মোঃ শিবলী সাদিক, রাজশাহী।
প্রায় এক বছর ধরে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পূণার্ঙ্গ ভিসি নাই। নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলতি দায়িত্বে সাধারণ ক্যাটাগরির একজন শিক্ষককে ভিসি পদে বসানো হয়।
গত বছরের ৩ আগস্ট রুয়েটের অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ ফ্যাকাল্টির ডিন ও পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে এ দায়িত্ব দেওয়ার পর তিনিও গত ২৯ মে পদত্যাগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে।
এরপর রুয়েটের ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয় রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন। তবে তাঁকেও চলতি দায়িত্ব দেওয়ায় তিনিও দৈনন্দিন কাজের বাইরে কোনো কাজ করতে পারছেন না। এতে রুয়েটের শিক্ষা ব্যবস্থা যেন হুমকির মুখে পড়েছে।
অনেক বিভাগের প্রধান না থাকায় পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না। আবার শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষা দিতে না পারায় গত শনিবার রুয়েটের ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভও করেছেন ভোগান্তির শিকার শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, ভিসি না থাকায় বিল উত্তোলন করতে না পেরে রুয়েটের চলমান উন্নয়ন কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে গত ছয় মাস ধরে। ঠিকাদার কাজ করেও টাকা না পাওয়ায় পড়েছেন দুর্ভোগে।
রুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যিনি উপাচার্য রয়েছেন তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত। রেগুলার কাজের বাইরে তিনি কিছুই করতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিন্ডিকেট মিটিং ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংও তিনি করতে পারেন না। ফলে শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকে আছে। বেশ কয়েকটি বিভাগের প্রধান না থাকায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আটকে আছে। অ্যাকাডেমিক সভা করতে না পারার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়েছি। শিক্ষাসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য পাইনি। এটি দীর্ঘায়িত হলে আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নাই। যার কারণে এখানে অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে আছে। নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অতিসত্ত্বর আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য দরকার। কিন্তু বার বার দেওয়া হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি। এতে জটিলতা আরও বাড়ছে।’
রুয়েট সূত্র মতে, গত বছরের ৩০ জুলাই সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম শেখের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে চলতি দায়িত্ব হিসেবে ভিসির পদ অপর্ণ করা হয়। ভিসির দায়িত্ব দেওয়া ওই চিঠিতে সাজ্জাদ হোসেনকে শুধুমাত্র রুয়েটের দৈনিন্দন ও আর্থিক কর্মকাÐ পরিচালনার সার্থে সাময়িকভাবে ভিসির দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়।
২০০৩ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ বিধিতে উল্লেখ রয়েছে, চ্যান্সেলর প্রকৌশল শাখা ও গবেষণার সহিত সম্পৃক্ত একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশল শিক্ষাবিদকে চার বছরের জন্য ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ দান করিবেন। কিন্তু এ নিয়মে সস্পষ্ট লঙ্ঘন করে রুয়েটের ভিসি হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেনকে ভিসির চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। যিনি কোনোভাবেই প্রকৌশলী ছিলেন না। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর রুয়েটে যেন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৯ মে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সাজ্জাদ হোসেন। তাঁর পর চলতি দায়িত্ব হিসেবে ভিসি পদে বসানো হয় রেজিস্ট্রার সেলিম হোসেনকে। তিনিও দৈনিন্দন কাজের বাইরে কোনো কাজ করতে পারছেন না। এতে করে রুয়েটে সৃষ্ট সমস্যা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের অনেকেরই এক বছর আগে সেমিস্টার শেষ হয়েছে। কিন্তু বিভাগের প্রধান না থাকায় পরীক্ষা নিতে পারছেন না শিক্ষকরা। এতে করে শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বেকায়দায়। শিক্ষক পদোন্নতি দিয়ে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়া বা দায়িত্ব দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না বর্তমান ভিসি। ফলে আটকে আছে পরীক্ষা কার্যক্রমও। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা।
এদিকে, রুয়েটে চলমান প্রায় ৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজও থমকে আছে ঠিকাদাররা তাদের কাজের বিল উত্তোলন করতে না পারায়। নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদাররা যে পরিমাণ কাজ করবেন, তার বিল পরিশোধ করতে হয় কয়েকটি ভাগে। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে ঠিকাদাররা কোনো বিল উত্তোলন করতে পারেননি ভিসি না থাকায়। এতে করে এ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ, ছাত্রী হল নির্মাণসহ ১০টি বৃহৎ উন্নয়ন কাজও থমকে গেছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।
রুয়েটে কাজ পাওয়া খান অ্যান্ড সন্সের ঠিকাদার সেলিম হোসেন বলেন, ‘কাজ করে টাকা না পেলে কিভাবে কাজ করবো? এমনিতেই নির্মাণ সামগ্রির দাম আকাশচুম্বি। এর ওপর কাজ করেও ঠিকমতো টাকা না পাওয়ায় রুয়েটের কাজ প্রায় বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমার মতো অন্য ঠিকাদাররাও কাজ প্রায় বন্ধ করে বসে আছেন।’
জানতে চাইলে রুয়েটের চলতি দায়িত্বের ভিসি ও রেজিষ্ট্রার সেলিম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, আমি সেটি পালন করছি। এর বাইরে আমার কিছুই করার নাই। তবে ভিসি নিয়োগ হলে রুয়েটের কাজে গতি আসবে। শিক্ষার্থীদের সমস্যাও লাঘব হবে।