মিছবাহ উদ্দিন:
প্রতিদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরুধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আটক হচ্ছেন খুচরা ও পাইকারি মাদক কারবারিরা। কিন্তু থেমে নেই মাদকের ভয়বহতা। মায়ানমার থেকে আসা মাদক সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ পেরিয়ে গ্রাম-গঞ্জ এখন মাদকের আঁকড়ায় পরিণত হয়েছে। লোভের বশবর্তী হয়ে জড়িয়ে পড়ছেন ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, যুবক-যুবতী, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী সহ সর্বশ্রেণীর লোকজন। দ্রুত বড়লোক হওয়ার সপ্নে এ অপরাধের দিকে ঝুঁকছে নতুন নতুন কারবারি। ফলে মহামারী করোনার ছেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের আগ্রাসন!
গেলো দুই বছর জুড়ে করোনার প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশ লকডাউনের কবলে পড়ে সব কিছু বন্ধ থাকার সুবাধে আরো বিস্তার লাভ করে মাদকের ভয়বহতা। বেকারত্বে আর্থিক চাহিদা মেটাতে পিতা-মাতার অগোচরে এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে পরিবারের সদস্যরা! মাদক সেবন ও বিকিকিনি করতে করতে একদিন প্রশাসনের হাতে আটক হয় এসব কারবারিরা। ফলে সর্ব শান্ত হচ্ছে পরিবার। এসব কাজের মূলে রয়েছে রাজনৈতিক লেবাসধারী কিছু নেতাকর্মী ও অর্থ যোগানদাতা কথিত কোটিপতিরা। তাদের টার্গেট এলাকার বেকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। হটাৎ কোটিপতি বানিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আটক হওয়া থেকে নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ অপরাধে জড়াচ্ছে। যেই সিন্ডিকেটে রয়েছে প্রশাসনের অনেক সদস্যরাও।
মাসিক ও দৈনিক মাসোহারায় শেল্টার দিচ্ছেন মাদক কারবারিদের। ফলে কোনভাবে রোধ করা যাচ্ছে মাদকের আগ্রাসন।
বিশ্লেষকরা বলছেন আটক কিংবা বন্ধুক যুদ্ধ দিয়ে মাদক থেকে যুবসমাজকে রাক্ষা করা যাবে না। নিতে হবে পারিবারিক ও সামাজিক পদক্ষেপ। নৈতিকতা শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব অপরিশীম। এদিকে বেকারত্ব দূরিকরণে বাস্তবমুখী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাছাড়াও মাদকের আগ্রাসন রোধে বেকার যুবসমাজকে খেলাধুলা ও সুস্থ সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকাতে হবে। অন্যতায় কোনভাবে মাদক থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
মাদকের প্রভাবে বাড়ছে অপরাধের মাত্রা। চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, ইভটিজিং, হত্যাসহ বড় বড় অপরাধে জড়াচ্ছে এসব মাদকাসক্ত ও কারবারিরা। মাদকের টাকা জোগাড় করতে কোনকিছু বাঁধা নয় তাদের কাছে। ফলে শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও বিভিন্ন অপরাধে মাদকাসক্ত ও কারবারিদের বেছে নিচ্ছেন। এদিকে এসব কাজে নতুন-পুরাতন রোহিঙ্গাদের বিচরণ চোখে পড়ার মতো। সুনির্দিষ্ট এলাকা থেকে ছটকে পড়া রোহিঙ্গারা মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রাম-গঞ্জে। বিশ্লেষকরা বলছেন পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব পরিবারের কর্তাদেরই নিতে হবে। ছোটবেলা থেকে মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দিতে হবে নৈতিক শিক্ষা। সবসময় খেয়াল রাখতে হবে সন্তানদের প্রতি। অন্যতায় পরিবার, সমাজের পাশাপাশি ধ্বংস হবে রাষ্ট্র ব্যবস্থাও।
এদিকে মাদক রোধে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা কিংবা বহনকারী নয়, তাদের গডফাদার রাজনৈতিক নেতা, কথিত কোটিপতি ও মাসোহারা নেওয়া প্রশাসনের কর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার অনুরোধ জানান সচেতন মহল। তাছাড়াও অরক্ষিত সীমান্ত সীলগলাসহ মাদক আসার পথ বন্ধের বিষয়ে বাস্তবমুখী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।