মুহা. ইকবাল আজাদ, ঢাকা।
গত ২১ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে নিজেদের নাম জুড়ে দিলেন তামিম-লিটন। ওপেনিং জুটিতে বর্তমানে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ তামিম এবং লিটনের। ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭০ রানের লম্বা পার্টনারশিপ গড়েন শাহরিয়ার হোসেন এবং মেহরাব হোসেন। গত দুই দশক ধরে এটাই ছিলো বাংলাদেশের ওপেনিং পার্টনারশিপ। আজ ১৭০ রান টপকে নিজেদের শীর্ষে তুলেন তামিম এবং লিটন দাস। এতেই পরিবর্তন করেন গত ২১ বছর আগের দৃশ্যপট।
বাংলাদেশের দলের ওপেনিং জুটি গত কয়েক বছরে চিন্তার বাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিডল অর্ডার ভালো করলেই টপ অর্ডার যাচ্ছেতাই আচরণ করে যাচ্ছিলো। ওপেনিং তামিম ছাড়া স্থায়ী হতে পারছেন না কেউই। অভিষেকের পর থেকে তামিম সঙ্গী পাল্টিয়েছেন দশের অধিক। তাতেও দুর্দিন থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না বিসিবি। গত বিশ্বকাপের ওপেনিং জুটি ছিলো সবচেয়ে ভঙ্গুর প্রকৃতির। ৫০ রানের জুটি পেরুতে যেন কান্না জুড়ে দিতো ওপেনিং দুই ব্যাটসম্যান। তাতেও বড় জুটি গড়তে পারেনি দুই ওপেনার।
লিটন দাস বিশ্বকাপে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। উইন্ডিজের বিপক্ষে করেছেন ৯৪ রানের জড়ো ইনিংস। বিয়ের জন্য খেলা হয়নি শ্রীলঙ্কা সিরিজ। গত বিশ্বকাপের পর এটাই লিটনের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচে তুলেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক রান আউট। তৃতীয় ম্যাচে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। বলা যেতেই পারে, বিশ্বকাপের পর থেকে একই ফর্মে যেন জিম্বাবুয়ে সিরিজ শুরু করেছেন লিটন দাস।
বিপিএলে অসাধারণ খেলেছেন তামিম-লিটন। শীর্ষ পাঁচেই ছিলো দুজনের নাম। কয়েক বছর আগের লিটন আর বর্তমান লিটন পুরো বিপরীত। প্রশ্ন ছিলো, কীসের ফলে লিটনের এমন পরিবর্তন? ‘বিয়েই নাকি লিটনকে এতটা পাল্টেছে।’ বিপিএলের সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানিয়েছেন স্বয়ং লিটন দাস। বিয়ের আগে ১টা সেঞ্চুরির মালিক, বিয়ের পর ৩টা পুরেছেন ক্যারিয়ারের থলেতে। ভক্তরা মজা করে বলতেই পারেন, বিয়ে থেকে যদি হয় ভালো কিছু, তবে বিয়েই ভালো।
শুধু লিটন নন, অনেকটা পাল্টে গেছেন তামিমও। সিরিজের প্রথম ম্যাচে কিংবা এই সিরিজের আগের ম্যাচে যেমন তামিমকে দেখা গেছে। বর্তমান তামিমের প্রত্যাবর্তন ঠিক উল্টো প্রকৃতির। আগের মতো খুব ডট খেলছেন না তামিম ইকবাল, খেললেও বাউন্ডারিতে রান বলের সমতা রেখেছেন। পাশাপাশি ঠিকই লম্বা ইনিংস খেলেছেন। গত ম্যাচে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ শতক আদায় করে নিয়েছেন। তামিমের এমন পরিবর্তন অবশ্য বিয়ে থেকে নয়। তার আত্মবিশ্বাস থেকে। আত্মবিশ্বাসের জোরেই নাকি বহুদিন পরে দেড় শতকের ইনিংস হাঁকিয়েছেন। নিজেই নিজের রেকর্ড নতুন করে গড়েছেন। দল জিতিয়েছেন। অর্জন করেছেন ম্যাচের সর্বোচ্চ পুরষ্কার।
তামিম-লিটনরা পাল্টালেই, পাল্টে যাবে ক্রিকেটের ধারা। উন্নতি হবে বাংলার ক্রিকেট সংস্করণেও। সাফল্য ধরা দিবে নিয়মিত। শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নয়, তামিমদের ধারা অব্যাহত থাকুক বাকি দলগুলোর সাথে। কয়েক দশকের রেকর্ড ছিন্ন হোক তাদের ব্যাটের ছোঁয়ায়। ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক উন্নতির চিত্রেও। এমন প্রতীক্ষা প্রত্যাশা, আর অনেক কিছু আত্মত্যাগ করে ক্রিকেট দেখতে প্রতিটি ক্রিকেট ভক্ত।