পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ইচ্ছা করে না এমন পাবলিক খুজে পাওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেই কি উপায় হয়?চান্স পাওয়া নেহাত সহজ নয়।কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায়,ধৈর্যের পথ পাড়ি দিয়ে পৌছাঁতে হয় গন্তঁব্যে। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এক মহাযুদ্ধে অবতরণ করে। দীর্ঘ ৪-৫ মাস বইয়ের সাথে,কলমের সাথে,টেবিলের সাথে এক ধারাঁলো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়।কেউ কেউ আবার ফুলের পাপড়ির মতো মাটিতে ঝরে পরে। যৌবনটা আর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো হয় না।বইয়ের সাথে মনের রসায়ন না ঘটলে চান্স পাওয়া যে একেবারে সহজ নয়।
নিজের সেরাটা দিয়ে অনেকেই যখন পাবলিকিয়ান হয়ে যায় আনন্দে আপ্লুত হওয়াটা স্বাভাবিক হয়ে দ্বারায় । বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর আকাঙ্খা থেকেই যায় ভালো একটা সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা।সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের লোকপ্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তেমনেই একটা সাবজেক্ট।আর এসব সাবজেক্টে চান্স পেতে হলে ভালো সিরিয়ালেও থাকতে হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর স্বপ্ন জেগে ওঠে বিসিএস ক্যাডার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া অনেক গুলো বিষয় নির্ভর করে। পিএইচডি হোল্ডারের প্রায়োরিটি, নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ঢাবি,জাবি,রাবি,চবির শিক্ষার্থীদের প্রতি তুলনামূলক আগ্রহ পোষণ করে ভাইভা বোর্ড,পলিটিক্স ইন্টারফেয়ারসহ আরও অনেক কিছু। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার সম্ভবনা ০%। সবগুলো মিলে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের টার্গেট থাকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন যে বিসিএস ক্যাডার হওয়া মানে সোনার হরিণ পাওয়া কিংবা এভারেস্ট জয় করা।
যে কোনো বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাশ করা শিক্ষার্থী বিসিএসে অংশ নিতে পারে। বর্তমানে ১৪টি সাধারণ ও ১২টি টেকনিক্যালসহ মোট ২৬ টি ক্যাডার রয়েছে। ৪০তম বিসিএসে আবেদন করেছিল ৪ লাখ১২ হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী।পিএসসিতে এতো বিপুল সংখ্যক পরিক্ষার্থী আবেদনের রেকর্ড করেছিল। টেকনিক্যাল ক্যাডারে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইনসহ আরও কতোগুলো সাবজেক্ট আছে সেগুলো ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে পারে না।মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য যদি স্বাস্থ্য ক্যাডার, আইন বিষয়ের স্টুডেন্ট ছাড়া যদি জজ হওয়া না যায় তাহলে শুধু লোক প্রশাসনের জন্য কেন এডমিন ক্যাডার নয়?
গত ৪০ তম বিসিএসে ১ হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হয়।পরিক্ষার ফলাফলে দেখা যায়,পররাষ্ট্র ক্যাডারের জন্য ২৫ জন চূড়ান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জনই ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার। ১৩ জনই ইঞ্জিনিয়ার তারমধ্যে ১০ জনই বুয়েটের আর ৭ জন ডাক্তার। প্রশ্ন হচ্ছে -বিসিএস এর এই পররাষ্ট্র ক্যাডারে ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ারদের যেতে হয় তাহলে তারা এতবছর বসে মেডিকেল কেনো পড়েছেন?কেনো প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন?এসব ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তাররা যেহেতু মেধাবী এবং মেধার প্রমাণ ইতিমধ্যে রেখেছেন তারা পররাষ্ট্র ক্যাডারের মতো লুক্রেটিভ ক্যাডারে কেন যাবেন না?এসব ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়াররা দেশের রত্ন ও আমাদের সম্পদ।আমরা চাই তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করুক,দেশের সম্মান নিয়ে আসুক,সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরুক।একজন ডাক্তার যখন পিজির ল্যাবে বসে Mp3 পরে আজ থেকে ১৫-২০ বছর পর ভাল ডাক্তার খুজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমার বিশ্বাস, বিসিএসের পিছে না ছুটে যদি নিখুঁত গবেষণা করে তাহলে আমাদের আর মাদ্রাজ কিংবা সিঙ্গাপুর যেতে হবে না।এবার আসি বুয়েটসহ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে।আপনারা অত্যন্ত মেধাবী । ৩৮ তম বিসিএস পরিক্ষায় সাধারণ ক্যাডারের ১৩২০ জন ইঞ্জিনিয়ার সাধারণ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে কিংবা টপকে জায়গা করে নিয়েছেন।আপনারা যেখানে হাত দিবেন সেখানেই সোনা ফলার সম্ভাবনা আছে।আপনারা যদি ফরেন বা প্রশাসনে যান তাহলে মাইক্রোসফট, গুগল ফেসবুক,আমাজন,আলিবাবা এসব প্রতিষ্ঠানে কারা যাবে??যতটা মনে পরে, ১২তম বিসিএস ছিল বিশেষ পুলিশ ক্যাডার এবং সেখানে নাকি সবাই কৃষিবিদ।কৃষিবিদরা হয়েছে পুলিশ অফিসার।
এবার আসি শিক্ষা ক্যাডার নিয়ে,গত ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হয় ৮০০ জনকে।আবার ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের পদ সংখ্যা ৮৯২ জন। যখন চারুকারু কলা,লোক সঙ্গীত,রবীন্দ্র সঙ্গীত,নজরুল সঙ্গীত ইত্যাদি থেকে শিক্ষা ক্যাডার হয় দূরভাগ্যজনক ভাবে বলতে হয় লোক প্রশাসনের মতো একটা সাবজেক্টের শিক্ষা ক্যাডার নাই। শিক্ষা ক্যাডার নেই এর কতো গুলো কারন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পাঠদান কর্মসূচি না থাকা, কলেজে লোকপ্রশাসন সাবজেক্ট অনুপস্থিতি । যদি সরকার এই বিষয়টিকে শিক্ষা ক্যাডারের আওতাভুক্ত করে তাহলে শিক্ষক নিয়োগ,ক্লাস রুমের ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হয় যা একটা
ব্যয় বহুল প্রসেস। কিন্তু যদি রাষ্টবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করে ক্যাডার দেওয়া যায় তাহলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। আমি কোন সাবজেক্টকে ছোট করে দেখছি না।লোকপ্রশাসন এমন একটি সাবজেক্ট যার নামে বাংলাদেশে একটি মন্ত্রণালয় আছে।সেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিতে নিউজ আসে কোন ক্যাডারের জন্য কত গুলো সিট খালি আছে।বিসিএসের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ,মূল্যবান, লোভনীয় সরকারি জবে লোক প্রশাসন অত্যন্ত উপেক্ষিত ও অবহেলিত।নেই শিক্ষা ক্যাডার নেই কোন বিশেষ ক্যাডার।আমি পিএসসি ও জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সবিনয়ে বলতে চাই,লোক প্রশাসন বিভাগকে শিক্ষা কাডারের অন্তর্ভুক্ত করা হক নতুবা এডমিন কাডার দেওয়া হক।
শিক্ষার্থী
মোঃমমিনুর রহমান
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।