ঢাকামঙ্গলবার , ৫ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

মা দিবস এবং আমাদের সন্তানেরা !

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৮ মে ২০২৩, ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

-মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী।

“নিজের নামে সম্পত্তি লিখে দিতে মা-বাবাসহ ভাইকে মারধর করেছেন ছেলে মঞ্জুর মোর্শেদ। এমন বেপরোয়া আচরণের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তার মা আমেনা বেগম। গতকাল ( ১৫মে’২৩ ) সোমবার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম কামরুন নাহার রুমির আদালতে এ মামলা দায়ের করা হলে অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত ছেলেসহ তিন জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি করা হয়” {সূত্রঃ দৈ/ পূর্ব দেশ, ১৬ মে’২৩}। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, বাদী আমেনা বেগমের স্বামী তার বেপরোয়া সন্তান মঞ্জুর মোর্শেদকে (মামলার আসামি) সম্পত্তি না দিলে তাঁর স্বামী এবং অন্য ছেলেকে মারধর করে। গত ১২ মে আনুমানিক রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ ঘটনায় ঘটায় আসামি। এর আগেও জোরপূর্বক সম্পত্তি লিখে নিতে বাপকে মারধর করলে আসামির পিতা ওই ছেলের বিরুদ্ধে সিআর মামলা ৩৫২/২৩ দায়ের করেন। যা তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। মামলার শুনানি শেষে আদালত বাদীনির ২০০ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলা আমলে নিয়ে আসামি সানজিদ, মঞ্জুর মোর্শেদ ও জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

গত ১৪ মে’২৩ ছিল মা দিবস এবং আমরা খুব ঘটা করেই মা দিবস উদযাপন করেছি। সেদিন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় মা’কে নিয়ে স্নেহ ভালবাসা শ্রদ্ধা মায়া মমতা নিয়ে বিভিন্ন আবেগঘণ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামেও মা’কে নিয়ে প্রশংসা স্তুতি হৈ হোল্লোড় কম হয়নি। খাবার খাওয়ার ছবি বাইরে ঘুরতে যাওয়াসহ বিভিন্ন হালনাগাদ এবং স্মৃতি নিয়ে কত আবেগ অনুভূতি শ্রদ্ধা ভালবাসা প্রকাশের কোথাও যেন কোন কমতি ছিল না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় পৃথিবীর তাবৎ মা ও বাবারা সন্তানদের অন্তরজুড়ে রয়েছে। তাঁদের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা অবসানের জন্যে চেষ্টা আন্তরিকতা দায়িত্ববোধের যেন কোনো কমতি নেই। এমন যদি হতো তাহলে মা আমেনা বেগমদের তাঁদের সুসন্তানদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রুজু করতে যেতে হতো না। উপরের ঘটনাটি মা ও বাবা নির্যাতনের কোনো একক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং মা ও বাবা নির্যাতনের একটি ছোট উদাহারণ মাত্র।

প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও মা ও বাবারা নির্যাতিত হচ্ছেন। কয়েক মাস আগে হযরত মিসকিন শাহ মাজার মসজিদের প্রধান এবং বৃদ্ধ মুয়াজ্জিন সাহেবও তাঁদের সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু কি নির্যাতন ? সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারার জন্যে মৃত পিতার লাশ দাফন না করে সালিশ বিচার বাসানো হয়েছে। কয়েক বছর আগে ঢাকায় এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ চার দিন ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে এলাকাবাসী পুলিশের সহায়তায় লাশ ফ্রিজার গাড়িতে সংরক্ষণ করে পরে দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সন্তানেরা কত নিষ্ঠুর নির্মম বর্বর হলে এমন অমানবিক মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটে। সম্পত্তির জন্যে সন্তানদের এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড আমাদেরকে শঙ্কিত এবং হতবিহ্বল করে তোলে। সন্তানদের ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই নিজের সর্বস্ব এবং স্নেহ মায়া মমতা আদর ভালবাসা দিয়ে প্রচুর আত্মত্যাগ করে বাবা ও মায়েরা সন্তানদেরকে মানুষ হিসেবে করে গড়ে তোলে। অসুখে বিসুখে রাত জেগে নিঃস্বার্থভাবে সেবা শশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। অনেক মা ও বাবা অভাব অনটনের সংসারে কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যে সন্তানদেরকে শিক্ষিত করে তোলে। নিজেদের সুখ সখ আহ্লাদ ত্যাগ করে সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যস্ত থাকে মা ও বাবারা। অথচ বৃদ্ধ বয়সে এসে মা ও বাবাকে সুখে শান্তিতে রাখা দূরে থাক তাঁদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে। করে নির্যাতন এবং অবিচার। এমন কি অনেককেই দু’বেলা দু’মুটো খেতে দেয়না। পাশাপাশি অনেক মা ও বাবার সন্তানদের ঘরে স্থান হয় না। তাঁদের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। মা ও বাবাদের আত্ম ত্যাগ স্নেহ মমতা তাঁদের পাথরের মতো হৃদয়কে স্পর্শ করেনা। তাঁদের সেবা যত্ন তাঁদের মনে মা ও বাবার প্রতি সহানুভূতি জাগ্রত করেনা। ইসলামে পিতা মাতার প্রতি সন্তানদের সুন্দর ব্যবহার করার তাগিদ দেয়া হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটিও বল না, তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল- হে প্রভু, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩ ও ২৪)। কোরআন ও হাদিসের আলোকে মা-বাবার প্রতি সন্তানের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো হল- ১. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করা। ২. সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা। ৩. তাদের সুখ-শান্তির জন্য আমাদের ধনসম্পদ ব্যয় করা। ৪. তাদের সঙ্গে বিনম্রভাবে চলাফেরা করা। ৬. যে কোনো বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা। ৭. তাদের সঙ্গে কর্কশ ও বিশ্রী বাক্যে কথা না বলা। ৮. পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের জন্য আল্লাহতায়ার কাছে মাগফিরাতের দোয়া করা। তাদের ঋণ পরিশোধ করা। তাদের ওসিয়তগুলো পূর্ণ করা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, মা দিবস একটা নিছক আনুষ্ঠানিকতার ফ্রেমে আমরা বন্দী করে ফেলেছি। একটা বিশেষ দিবসে নয় ৩৬৫ দিনই হোক আমাদের মা দিবস। যদি তা হয় তাহলে আমেনা বেগমদের সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা করতে হবে না। বৃদ্ধ বয়সে মা ও বাবাদের বৃদ্ধাশ্রমে স্থান হবেনা। মনে রাখা উচিৎ মা ও বাবাদের প্রতি সন্তানদের অবহেলা অন্যায় আচরণ কর্কশ ব্যবহার এবং নির্যাতনে আল্লাহ্‌র আরশ কেঁপে উঠে। জন্ম নেয়ার পর থেকে যারা সন্তানদের আদর যত্ন করে একটা সফল অস্তিত্বে উপনীত করছেন, যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেছেন তাঁদের প্রতি আমাদের যত্নবান এবং সহনশীল হওয়া নৈতিক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য।

922 Views

আরও পড়ুন

বুক রিভিউ:সময়ের ছবি ‘নীরব কোলাহল’

মৌলভীবাজারে সোনার বাংলা আদর্শ ক্লাবের ৬ষ্ঠ মেধা যাচাই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

হাওরের জনপদ এখন উচ্চশিক্ষায় আরো এগিয়ে যাবে–ড. মোঃ আবু নঈম শেখ

রাবিতে গ্রীন ভয়েস এর নেতৃত্বে মাহিন-সিরাজুল

ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় মনিরকে

নাইক্ষ্যংছড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার !!

আগামী দিনের রাজনীতি হবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার রাজনীতি: নাজমুল মোস্তফা আমিন

নাটোরে অস্ত্রসহ আওয়ামীলীগ নেতা ও তার সহযোগী আটক

দুর্লভ নিদর্শনে সমৃদ্ধ এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর

রাবিতে ছাত্র উপদেষ্টার আহবানে গাছ থেকে পেরেক অপসারণ

শান্তিগঞ্জে জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে র‍্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

শান্তিগঞ্জে কিশোর কন্ঠ মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত