রংপুরে চালু হয়েছে সিটি বাস সার্ভিস। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর সিও বাজারে বিআরটিসির দুটি বাস চালুর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান সিটি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।
এ সময় পুলিশ কমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, রংপুরে সিটি বাস সার্ভিস মহানগরবাসীর অত্যাবশ্যকীয় অংশ। বাস পরিবহনে শুধু অর্থ আয় দেখলে হবে না। সেইসঙ্গে সেবাটিও নিশ্চিত করতে হবে। হাইওয়ে সড়কে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ইজি বাইক চার্জার রিকশা বা অটো চলাচল নিষিদ্ধ। তবুও মেট্রোপলিটন পুলিশ সহনীয় আচরণ করছে। আমরা প্রথম পর্যায়ে সিটি সার্ভিস চালু করেছি এখন গ্রাহকদের চাহিদা ও ভালোবাসায় এটি স্থায়ী রূপ নেবে। এখন দুটি বাস দিয়ে সিটি সার্ভিস চালু করা হলেও পর্যায়ক্রমে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন, মটর মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন, বিআরটিএ ও বিআরটিসিসহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মহানগরের উন্নয়ন করতে চাই। সেবার মান বাড়াতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সিটি বাস চলাচলে অন্য কোনো পরিবহনের ক্ষতি হবে না বলেও জানান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ( ট্রাফিক) মেনহাজুল আলমের সভাপতিত্বে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সায়ফুজ্জামান ফারুকী ও উৎপল কুমার পাল, বিআরটিএ রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস, বিআরটিসি রংপুর ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) সুলতান আলম, মটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আফতাব উজ জামান লিপন, মটর শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা ও বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক এমএ মজিদসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
বিআরটিসি রংপুর ডিপো সূত্রে জানা গেছে, সিটি বাস সার্ভিস নগরীর সিও বাজার, মেডিকেল মোড়, বাস টার্মিনাল, শাপলা, তাজহাট ও সাতমাথা রুটে চলাচল করবে। এসব স্থানে টিকিট কাউন্টার থাকবে ও যাত্রী ওঠানামা করবে। সীমিত টিকেট মূল্যে যাত্রীরা এই সেবা গ্রহণ করবেন। সিটি বাসে ৪৫ জন যাত্রী বসতে পারবেন।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ টিকেট, প্রতিবন্ধী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে। পরে অতিথিরা ফিতা কেটে সিটি বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন। মূলত রংপুর মহানগরীতে যানজট নিরসনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। সিটি বাস সার্ভিসের সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ১০ টাকা। পর্যায়ক্রমে বাসের সংখ্যা বাড়বে বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২০ মে রংপুর মহানগরীতে বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস চলাচল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তবে সিটি বাস সার্ভিস বলা হলেও বাস চারটি নগরীর মূল সড়কের বাইরে বাইপাস সড়ক দিয়ে পাগলাপীর-পীরগঞ্জ রুটে চলাচল করছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন-বিআরটিসি রংপুর বাস ডিপোর ম্যানেজার (অপারেশন) সুলতান আলম জানান, রংপুর মহানগরীতে চলাচলের জন্য আজ (সোমবার) আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি বাস চালু করা হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা বাড়লে প্রয়োজনে আরও বাস বাড়ানো যাবে। তবে এটি প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, মটর মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। এর আগে ২০১৯ সালে পাগলাপীর থেকে পীরগঞ্জ রুটে চলাচল সার্ভিস শুরু করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই রুটে চারটি ডাবল ডেকার বাস চলাচল করছে।
এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালে ২০৫ দশমিক ৭০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেশের ১০ম সিটি করপোরেশন হিসেবে রংপুরের পথচলা শুরু। এখন রসিকের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সিটি করপোরেশন ছাড়াও গত ১২ বছরে রংপুর জেলা থেকে বিভাগ, বিভাগ থেকে মেট্রোপলিটন এলাকা হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। ফলে নগরকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সিটি কর্পোরেশন হওয়ার এত বছরে নাগরিক জীবনে লাগেনি পরিবর্তনের ছোঁয়া। অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা একমাত্র বাহন হওয়ায় নগরে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে তীব্র যানজটের। চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের অক্টোবরে রংপুর নগরীর যানজট নিরসনে সিটি বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান।
এই ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তিন চাকার ব্যাটারিচালিত মালিক ও চালকরা। সিটি বাস চালুর সিদ্ধান্ত বাতিলসহ অটোরিকশা ও চার্জার অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর রংপুর নগরীতে বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধসহ অনশন কর্মসূচি পালন করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ও মালিকরা। অবরোধ চলাকালে একটি বাসও ভাঙচুর করে তারা। অবশেষে সম্মিলিত উদ্যোগে দীর্ঘদিন পর আবারও সিটি বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় আনন্দিত নগরবাসী। কেউ কেউ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সঙ্গে বলছেন পরিকল্পিত সেবা নিশ্চিত করা না গেলে এই উদ্যোগ ব্যর্থ হবে।
নগরীর খামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের শুরু থেকেই সিটি বাস সার্ভিস শুরু করা দরকার ছিল। এখন শহরে ইজিবাইক আর রিকশা এমন অবস্থা যে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা নেই। যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ ৩০ মিনিটেও পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে না। অনেক দেরিতে হলেও সিটি বাস সার্ভিস চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এই বাস সার্ভিস যদি পরিকল্পিতভাবে দেওয়া যায় তাহলে নগরীর মানুষের সময় ও খরচ কমবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর জেলা সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে এ রকম সিটি বাস সার্ভিসের জন্য উদ্বোধন করা হলেও বিভিন্ন অজুহাতে সেই সেবা চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পরে রুট পরিবর্তন করে শুধু পাগলাপীর-পীরগঞ্জ রুটে ওই বাসগুলো চলাচল করছে। এবার ৪ বছর পর সিটি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে নগরবাসীর জন্য ভালো। তবে, আগের মতোই যেন এই সেবা উদ্বোধন আর পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ না থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইকের লাগাম টানাসহ সঠিক পরিকল্পনা সিটি বাস সার্ভিস বাস্তবায়ন করতে হবে।