তে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ভারতীয় সীমান্তে অস্ত্র ও ফেনসিডিলের কারখানা খুলেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। আর সেখান থেকে প্রতিদিন বানের মতো অস্ত্র ও ফেনসিডিল পাচার করছে বাংলাদেশে। তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড গোপন করার জন্য বা দৃষ্টিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য চোরাচালানির নাম করে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে। কি নির্লজ্জ মিথ্যাচার। সম্প্রতি কালের কন্ঠে ৩০ অক্টোবর ২০১০ সালে চার পর্বের একটি ধারাবাহিক এক্সকুসিভ রির্পোট প্রকাশিত হয়। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো ঘুরে ‘সরেজমিনে চোরাচালান’ নামের সাড়া জাগানো অনুসন্ধানী প্রতিবদেন করেন কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি পারভেজ খান। এই রির্পোটে দেখা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতে গড়ে উঠেছে অস্ত্রের গুদাম। যে গুদাম থেকে অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অস্ত্র। পারভেজ নিজেও হিলি সীমান্তের ওপারে হাড়ি পুকুর গ্রামে সরেজমিনে এ অস্ত্র সরবরাহ কারীদের বাড়ি ঘুরে এসেছেন। সেই রির্পোটে দেখা যায়, একেকটি সরবরাহ পয়েন্ট দিয়ে দিনে কমপক্ষে ২০ টি অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর বাইরে ভারতের ওপারে গড়ে উঠেছে অনেক গুলো ফেনসিডিল কারখানা। সেগুলো বন্ধ করার জন্য মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে বিডিআরের পক্ষ থেকে আহবান জানানো হলে সফরকারী বিএসএফ প্রতিনিধি জানান, এ রকম কোনো ফেনসিডিল কারখানা সীমান্তে আশেপাশে নেই। বাংলাদেশের তরফ থেকে এরকম তালিকা পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। ভূতের মুখে রাম! রাম! । তাঁদের ভাব দেখে মনে হয় বিডিআর ভারতের গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেনসিডিল আর অস্ত্রের কারখানা চিহিৃত না করা পর্যন্ত বিএসএফ খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু জানা গেছে, একেকটি সীমান্তবর্তী জেলার পাশেই কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ টি ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে। শিবগঞ্জ সীমান্তের ওপারে হেলু সরদার নামের এক মাদক স¤্রাট একাই শতাধিক হাতে তৈরি ফেনসিডিল কারখানার মালিক। কালের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি সরেজমিনে দেখে এসে জানাচ্ছেন, হিলি স্টেশনের পেছনে ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলা। স্টেশনের অদুরেই ৩ জেলার ত্রিমোহনী মোড়। এখানে পুলিশ ফাঁড়িও আছে। এ পুলিশ ফাঁড়ির কাছাকাছিই রয়েছে শন্টু ভৌমিক, টুম্পা ভৌমিক, অনীল আর ফড়িংয়ের ফেনসিডিল কারখানা। দেখা যাচ্ছে ভারত সরকারের এক ধরণের পরোক্ষ পৃষ্টপোষকতায় এসব কারখানা চালু আছে। নইলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের এত বীরত্বপূর্ণ অভিযান থাকলেও পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই একাধিক ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করার তাদের কোন উদ্যোগ নেই কেন? বরং আমি আগেই বলেছি তারা চোরচালান বন্ধের জন্য হত্যাকান্ডের যে খোঁড়া অজুহাত দেখাচ্ছে তা নেহায়তই আসল পরিস্থিতিকে আড়াল করার চেষ্টা। তারা যে বিপুল বিক্রমে প্রতি সপ্তাহে একাধিক বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করছে এবং নিহতদের চোরাচালানি বলে পার পেয়ে যেতে চাইছে, চোরচালান বন্ধে তাদের সত্যিকার আগ্রহ থাকলে এই খুনের চেয়ে অনেক কম আয়েশে তারা নিজস্ব ভূ-খন্ডে ফেনসিডিল ও অস্ত্র কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে পারত। কিন্তু বাস্তবে এমনটি ঘটছে না। তারা আমাদের দেশে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর অবাধে অস্ত্র পাচার করে দেশটাকে সন্ত্রাসের অভয়ারন্য বানাতে চায়। তাইতো ঢাকা থেকে কালের কন্ঠের সাংবাদিক গিয়ে অনায়াসেই ফেনসিডিল কারখানা আর অস্ত্র গুদাম খুঁজে পেলেও রমন শ্রীবাস্তবের অধীনস্থ সৈনিকরা সেই কারখানার তালিকার জন্য বিডিআরের কাছে আবদার করছেন। একই বলে হুশ ঠিক জাতে মাতাল।

* সীমান্ত সমস্যা সমাধানে অনিচ্ছুক ভারত ঃ-

বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের সশস্ত্র আগ্রাসনকে চোরচালান দমনের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার একটি কারণ দুই দেশের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা। বিভিন্ন সীমান্তে প্রায়ই তারা বাংলাদেশী সীমান্তে প্রবেশ করে বাংলাদেশী কৃষি জমি ও পানির উৎস গুলোকে হঠাৎ এক তরফা উসকানির মাধ্যমে নিজেদের দখলদারিত্ব কায়েম করতে আসে। এ সময় স্থানীয় বাংলাদেশীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় আহত ও নিহত করে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের এসব সমস্যা সমাধানে ভারতের আগ্রহই নেই। (যেন গায়ে মানে না আপনি মোড়ল)। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দরা গান্ধীর মধ্যে সই হওয়া চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় করার কথা ছিল। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালেই এ চুক্তি অনুমোদন করে এবং ভারতের হাতে বেরুবাড়ি ছিটমহল হস্তান্তর করে। কিন্তু ভারত আজ পর্যন্তও ওই চুক্তি অনুমোদন করেনি এবং ছিটমহলগুলোকে নিজেদের দখলে রেখেছে। আাসলে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এ সমস্যা জিইয়ে রেখে ফায়দা হাসিল করতে চায় ভারত।

* বাংলাদেশের করনীয় ঃ-

ভারত সন্ত্রাসী কায়দায় আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে সমস্যা গুলো থেকে ফায়দা হাসিল করতে চাইলেও বাংলাদেশকে উদ্যোগী হতে হবে।

প্রথমত-সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশী হত্যার ব্যাপারে কঠোরভাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতে হবে। আর একটি নিরীহ বাংলাদেশীও হত্যার সাহস যাতে ভারতীয় কিলার বাহিনী করতে না পারে সে উদ্যোগ নেওয়া। আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় এ খবর গুলোকে প্রচারের ব্যবস্থা করা। প্রভাবশালী দেশগুলোর মাধ্যমে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।

দ্বিতীয়-সীমান্ত সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া, প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও দাতাদের সাহায্য নেওয়া।

তৃতীয়ত-সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। সীমান্তে ভারতীয় অস্ত্র ও ফেনসিডিল কারখানা বন্ধের ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করা। অস্ত্র ও মাদক যাতে কোনভাবেই দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। এব্যাপারে দেশীয় এজেন্টগুলোকে চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে সব কিছু উজাড় করে দেওয়ার বদলে উজাড় করে নেওয়ার মানসিকতা গ্রহন করা।

354 Views

আরও পড়ুন

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পাবনার হেমায়েতপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : নিহত ১

কাপাসিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন

কাপাসিয়ায় ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে সিরাতুন্নবী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন

কক্সবাজারের ঈদগাহতে ফুলকুঁড়ি আসরের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

জবিস্থ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সৌরভ – মনির

কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের কারা নির্যাতিত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটনকে সংবর্ধনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা

দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে জাতীয় ঐক্যমত্যের বিকল্প নেই–মিয়া গোলাম পরওয়ার