ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৯ জুনe ২০২৫
  1. সর্বশেষ

ছোট গল্প: ফুল পরী

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৯ অক্টোবর ২০১৯, ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

শায়লা আর আমি বসে আছি টিএসসির মোড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ-তরুণীদের জন্য প্রেম করার যতগুলো জায়গা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে টিএসসির মোড় অন্যতম।
সকাল ১১ টা ৩৫ মিনিট। কিন্তু সূর্য দেখে তা বোঝার উপায় নেই। আকাশটা কেমন গুমোট হয়ে আছে। রোদ-বৃষ্টি কোনোটারই স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। প্রকৃতি কেমন যেন দিকভ্রান্ত। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্তও বটে। এ সময়টা প্রেম করার জন্য খুব জুতসই।
শায়লা আর আমি দুজনেই একে অন্যের খুব ভালো বন্ধু। একে অন্যের অ্যাসাইনমেন্ট করে দেয়া, দুপুরে খেয়েছে কি না, রাতে সময় মতো বাড়ি ফিরলো কি না, ইত্যাদি জিজ্ঞেস করা সবই হতো আমাদের মধ্যে। আমার প্রায়ই মনে হয়, আমাদের সম্পর্কটা কি শুধুই বন্ধুত্ব, নাকি অন্য কিছু। প্রতিদিন রাতে ঠিক করি পরদিন শায়লাকে বলে দেব আমার মনের কথা। কিন্তু বলি বলি করেও আর বলা হয় না। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি। যদি ওই না করে দেয়। প্রেম তো যাবেই, সাথে বন্ধুত্বটাও।
আজ ঠিক করেছি, যেভাবেই হোক শায়লাকে বলে দেব। সব বলে দেব। আমার এত দিনের সম্পর্ক, যত্ন নেয়া এগুলো কিছুই বন্ধুত্ব ছিলো না। আমি প্রথম থেকেই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। ওই যা ভাবে ভাবুক, আমি আর নির্ঘুম রাত কাটাতে পারবো না, ব্যাস।
সময় গড়িয়ে দুপুর হতে চলছে। চারপাশে মোটামুটি একটা মৃদু শোরগোল পড়েছে। অসংখ্য ছেলেমেয়ে একসাথে বসে চা খাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে। কোনটা কাপল আবার কোনটা বন্ধুত্বের জটলা। কাপলগুলোকে দেখে আমার বেশ হিংসাই হচ্ছে। এরা কি সুন্দর করে প্রেম করছে, আর আমি কি না।
আমি উশখুশ করছি। কিছুক্ষণ পর পর হাত কচলাচ্ছি। কী বলবো, কীভাবে বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। শায়লা একহাতে চা খাচ্ছে আরেক হাতে ফোন টিপছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে, কিন্তু কিছু বলছে না। আমি শঙ্কিত হলাম। কিছুক্ষণ পরই বারোটা বাজবে। আর শায়লা আমার প্রেমের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে পড়বে। আমি সুবোধ বালকের মতো তাকে রিক্সায় তুলে দেব। আর আমার না বলা কথা না বলাই রয়ে যাবে। গত কয়েক মাস ধরে এমনই চলে আসছে কোনো ব্যতিক্রম নেই।
আমার বুক ধড়ফড় করছে। ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, খুঁজছি ব্যতিক্রম কিছু যদি পেয়ে যাই। যদি আজকের ঘটনাটা ব্যতিক্রমভাবে শেষ করা যায়।
হঠাৎ সে আসলো। আমার দুর্ভিক্ষ পীড়িত জীবনে সে এক ভালোবাসার বাহক হয়ে এলো। বাম দিকে বসা কাপলটার পাশে দেখলাম ওকে। মেয়েটা তিন কি চার বৎসরের হবে। শাড়ি পড়েছে। এত ছোট্ট একটা মেয়েকে শাড়িতে কেমন আজব আজব লাগছে। আবার সুন্দরও লাগছে। মেয়েটির হাতে কিছু গোলাপ ভর্তি একটা আধ-পুরোনো ঝুড়ি। মেয়েটা যেখানেই একজোড়া ছেলেমেয়ে বসে থাকতে দেখছে, সেখানে গিয়েই ফুল সাধছে। মেয়েটা মলিন মুখে এর-ওর কাছে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ ফুল নিচ্ছে না। কেউবা উপর্যুপরি দু’একটা ধমকও দিচ্ছে, প্রেমালাপে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য।
এখনকার প্রেমগুলো কেমন যেন হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টের দামি খাবারের নিচে, শপিং কিংবা গিফটের বক্সের ভেতর আটকা পড়ে গেছে। এযুগের প্রেমগুলো আর এক প্লেট ফুচকা কিংবা একটা ফুটন্ত গোলাপে ধারণ করা যায় না। প্রেমগুলো মোবাইল ফোনের বাক্সের ভেতর শুরু হয়, আর বাক্সের ভেতরেই শেষ হয়।
আমি এক নয়নে মেয়েটির ফুল বিক্রি দেখছি আর ভাবছি, একটা চারবছর বয়সের বাচ্চা মেয়ে ফুল বিক্রি করছে। অথচ ও নিজেই তো একটা ফুল। মস্ত বড় একটা ফুল। এই ফুলের তো কোনো ফুল বাগানে থাকা উচিত। সুন্দর কোনো বিদ্যালয়ে। ভাবতেই বুকটা বেদনায় ভরে যায়। যে মেয়েটির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে, সেই মেয়েটার জীবন কতো নির্মম, মানবেতর এবং অধিকার বঞ্চিত। যে মেয়েটা দুমুঠো খাবারের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিগলি প্রতিদিন চষে বেড়ায়, সে মেয়েটাই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশ শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেড়ে উঠেও সে নিরক্ষর। দারিদ্র্যতার অভিশাপে তার জীবন জর্জরিত। দেখার কেউ নেই। শোনার মতো কেউ নেই।
আমরা সদা সর্বদা ব্যস্ত কেবল উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে। তাইতো, আমরা শিক্ষিত, মার্জিত, অতি সুসভ্য প্রাণী। এই দরিদ্র সমাজের আমাদের বসবাস কি মানান সই?
হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পেলাম। শায়লা উঠে দাঁড়িয়ে আছে। ও চলে যাবে। আমার কী হলো জানি না। ওর হাত ধরলাম। ওকে অনেকটা জোর করেই আমার পাশে বসিয়ে দিলাম। ও কিছু বলছে না। শুধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে পাড়ছি ওই মারাত্মক রকমের অবাক হয়েছে। আমার সাহস বেড়ে গেল। আমি ফুলবিক্রেতা মেয়েটিকে ডাকলাম। কাছে আসতেই ওর ঝুড়ির সবগুলো ফুল মুঠোয় নিয়ে শায়লার সামনে ধরলাম। আস্তে করে বললাম, তোমাকে ভালোবাসি। শুরু থেকেই।
চারদিকে এখনো আগের মতোই শোরগোল পড়ে আছে। কেউ আমাদের দিকে বিন্দুমাত্র দৃষ্টিপাত করছে না। যে যার মতো ব্যস্ত। তারপরও বুঝতে পারছি দুইটা মেয়ের চার জোড়া চোখ আমার দিকে অবাক নয়নে চেয়ে আছে। শায়লা উঠে দাঁড়াল। আমি বাধা দিলাম না, রিক্সাও ডেকে দিলাম না। ও একাই চলে গেল।

শায়লা আর আমার বিয়ে হয়েছে ছয় মাস হলো। আমাদের নিসন্তান সংসারে সেই ফুল বিক্রেতা মেয়েটিই একমাত্র ফুল। বিয়ের পর শায়লা যখন জানতে পারলো আমাদের কোনো সন্তান হবে না। ও সেই ফুল বিক্রেতা মেয়েটিকে খুঁজে এনেছে। ও মেয়েটার নাম রেখেছে পরী। আমাদের ফুলপরী। প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরলে মা-মেয়ের অন্তত দুটো গোলাপ চাই-ই চাই।

লেখক: সিয়াম আহমেদ, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

432 Views

আরও পড়ুন

নাফনদীতে জেলের ছদ্মবেশে মাদক পাচারকালে১লাখ২০হাজার ইয়াবাসহ দুই মিয়ানমার নাগরিক আটক

সন্ধান মিলছে না মাদ্রাসা শিক্ষার্থী লাবিবের

বরকলে বাহাদুর খাঁন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইছালে ছাওয়াব মাহফিল

মৌলভীবাজার জামায়াতের সাবেক আমীরের ইন্তিকালে ডা. শফিকুর রহমানের শোকবার্তা

জার্মানিতে বেড়েছে ইসলামবিদ্বেষ

বাংলাদেশ স্কাউটস চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক সমাজ উন্নয়ন ওয়ার্কশপ সম্পন্ন

নিজেস্ব অর্থায়নে জবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ারের পানির ফিল্টার স্থাপন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চায় জামায়াত

প্রতিরোধের ক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে ইসরায়েলের

মহানবী (সা.) এর জীবদ্দশায় যে পরাশক্তির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল (পারস্য) ‘ইরান’

এইচএসসি পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ২০২৫ : ইতিহাস ১ম পত্র

পলাশে গলা কেটে হত্যা ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩