ঢাকারবিবার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ছাত্র রাজনীতি

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

……………….

রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে আমরা সেসব মনোভাব, বিশ্বাস, অনুভূতি ও মূল্যবোধকে বুঝি যা মানুষের রাজৈনতিক আচরণ ও মূল্যবোধকে নিয়ন্ত্রণ করে।
বিষয়টি আরো সহজে এভাবে বলা যায়,একটি দেশের রাজনৈতিক দল গঠন থেকে শুরু করে নির্বাচন ব্যবস্থা, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সমন্বয়, সহনশীলতা, বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধা, সহিষ্ণুতা,গনতান্ত্রিক চর্চা ইত্যাদি বিষয় মিলেই গড়ে ওঠে সেদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের রাজৈনতিক সংস্কৃতি অতীতে খুব একটা ভাল অবস্থানে ছিল কিংবা বর্তমানে ভাল অবস্থানে আছে তা বলা যায় না।
বাংলাদেশের রাজৈনতিক সংস্কৃতির নষ্ট বীজ রোপিত হয়েছিল স্বাধীনতারপর ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। বলতে গেলে সেই থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের রাজনীতি বা রাজৈনতিক সংস্কৃতি কোন একটা সুস্থির অবস্থানে দীর্ঘদিন দাড়াতে পারে নি। ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ও দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরাতে জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক দল যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলেছিল এর পর থেকে সেই রাজনৈতিক ঐক্য আর চোখে পড়ছে না। বর্তমানে একে অপরের উপর দোষ চাপানো, পাল্টাপাল্টি বাদানুবাদ, ক্ষমতার লিপ্সা, লেজুরবৃত্তির রাজনীতি, সরকারের এক বিভাগের উপর অপর বিভাগের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের রাজৈনতিক সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাড়িয়েছে। যার দরুন আমরা জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে পারছি না এবং সাধারণ মানুষ ও রাজৈনতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেড়েই চলছে। ২০১৯ সালের শুরুর দিতে যখন মাদক চোরাচালান ও মাদক সেবনের উপর ব্যাপক ধরপাকড় চলছিল তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি এন পি) ঘোষনা দিয়েছিল যে তারা মাদক পরিক্ষার পরই কাউকে তাদের দলের নতুন সদস্য হিসাবে অন্তভূক্ত করবেন। নিঃসন্দেহে উদ্যোগটি ভাল ছিল। কিন্তু, এ উদ্যোগ নিয়েও টকশোতে অনেকেই টিপ্পনী কাটতে দেখেছি। আবার দেশ থেকে দূর্নীতি ও ক্যাসিনো ব্যবসা নির্মূলের জন্য অনেক ভাল অভিযান আমরা লক্ষ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে চাঁদাবাজির অভিযোগে অপসারণ করেছে এবং দূনীর্তির বিরুদ্ধে কোন প্রকার ছাড় না দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। তাছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা পরিকল্পনা করেছেন যে আদর্শবান নেতাকর্মী যোগাড়ের স্বার্থে প্রয়োজসন তারা পরিক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থান করবেন। এ সব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশাংসার দাবিদার। কিন্তু, অনেকেই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগীতা তো করছেই না উল্টো বাজে সমালোচনা নিয়ে পড়ে আছে। যার দরুন দেশে যেমন আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠছে না পাশাপাশি, আমরা বৈদেশিক কূটনীতিকে ও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারছি না। এবার আসা যাক ছাত্ররাজনীতির প্রসঙ্গে। ছাত্র রাজনীতি মূলত ছাত্রদের কল্যাণের ছাত্রের রাজনীতি। রাজনীতির হাতে খড়ি বা রাজৈনতিক সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ শুরু হয় ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ তম সমাবর্তনে রাজনৈতিক বিকাশের জন্য ছাত্ররাজনীতি কেন এবং কতটা জরুরি তা মহামান্য রাষ্ট্রপতি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। যে কোন বিষয়ে জ্ঞানের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা থাকাটাও জরুরি। আর অভিজ্ঞতা আসে সরাসরি কাজের মধ্য দিয়ে।ভবিষ্যতে রাজনীতি করবে এমন কেউ যদি ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক চর্চা করে তবে তার মাঝে অন্তত রাজৈনতিক পরিস্থিতি ও উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত থাকে। সে নেতৃত্ব দানের গুনাবলি অর্জন করতে পারে। আর যারা হঠাৎ করে রাজনীতিতে নিজেকে যুক্ত করে, অভিজ্ঞতার অভাবে তারা অনেক স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে উদ্ভুত সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে না। এ জন্যই হয়তো মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাত্র অবস্থায় রাজনৈতিক চর্চার গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে এখানে আদর্শ থাকাটা জরুরি। যা বর্তমানে ছাত্র রাজনীতিতে নেই বললেই চলে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান এমনকি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্র রাজনীতি তথা ছাত্র সমাজের যে ভূমিকা ছিল, বর্তমান ছাত্র রাজনীতির সাথে এর ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান । তখন ছাত্ররা রাজনীতি করত ছাত্রদের কল্যাণে, জাতীয় স্বার্থে। কিন্তু, বর্তমানে ছাত্র রাজনীতিতে অনেকটা তোষামোদ, লেজুরবৃত্তি আর দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এরকম ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের কল্যাণের পাশাপাশি অকল্যাণও বয়ে আনছে অনেক। যার প্রমাণ আছে ভুরিভুরি।২০০১-২০০৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি এন পি),জামাত ক্ষমতায় থাকা কালীন যেমন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কতৃক বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রগকাটা ও গোলাগুলি নিত্যদিনের
ঘটনা ছিল তেমনি আওয়ামী লীগের গত দশ বছরের ক্ষমতায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়। ছাত্র সংগঠন গুলোর এসব সংঘর্ষের পিছনে মূলত ক্যাম্পাসে নেতা কর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, হলে সিট দখল নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এসব বিষয়কে প্রাথমিক কারন বলে মনে করা হয়। এজন্য অতীতে যেমন ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি-না এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বর্তমানে ও হচ্ছে। সর্বশেষ বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার পর ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত কি-না এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের ঘোষনা দিয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত আছে। তবে আমি মনে করি, মাথা ব্যথার জন্য আমাদের মাথা কেটে ফেলার দরকার নেই বরং দরকার সুচিকিৎসা ও সর্তকতা। তেমনি বর্তমান পরিপেক্ষিতে হঠাৎ করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে বরং ছাত্ররাজনীতিকে একটা সঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। দলীয় ও লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে। সঠিক ছাত্ররাজনীতি পরিচর্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো
নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে পারে। তবেই ছাত্ররাজনীতি তথা বাংলাদেশের রাজৈনতিক সংস্কৃতিকে আদর্শের পথে ধাপিত করা সম্ভব। আর তা না হলে ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই সাধন করবে বেশি আর জার্মান রাজনীতিবিদ ওত্তোভান বিসমার্কের সেই উক্তি “রাজনীতি মানুষের চরিত্রকে খারাপ করে দেয়” যুগ যুগ ধরে এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রমাণিত হয়ে থাকবে।

————–
আরিফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী,
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

549 Views

আরও পড়ুন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ

বোয়ালখালীর নব যোগদানকৃত শিক্ষা অফিসার হারুন উর রশীদকে বরণ

জামালপুরে মৃত আইনজীবী হলেন অতিরিক্ত জিপি

তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদ্রাসা, সাইনবোর্ড শাখার বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

সাইফুল ইসলামের কবিতা : শীতের আমেজ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পাবনার হেমায়েতপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ : নিহত ১

কাপাসিয়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন

কাপাসিয়ায় ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে সিরাতুন্নবী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন

কক্সবাজারের ঈদগাহতে ফুলকুঁড়ি আসরের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

জবিস্থ শরীয়তপুর জেলা ছাত্রকল্যাণের নেতৃত্বে সৌরভ – মনির