সালেক সম্রাট : আজ ২৮ ডিসেম্বর—কবি, গবেষক, ইতিহাসবিদ ও সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মী ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দের জন্মদিন। গবেষণা ও সৃজনশীল সাহিত্যচর্চায় দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলা এই মনীষী বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।
ইতিহাস গবেষণায় বিশেষত আরাকান ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে ড. আখন্দ বাংলাদেশের পথিকৃৎ গবেষকদের একজন। রোহিঙ্গা ও আরাকান বিষয়কে কেন্দ্র করেই তিনি এম.ফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর রচিত ‘আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাস’ এবং ‘রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থদুটি এ বিষয়ে গবেষণাক্ষেত্রে ‘মাস্টারপিস’ হিসেবে বিবেচিত। ইতোমধ্যে তাঁর রচিত ৮টি গবেষণা গ্রন্থ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গবেষণার পাশাপাশি তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান কবি, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক। শিশুদের ভাষা, কৌতূহল ও কোমল মনের অনুভব তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেন। সেই অনুভব থেকেই তিনি রচনা করেছেন ছড়া, কবিতা, গল্প ও গান। শিশুসাহিত্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘জলজ রাজার দেশে’, ‘জ্বীনের বাড়ি ভূতের হাঁড়ি’। এছাড়া ‘স্বপ্ন দেখি মানুষ হবার’, ‘ধনচে ফুলের নাও’, ‘মামদো ভূতের ছাও’, ‘জ্বীন পরী আর ভূতোং’—শিশু-কিশোরদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছড়াগ্রন্থ। সম্প্রতি কৈশোর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘সংস্কারক শরীয়তুল্লাহ’ শীর্ষক কিশোর উপযোগী জীবনীগ্রন্থটি পাঠকমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
বড়দের সাহিত্যচর্চাতেও সমানভাবে সক্রিয় ড. আখন্দ। কবিতা, ছড়া, গান ও প্রবন্ধে তাঁর স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর লক্ষণীয়। ‘লাল জুলাইয়ের প্রেম’, ‘প্রেম কিনেছি হৃদয় দামে’, ‘উজান পাখির চোখ’, ‘চৌকো ফুলের ঘ্রাণ’, ‘মনটা অবুঝ পাখি’, ‘জীবন নদীর কাব্য’, ‘তোমার চোখে হরিণমায়া’, ‘গুমর হলো ফাঁস’, ‘স্বপ্নফুলে আগুন’, ‘ছড়ামাইট’, ‘হৃদয় বাঁশির সুর’—এসব গ্রন্থ কবিতা ও গানের ভুবনে তাঁর উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
তিনি ‘কবিতা’, ‘মোহনা’, ‘শব্দকলা’ ও ‘সিঁড়ি’—এই চারটি সাহিত্য পত্রিকার সফল সম্পাদক। সাহিত্য ও সম্পাদনার ভেতর দিয়ে তিনি একটি পরিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। তাঁর বক্তৃতা ও উপস্থাপনাও শ্রোতামহলে সমাদৃত। ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবে তরুণ প্রজন্মের কাছেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
গাইবান্ধা জেলায় জন্ম হলেও দেশজ সংস্কৃতির সন্ধানে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রাম থেকে শহরে। স্কুল, মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের কারণে অর্জন করেছেন বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা। সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছাড়াও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তিনি সক্রিয়। পশ্চিমবঙ্গসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাভাষী লেখক-পাঠকদের কাছেও তিনি সমানভাবে সমাদৃত।
ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ বর্তমানে কবিতা বাংলাদেশ–এর সাধারণ সম্পাদক, পরিচয় সংস্কৃতি সংসদ–এর সভাপতি এবং শব্দকলা পত্রিকার সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ ইতিহাস একাডেমি, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ ও ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দের জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।