স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন সেটাই, যেটা পূরণের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। এ. পি. জে আবুল কালামের এই বাণী এক সূত্রে বাঁধতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে।চ্যাম্পিয়ন হবার আকাঙ্ক্ষা,আসক্তি,স্পৃহা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম।চিন্তার ভাঁজে ভাঁজে থাকুক বিজয়ের নিশানা, রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিরা উপশিরায় মিশে যাক বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা। প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্বপ্ন জুড়ে যদি বিজয়ের অমৃত স্বাদ বাসা বাঁধে,তবে শিরোপা উঁচিয়ে না ধরা পর্যন্ত ক্ষান্ত নেই।
স্বপ্ন পূরণের জন্য অবশ্যই থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য। লক্ষ্যটা স্বপ্নের মধ্যে নির্ধারণ করা উচিৎ যেন স্বপ্ন পূরণের তাড়না লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে দেয়। গন্তব্য ছাড়া কখনোই সফলতার সোপানে আরোহণ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের লক্ষ্য ও স্বপ্ন এক সূত্রে গাঁথা। লক্ষ্যের দিকে মৃদু মৃদু পায়ে হেঁটে যেতে যেতে যেন দেখা হয় স্বপ্নের, উঁচিয়ে ধরা যায় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।
ছোট ছোট সাফল্যে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর না তুলে বরং ক্ষুধার্ত হলে বড় সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।বাঘ যদি অল্পতেই তৃপ্ত হয়ে যায় তার পক্ষে শিকার করা দুঃসাধ্য হয়ে যাবে কিন্তু বাঘ যখন ক্ষুধার্ত হয়ে যায় তখন যেকোন মূল্যে শিকার করবেই। বাংলাদেশ দলকে অবশ্যই ক্ষুধার্ত হতে হবে যে তৃপ্তি মিটবে একমাত্র শিরোপা উল্লাসে।
সেমি ফাইনাল কিংবা ফাইনালিস্ট হওয়াতেই যদি পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিহিত হয় তবে হয়তো শিরোপা খরা ঘুচবে না কয়েক যুগেও।
যশোরের অদম্য তামান্না আক্তার নুরা। জন্ম থেকেই দুই হাত ও একটি পা নেই তার। সব বাধা পেরিয়ে বাম পা দিয়ে লিখে তামান্না মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। সব পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পড়ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বলা হয় ‘ওয়ান্স অ্যা সোলজার, অলওয়েজ অ্যা সোলজার’, একজন সৈনিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সৈনিক। আর এ কথাটিই যেন অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ দিলেন নেপালের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হরি বুধামাগার। কৃত্রিম পায়ে ভর করে তিনি জয় করেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট, সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। এই উদাহরণ গুলো স্পষ্ট করে বিজয়ের তাড়না কিভাবে সফলতার পথ সুগম করে।
নিজেদের সীমাবদ্ধ, সক্ষমতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকা দরকার বিজয়ের তাড়না।মাইন্ড গেমে প্রতিপক্ষকে এগিয়ে দিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে হারার আগে হেরে যেতে হয়। প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য মুখ্য জয়ের পথে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন সোনালী সময় পার করছে। ইতিহাস স্মরণীয় করে রাখার জন্য অর্জনের বিকল্প রাস্তা নেই।অর্জন ছাড়া স্বীকৃতি মিলবে না, হারিয়ে যেতে হবে কালের পরিক্রমায়।ঠিক সেই লাইনের মত পদার্পণ শেষে ভুলে যায় সবাই উদ্ধারকারীর কথা তাই পদচারণা শেষে পদচিহ্ন এঁকে যেতে হবে।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের দল। গুছানো পরিপাটি ক্রিকেট খেলছে প্রায় এক দশক ধরে। ঘরের মাঠে সর্বশেষ ১৭ সিরিজের ১৫ টি রেখেছে নিজেদের প্রাপ্তির ঝুলিতে। প্রতিপক্ষের কবর রচনা করে নিজেদের শাণিত করেছে বারংবার।২০১৫ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল বাংলাদেশের সামর্থ্যের কথা বলে। বাংলাদেশের চোখ ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ শিরোপায়, এশিয়ার কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।
তবে বিশ্বকাপের আগেই নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ এশিয়া কাপে। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ
বাংলাদেশের জন্য এসিড টেস্ট ও বটে। সফলতার স্কেলে ফলাফল অনেকটাই বুঝা যাবে কি হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের মঞ্চে।এশিয়া কাপের তিনবারের রানার্সআপ বাংলাদেশ এবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারাটা বিশ্বকাপের ফলাফল নির্ধারণে সহায়ক হবে। চাঙ্গা মনোবল যেকোন বড় দলের বিরুদ্ধে হেসে খেলে জিততে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশকে সফলতা পাবার জন্য ম্যাচ বাই বাই ম্যাচ এখানে হবে। প্রতিটি ম্যাচের জন্য আলাদা পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এশিয়া কাপের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে বিশ্বকাপ ভাগ্য।তাই এশিয়া কাপের প্রতিটি ম্যাচ অগ্নি পরীক্ষা। ঠিক যেন বিজয়ের পথে ছোটা বালকের মত পিছনে মরণ ফাঁদ একটাই পথ খোলা সব বাধা টপকে সামনে গিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের সামনে একটা পথ খোলা রেখে আগাতে হবে চ্যাম্পিয়ন হবার জন্য।সকল দেয়াল ভেঙে বিজয়ের নিশান উড়াতে হবে।এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন তকমাটা বিশ্বকাপের আগে বড়সড় প্রভাব ফেলবে। খেলোয়াড়দের মানসিকতা চ্যাম্পিয়নদের মত হবে, তাদের ভাবনাটাও চ্যাম্পিয়ন, বিজেতার মত উন্নত হবে। কাউকে সমীহ করবে না সমানে সমানে টক্কর দিতে প্রস্তুত থাকবে। পাশাপাশি নিজেদের অর্জনের খাতায় যুক্ত হবে একটা আন্তর্জাতিক শিরোপা।পুরো দলকে জাগিয়ে তুলতে,টিম স্পিরিট বাড়াতে এশিয়া কাপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
লেখক: জুবায়েদ মোস্তফা
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল:zobayed.mustafa@gmail.com