রফিকুল ইসলাম জসিম: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী শিক্ষার্থী কান্তা সিনহা ইউরোপের অন্যতম সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ ডেনমার্কের রসকিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় নিষ্ঠাবান ও আত্মপ্রত্যয়ী কান্তা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নিজ উদ্যোগে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। গাইডলাইন ও কোচিংয়ের অভাবে একা নিজ বাড়িতে বসেই প্রস্তুতি নিয়ে তিনি আজ পৌঁছে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
কান্তা সিনহা ডেনমার্কের রসকিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার এই অর্জন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজসহ কমলগঞ্জবাসীর জন্য গর্বের।
শিক্ষাজীবনে ধারাবাহিক সাফল্য রয়েছে কান্তার। তিনি সিলেট ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৯৮ এবং সিলেট ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে সিলেট বোর্ডের মেধাতালিকায় স্থান পান। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন।
শুধু একাডেমিক পড়াশোনাই নয়, আধ্যাত্মিক শিক্ষার দিকেও কান্তা সক্রিয়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)-এর উদ্যোগে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত গীতা পাঠ সেমিনারে অংশগ্রহণ করে তিনি সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন।
কান্তার বাবা কৃষ্ণ কান্ত সিংহ একজন ইতালি প্রবাসী এবং মা একজন গৃহিণী। পরিবারের আর্থিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কান্তার প্রতি তাদের উৎসাহ ও সহানুভূতি ছিল অবিচল। কান্তা জানান, একজন আদর্শবান পিতা হিসেবে তার বাবা তাকে সবসময় বন্ধু ও পথপ্রদর্শকের মতো সাহস দিয়েছেন, যা তার আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
তার ছোট ভাই কিরণ সিংহ ইতোমধ্যে ইতালির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন ক্যাপ্টেন্সিতে পড়ালেখা করছেন এবং ইমিগ্রেশন বিভাগে কাজ করছেন। একই পরিবারে দুই ভাইবোনের এমন সাফল্য কমলগঞ্জ ও বিষ্ণুপ্রিয়া সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
কান্তা সিনহা অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “আজকের এই সাফল্য কেবল আমার একার নয়। আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার বাবার সাহস, উৎসাহ আর নিরন্তর ভালোবাসা আমাকে এই জায়গায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
আমি চাই, আমার পথচলা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক। কেউ যদি বিদেশে পড়াশোনার জন্য পরামর্শ বা সহযোগিতা চায়, আমি সর্বদা উন্মুক্ত।”
কান্তার এই অর্জন আবারও প্রমাণ করে, আত্মপ্রত্যয়, কঠোর পরিশ্রম ও পারিবারিক সহযোগিতা থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। তার এই সাফল্য কমলগঞ্জ এবং বৃহত্তর মণিপুরী সমাজের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।