realistic beautiful eid mubarak festival banner design
———
নাহার কবির একজন নতুন প্রজন্মের কবি, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক।তার বেড়ে উঠা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলায়।নাহার কবির পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে।
জার্মান ভাষায়ও তার দক্ষতা রয়েছে।
তিনি ইতোপূর্বে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত “Celebration of 400 Years of Capital Dhaka” গবেষণা প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন।নতুন প্রজন্মের এই কবির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ “ভালোবাসার সুবাস ছড়িয়ে”।অবসরে নাহার কবির দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও সাহিত্য সাময়িকীতে লেখালেখি করে থাকেন।
এবারের ঈদ আড্ডায় প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে
নাহার কবির নিউজ ভিশনের মুখোমুখি হয়েছেন।
তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ জামিন মিয়া এবং হাসিবুল হাসান শান্ত।
প্রশ্ন:আপনি কেমন আছেন ?
আপনার লেখালেখি কেমন চলছে?
নাহার কবির: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এই রমজানে লেখালেখি এখন একটু ধীরগতিতেই চলছে।
প্রশ্ন: বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো।আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
নাহার কবির: বছরের বারো মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারী আমার খুব প্রিয় একটি মাস।এই সময়ে প্রকৃতিও থাকে বৈচিত্র্যময় ।এই মাসে বইয়ের উৎসব হয়।আমার বেশি বই কেনার ইচ্ছে থাকলেও এবার তা হয়ে উঠেনি। আগামী বইমেলায় পাঠকদের আমার লেখা নতুন বই উপহার দেবার চেষ্টা থাকবে।
প্রশ্ন:আপনার প্রিয় লেখক বা কবি কে? কবিতা বা লেখালেখির প্রতি ঝোঁক কিভাবে তৈরি হলো?
নাহার কবির: অনেক কবিই আছেন যারা আমার পছন্দের।তবে এর মধ্যে প্রিয় হচ্ছেন রূদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ।আমার বন্ধুর বই থেকে তার কবিতার একটি লাইন “আর দিও না যন্ত্রণা, মানুষ আমি যন্ত্রণা “পড়ে কবির প্রতি আমার প্রথম আগ্রহ সৃষ্টি হয়।এরপর থেকে রূদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর যে লেখাই পড়ি, সেসবই ভালো লাগতো।আপনি আমার লেখালেখির হাতেখড়ির বিষয় বলছিলেন।আমার লেখালেখির ঝোঁকটা স্কুল জীবনে সময় থেকেই।তখন আমাদের স্কুল ম্যাগাজিনে আমি একটা লেখা দিয়েছিলাম কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় তারা গ্রহণ করেনি।তখন একটু খারাপ লেগেছিলো।তারপর পরিবারের ছোট শিশুদের নিয়ে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে কবিতা লেখাা অব্যহত রেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর নতুন কবিদের নিয়ে রচিত বইতে আমার দুটো কবিতা স্থান পায়।আমাকে নতুন কবি হিসেবে সনদও দেয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন:আপনার শৈশবে কাটানো ইদ কেমন ছিলো?আমাদের পাঠকদের জানাবেন সেই গল্প?
নাহার কবির: এক্ষেত্রে আমি বলবো শৈশবের ইদ আর এখানকার ঈদের মধ্যে ই ও ঈ এরই পার্থক্য (হাসি)! আমাদের সময় যে ইদ হয়েছিল সেটা আসলে দীর্ঘ ‘ ঈ ‘ এর মতোই দীর্ঘ ছিলো।সেসময় এক সপ্তাহ পার হলেও মনে হতো ইদ যায়নি।অথচ এখানকার নানা চাপে ইদ হ্রস্র” ই’ এর মতো ইদ। আসে যায়,বোঝা যায় না।শৈশবে ইদের আগে থেকেই এ উপলক্ষে দীর্ঘ পরিকল্পনা করা হতো।এখন নামাজ শেষ তো ইদও শেষ। শৈশবে আমরা ইদে নতুন বই, গানের ক্যাসেট কিনতাম।এ সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিলো ইদের সালামি।কে কত টাকা সালামি পেতাম; সেটা নিয়ে আমাদের প্রতিযোগিতা হতো।
প্রশ্ন:আপনি সালামির প্রসঙ্গ তুললেন।
এখন একটা প্রবণতা আছে যে,”ইদের চাঁদ আকাশে, সালামি দিন বিকাশে”। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
নাহার কবির: যুগের সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টে যায়।আমাদের দেশে ইদে সালামির বেশ প্রচলন আছে।মূলত পরিবারের বড় সদস্যদের সালাম করে টাকা বা উপহার গ্রহণ করা হয়।কিন্তু এখানকার প্রবণতা সালাম না করে সালামি দাবি করা হচ্ছে অনলাইনে।কোলাকুলি এবং সালাম করা হবে-তারপর সালামি দেবার বিষয়টি আসবে।।সালামি বিষয়টি ইদ জীবনে অত্যন্ত আনন্দের।আমি মনে করি,ইদের চাঁদ আকাশে, সালামি দিন বিকাশে-এই প্রবণতাটা যান্ত্রিক, এর সাথে আবেগ অনুভূতির ছোঁয়া নেই।তবে উপহার কেনার জন্য অর্থ মোবাইলে প্রেরণ করা যায়।
প্রশ্ন: প্রযুক্তির এই যুগে বর্তমানে ইদের আমেজকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? শহর বা গ্রামের ইদের মধ্যে আপনি কেমন পার্থক্য দেখেন?
নাহার কবির: পূর্বেই বলেছি আমাদের ঈদ গুলো অন্যরকম হতো। যেমন ঈদের আগের দিন আমারা ভাই বোন, কাজিনরা, ভাগ্নে, ভাগ্নিরা সবাই গোল হয়ে বাড়িতে বসে গান- আড্ডায় মেতে উঠতাম।একটু দূরে কোথাও ঘুরতে যেতাম। কিন্তু প্রযুক্তির এই সময়ে দেখা যায় সবাই নিজেরা নিজেদের মত সময় কাটাচ্ছে, কেউ ইউটিউব দেখে মেহেদি দিচ্ছে, কেউবা সামাজিক মাধ্যম গুলোতে মগ্ন। এখনকার প্রজন্মের মধ্যে আন্তরিকতার যে ঘাটতি সেটিও দেখতে পাওয়া যায়। যেমন: আগে ঈদে বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে হয়ে আড্ডা দেয়া, সুখ দুঃখ প্রকাশ করা এগুলো এখন আর ওইভাবে হচ্ছে না। ছেলেদের ক্ষেত্রে এরূপ ঘটলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিপরীত চিত্র। তারপরও বলবো ছেলেরা কিন্তু আড্ডায় বসে ফোন ব্যবহার করেন।প্রযুক্তির ব্যবহারকে আমি নিরুৎসাহিত করছি না কিন্তু বলতে গেলে এটি আমাদের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা মাঝে দেয়াল তুলে দিয়েছে।
প্রশ্ন: এই ইদে আপনার পাঠক বা তরুণদের প্রতি কোন বার্তা দেবেন কি?
নাহার কবির: দুঃখের বিষয় হলো তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশ বই পড়ছে না, কবিতা পড়ছে না, গল্প পড়ছে না।আমার মনে হয় যেটুকু পড়ছে সেটাও একাডেমিক চাপে পড়ে। অনেকে ফেসবুকে একটু গল্প, কবিতা পড়ে মনে করছে যে আমি অনেক বেশি সাহিত্য প্রেমী,আমি অনেক কিছু জানি। বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শৈশবে টাকা জমিয়ে বই কিনতাম। আসলে নতুন বইয়ের একটা আলাদা গন্ধ থাকে। আবার অন্যদিকে বইয়ে ছাপা অক্ষর গুলোর দিকে তাকালেই লেখকের চেহারা ভেসে উঠে। তার গল্প, সাহিত্য, কবিতাগুলো ভেসে উঠে। এটি আসলে অন্যরকম একটা অনুভূতি। তরুণ প্রজন্ম যদি বই কিনে না পড়ে, সংগ্রহ না করে তাহলে লেখকদের জন্ম হবে কিভাবে? ইদ, বইমেলা, জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা আগে দেখতে পেতাম বই উপহার দেয়া হতো। আমাদের আগের দিনগুলোতে ফিরে যেতে হবে। এতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হবে, যখন সামনে বই থাকবে খুলে তো দেখবে আর খুলে দেখলেই তো পড়ার আগ্রহটা আসবে।
প্রশ্ন: আপনি নতুন প্রজন্মের কবিদের জন্য কোন চ্যালেঞ্জ দেখেন?
নাহার কবির:পাঠক বই কম পড়ার ফলে লেখকদের মধ্যে আগ্রহ কমে যেতে পারে।সেক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিষয়টা আরো চ্যালেঞ্জিং। একটা পরিবারে ভাই যেমন স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে বোন সেরকম পারে না। আর বিয়ের পর পড়া,লেখা, চিন্তা করার জিনিসগুলো আরো কঠিন হয়ে যায়। অনেকসময় এগুলোর জন্য অনেক কটু কথাও শোনতে হয়।তো আমার মনে হয় নতুন প্রজন্মের লেখক বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জও বটে। একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সুবিধা পায় না পাশাপাশি প্রশংসার যে বিষয়টা থেকে তারা বঞ্চিত হয় এবং সামাজিক যে সমর্থন সেটিও ঠিকঠাক পায় না। তাই আমার মনে হয় এই বিষয়গুলোতে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র যদি আরো একটু মনোযোগী হয় তাহলে নারীদের লেখাটা আরো সুদূরপ্রসারী হবে, সমৃদ্ধ হবে। আমার মনে করি নারীরা একটি বিষয় যেমন গভীর ভাবে অনুধাবন করতে পারে পুরুষরা সেভাবে পারে না।
প্রশ্ন: আপনাকে ধন্যবাদ
নাহার কবির: আপনাদেরও ধন্যবাদ।