———
ফারুক আজম :
প্রসূতি ও স্ত্রী রোগে বিশেষজ্ঞ বলে হোসনে আরার বিশাল সাইনবোর্ড
কক্সবাজরের চকরিয়ার উপজেলার বদরখালী বাজারের পল্লী চিকিৎসক হোসেন আরা’র ভুল চিকিৎসায় নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী জানায়, মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাপুয়া গ্রামের বাসিন্দা জিয়াবুল কবিরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর প্রসবকালীন ব্যথা উঠলে ১২ই জানুয়ারী শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বদরখালী বাজারে পল্লী চিকিৎসক হোসনে আরার কাছে নিয়ে যায়।ওখানে নিয়ে যাওয়ার পরেও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সব কিছুই স্বাভাবিক ছিল।
আলট্রাসনোর প্রতিবেদন ছিল পজেটিভ,গর্ভে বাচ্চার নড়াচড়াও স্বাভাবিক ছিল বলে জানান তার পরিবার।পল্লী চিকিৎসকের অবহেলায় গর্ভে নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী তাঁর পরিবারের।
নবজাতক শিশুর চাচা রেজাউল করিম জানান–আমার ভাবির প্রসবকালীন ব্যথা শুরু হলে সকাল ১১ টার দিকে আমরা থাকে নিয়ে বদরখালী বাজারে পল্লী চিকিৎসক হোসনে আরা’র কাছে যায়।আসার পর রোগীকে দেখে বিভিন্ন ঔষধ দিয়ে বসিয়ে রাখে।এইভাবে সময় অতিবাহিত হলে আমি বারংবার ডাক্তারকে না পারলে আমাদের অন্যত্র রেফার করার আবেদন করি। কিন্তু তিনি আমাদের কোন সমস্যা হবে না এবং নরমাল ডেলিভারি হবে বলে আশ্বস্ত করেন।এভাবে সন্ধ্যা হয়ে গেলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাৎক্ষণিক পল্লী চিকিৎসক হোসনে আরা সহ চকরিয়া সেন্টার হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করা হয় ততক্ষণে নবজাত শিশুর মৃত্যু হয়।
ডাক্তাররা বলেন-ডেলিভারির অনেক পূর্বে নবজাত শিশুর মৃত্যু ঘটে। পল্লী চিকিৎসক হোসনে আরা আমার বাবার কাছে হাতজোড় করে স্বীকার করেন। এ সময় তিনি আমাদের আইনের দ্বারস্থ না হওয়ার জন্য হাত জোড় করে অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে জানতে পল্লী চিকিৎসক হোসনে আরার সাথে যোগাযোগের জন্য তার চেম্বারে গেলে চেম্বার
বন্ধ পাওয়াতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়।মুঠোফোনে বিষয়টি বললে তিনি ডেলিভারির কথাটি অস্বীকার করে বলেন, আমি হোমিও চিকিৎসা করাই। ইতিপূর্বে মানুষের বাড়িতে- বাড়িতে গিয়ে ধাঁত্রী হিসেবে ডেলিভারি করাইতাম।
গতকালের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন,অনেকে হাসপাতালে ডেলিভারি করাচ্ছে,ওদের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম রয়েছে,ওদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই কেন?আর আমার একটা দোষ পাইলে তা পাই পাই করে লিখছেন। আমার কি কোন ডেলিভারি রোগি দেখার জায়েজ নাই? তিনি প্রতিবেদককে কিছু লিখলে মামলার হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেন।
প্রভাষক লেখার বিষয়টি জানতে চাইলে,তিনি ঈদগাহ এম ইসলাম হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের প্রভাষক দাবি করেন।
উল্লেখ্য যে,বছর খানেক আগে বদরখালী বাজারের হাসপাতাল রোডে রেহেনা ও হোসনে আরার ‘সেই ডেলিভারি সেন্টারে’ অভিযান চালিয়েছিলেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোভন দত্ত। এ সময় তিনি হোসনে আরার ডেলিভারি সেন্টার সিলগালা করে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
সরজমিনে দেখা যায়-একটি পাকা ভবনের ছোট ছোট তিনটি কক্ষ। তিন কক্ষে ছয়টি শয্যা। কক্ষের বাইরে সাইনবোর্ড। তাতে লেখা, ‘রেহেনা বেগম, ডেলিভারি, চেকআপ ও ধাত্রীবিদ্যায় অভিজ্ঞ’। পাশের আরেকটি পাকা ভবনের আরো তিনটি কক্ষ। সেখানেও একটি সাইনবোর্ডে লেখা, ‘ডা. হোসনে আরা বেগম, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগে অভিজ্ঞ’। চিকিৎসা বিদ্যায় কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তাঁরা দিব্যি অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের চিকিৎসা করে আসছিলেন।তাঁরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে আসছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুভন দত্ত জানান,এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি,অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।