স্টাফ রিপোর্টারঃ
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় জমিয়তের অপরাংশের নেতা এম আব্দুল হাফিজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দিরাই আদালতের বিজ্ঞ আমলগ্রহণকারী আদালত এ আদেশ প্রদান করেন। এসময় হত্যা মামলায় এম আব্দুল হাফিজ পাঠানের ফাঁসির দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে জমিয়তের বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিলে মেতে পরে। এর আগে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে সিলেট নগরী থেকে আব্দুল হাফিজকে
গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে দিরাই আদালতের বিচারক সাফায়েত সালামের আদালতে তাকে সোপর্দ করা হলে, আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। ঐদিন গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার রিমান্ড শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করেন।
গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত হতে মাওলানা মুশতাক আহমদ নিখোঁজ হলে বুধবার বিকেলে মাওলানা মুশতাক আহমদের স্ত্রী রুবি বেগম তাঁর স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে
শান্তিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
রুবি বেগম বলেন,মঙ্গলবার রাত দশটা একান্ন মিনিটে ফোনে সর্বশেষ তার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে বাড়ীতে আসছি, এটাই ছিল লাস্ট কথা। এরপর সারারাত ফোন দিলেও তার ফোনে কল যায় নি।
এদিনই মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর সন্ধান চেয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন দলের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। পুলিশ ওইদিন জানিয়েছিল, মঙ্গলবার রাত ১১ টায় সর্বশেষ মাওলানা মুশতাককে দিরাই রাস্তা মোড়ে দেখা গেছে। সিসি ক্যামেরা থেকে বের হওয়ার পরে উনাকে আর পাওয়া যায় নি।
নিখোঁজের ৩ দিন পর শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের ইটভাটা সংলগ্ন পুরাতন সুরমা নদী থেকে মাওলানা মুশতাক আহমদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঐদিনই বিক্ষোভে শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ শহরে জমিয়তের কর্মী সমর্থকেরা রাস্তায় নামেন। এসময় সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে।
শনিবার দুপুরে মাওলানা মুশতাক আহমদ এর
খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবীত জেলার সবকয়টি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও বিকালে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন জমিয়ত নেতৃবৃন্দ সহ কর্মী-সমর্থকেরা। এসময় তারা খুনির সন্ধানে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। রবিবার বিকালে ঘটনার মোটিভ উদ্ধারে সুনামগঞ্জ সিলেট মহাসড়কের দিরাই রাস্তামোড়ে "ব্লকেড" কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুদ্বরা। এসময় সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ প্রায় ২ ঘন্টা বন্ধ ছিল। বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে সড়কে। "ব্লকেড" কর্মসূচী পালনকালে বক্তারা সোমবার সূর্যাস্তের পূর্বে খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবী উত্থাপন করেন।
রবিবার রাতে মুশতাক আহমদের স্ত্রী রুবি বেগম জমিয়তের অপরাংশের (ওয়াক্কাস গ্রুপ) শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুল হাফিজের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঐরাতেই ভোরে সিলেট নগরী থেকে আব্দুল হাফিজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আব্দুল হাফিজ সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, কেন্দ্রীয় জমিয়তের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ তালহা আলমের ব্যক্তিগত সহকারী এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলা জমিয়তের ওই অংশের সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ী উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের দরগাপুর গ্রামে।অন্যদিকে মাওলানা মুশতাক আহমদ জমিয়তের অন্য গ্রুপের (ক্বাসেমী গ্রুপ) সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরীর সমর্থক ও একই গ্রামের বাসিন্দা।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুক আলম ও অ্যাডভোকেট শেরেনুর আলী বলেন, মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর হত্যা মামলায় আব্দুল হাফিজের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কে দীর্ঘ শুনানি অন্তে বিজ্ঞ আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আমরা বিশ্বাস করি পুলিশ,নিবিড়ভাবে ও আন্তরিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আব্দুল হাফিজের কাছ থেকে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করতে পারবে। এর পেছনে কোন রাজনৈতিক দ্বন্ধ কিংবা পূর্ব পরিকল্পিত আছে কিনা বা কারা জড়িত আছে তা বের হয়ে আসবে। বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর সহ বাদীপক্ষে আমরা শতাধিক আইনজীবি উপস্হিত ছিলাম। ইনশাআল্লাহ,আমাদের জয় হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০