ঢাকামঙ্গলবার , ২৪ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ

কেন মণিপুরী মুসলমানরা হানাফী মাজহাব অনুসরণ করেন?

প্রতিবেদক
রফিকুল ইসলাম জসিম
৩১ মে ২০২৫, ৩:১৮ অপরাহ্ণ

Link Copied!

রফিকুল ইসলাম জসিম 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ঐতিহাসিক জনগোষ্ঠী হিসেবে মণিপুরী মুসলমান বা পাঙাল সম্প্রদায় একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে। ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চায় তারা সুসংগঠিত, ঐতিহ্যনিষ্ঠ ও সুসংহত এক মুসলিম জনগোষ্ঠী। এ সম্প্রদায়ের অধিকাংশই সুদীর্ঘকাল ধরে ইসলামের চারটি সুপরিচিত মাজহাবের মধ্যে হানাফী মাজহাব অনুসরণ করে আসছে। প্রশ্ন জাগে, কেন মণিপুরী মুসলমানরা হানাফী মাজহাব অনুসরণ করে? এই লেখায় আমরা ঐতিহাসিক, সামাজিক ও ধর্মতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখবো।

(ক) ইসলাম মণিপুর অঞ্চলে আসে মূলত বাংলার দিক থেকে। ১৬-১৭শ শতাব্দীতে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আগত মুসলিম ব্যবসায়ী, সুফি সাধক ও আলেমগণ মণিপুরে ইসলাম প্রচার করেন। সে সময় বাংলার অধিকাংশ মুসলমানই ছিলেন হানাফী মাজহাবের অনুসারী। ইসলাম গ্রহণকারী মণিপুরবাসী বা পাঙালরা সেই প্রচারকদের মাধ্যমেই ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাদের কাছ থেকেই হানাফী মতবাদ শেখেন। এভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে থেকেই হানাফী ফিকহ পাঙালদের ধর্মীয় জীবনের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

(খ) মণিপুরের সঙ্গে মুঘল দরবার ও বাংলার মুসলিম নবাবদের একাধিকবার সামরিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ ঘটেছে। মুঘল এবং বাংলার শাসকগণও হানাফী মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। তাদের মাধ্যমে আসা প্রশাসনিক আদেশ, ইসলামী আইন ও সামাজিক রীতিনীতিতে হানাফী ফিকহের প্রতিফলন থাকায় মণিপুরের মুসলিমদের মধ্যেও এই মাজহাবের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই বিস্তার লাভ করে।

(গ) মণিপুরী মুসলমানরা প্রথাগতভাবে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য সিলেট ও কাছাড়ের বাসকান্দি, শিলচর এবং মৌলভীবাজার অঞ্চলের ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে যেতেন। এসব অঞ্চলের মাদরাসাগুলো হানাফী ফিকহভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করতো এবং সেখান থেকে শিক্ষালাভকারী আলেমরাই মণিপুরে ফিরে গিয়ে ইমামতি, ফতোয়া প্রদান এবং মাদরাসা স্থাপনার কাজ করতেন। ফলে হানাফী মাজহাব কেবল মতবাদ নয়, বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের একটি মৌলিক ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

(ঘ) উনিশ শতকের শেষভাগে ভারতীয় উপমহাদেশে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হলে, হানাফী মাজহাবের একটি সংস্কারধর্মী ধারার সৃষ্টি হয়, যা ‘দেওবন্দি’ নামে পরিচিত। এই ধারার আলেম ও দাওয়াতি কার্যক্রম মণিপুর অঞ্চলেও প্রসার লাভ করে। অনেক পাঙাল তরুণ দেওবন্দে গিয়ে পড়াশোনা করে ফিরে আসেন, এবং স্থানীয় মাদরাসাগুলোতে এই ধারার প্রভাব প্রতিফলিত হতে থাকে। এভাবেই হানাফী মাজহাব আরও সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ করে।

মণিপুরী মুসলমানরা সমাজগতভাবে অত্যন্ত ঐতিহ্যনিষ্ঠ। তারা ধর্মীয় আচরণে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগ্রহী এবং নতুন মতবাদের পরিবর্তে পূর্বপুরুষদের পথ অনুসরণকে সম্মানজনক মনে করেন। বিয়ের কাবিন, তালাক, নামাজ, জানাজা, রোজা, ঈদ—সব ক্ষেত্রেই হানাফী ফিকহ অনুসারে রীতিনীতির চর্চা গড়ে উঠেছে। এই সাংস্কৃতিক স্থায়িত্বও হানাফী মাজহাবের দৃঢ়তা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ধর্মপ্রচারকদের উৎস, রাজনৈতিক প্রভাব, আলেম সমাজের ধারাবাহিকতা, দেওবন্দি আন্দোলনের ভূমিকা এবং পাঙাল সমাজের ঐতিহ্যনিষ্ঠ মানসিকতা—এই সবকিছুর সমন্বয়ে মণিপুরী মুসলমানরা হানাফী মাজহাব গ্রহণ করে এবং তা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে। এটি কেবল একটি ধর্মীয় পছন্দ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে আছে এবং এখনও জীবন্ত।

লেখক:  মণিপুরী মুসলিম গবেষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

 

288 Views

আরও পড়ুন

তারাগঞ্জ স্কুল অ্যন্ড কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় ও দোয়া অনুষ্ঠান

নাইক্ষ্যংছড়িতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৩টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার !! 

ইসলামপুর পৌরসভার ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ‘গুগল পে’।

নালিতাবাড়ী সীমান্তে অর্ধকোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি জব্দ

ইরানের উত্তরাঞ্চলে ৯ জন নিহত ও ৩৩ জন আহতের দাবি

‘দ্য পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্স’– জীবনের গল্পেও যে মেসি প্রেরণার নাম 

অবশেষে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি শুরু, শেষ মুহূর্তেও প্রতিশোধ নিয়েছে ইরান

মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন ঘাঁটি আছে

বাবা মুসলিম মা হিন্দু, আরিয়ান কোন ধর্ম পালন করেন?

‘ইন্টারনেটে আপত্তিকর কন্টেন্টের নিশানায় নারী রাজনীতিকরা’

যুদ্ধবিরতির জন্য ‘মিনতি করছেন’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প