ঢাকাশুক্রবার , ৩ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রামের সিসিসি নির্বাচন কেমন হওয়া চাই

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৫ জানুয়ারি ২০২১, ১:০১ অপরাহ্ণ

Link Copied!


-জিয়া হাবীব আহ্সান, এডভোকেট

উৎসব মুখর একটি নির্বাচন চাই। যেখানে নারী, পুরুষ, তরুণ ভোটাররা স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে, নির্ভয়ে, বিনা প্রতিবন্ধকতায়, উৎসবমুখর পরিবেশে দিনভর ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। এটাই হলো গণতান্ত্রিক দেশের একটি বৈশিষ্ট্য ।

স্যার উইনস্টন চার্চিলের একটা কথা রয়েছে, ‘বছরের সবগুলো দিন রাজনীতিবিদদের। একটি দিন মানুষের। সেই দিনটি হলো ভোটাধিকার প্রয়োগের দিন।’

সামনে সেই ঐতিহাসিক দিন। এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনটা সম্পূর্ণ ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) হচ্ছে। ইভিএমএ কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এ ছাড়াও এই ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা অস্বস্তি আস্থাহীনতাও রয়েছে। এর কিছু কারণও রয়েছে, এটা একটা যন্ত্র, যন্ত্রটি যারা পরিচালনা করবেন, তাদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকতে হবে । তারা নিরপেক্ষ হতে হবেন । বিগত নির্বাচনগুলোতে তারা সেই আস্থা হারিয়েছেন। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা শঙ্কা ও উদ্বেগ থাকলেও ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাতে হবে। কারণ —

ভোটাররাই হচ্ছেন সিটির প্রকৃত মালিক । ভোট হচ্ছে মালিকানার প্রতিফলন। ভোটাররা সক্রিয় হলেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা ঠিকমত প্রদর্শন করতে না পারলেও ভোটারদের নির্বিকার হলে চলবে না। ভোটধিকার আদায়ের সংগ্রামে নাগরিকের নির্বিকার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

যারা নির্বাচিত হবেন, তারা পাঁচ বছর আমাদের কাজ করবেন। ফলে ভোটাররা যদি ভোট দিতে না যায় কিংবা সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত না করে, তাহলে পরবর্তীতে অভিযোগ করার কোনো অবকাশ থাকবে না। ভোট দেওয়ার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে । মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে আগামীর বাংলাদেশের জন্য।

 

এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনে মোট ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন ভোটার ৭৩৫টি কেন্দ্রের ৪৮৮৬টি বুথে ভোট দেবেন। এর থেকে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটার হস্তানান্তারিত ও মারা যাওয়ায় চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ গেছেন। ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুসারে এবার সিটি ভোটে পুরুষ ভোটার থাকছেন ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। মেয়র পদে ভোট হবে দলীয় প্রতীকে, আর কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয় প্রতীকে। হালনাগাদের আগের তালিকায় থাকা ভোটারদের মধ্যে বেশ বড় একটা অংশ (ভোটাররা) মাইগ্রেট হয়েছেন (হস্তান্তর)। এছাড়া অনেকে মারা গেছেন। মাইগ্রেট ও মৃতদের বাদ দিয়ে এবং হালনাগাদে নতুন ভোটার ৮৫ হাজার ৮৪ জন অন্তর্ভুক্ত করেই এই চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে।” এরমধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় (নির্বাচনী থানা) ১৭ হাজার ৭৫৪ জন, চান্দগাঁও থানায় ১১ হাজার ৪৭৬ জন, কোতোয়ালী থানায় ৯ হাজার ৯৬৭ জন, পাহাড়তলী থানায় ১১ হাজার ৯৫৩ জন, ডবলমুরিং থানায় ১৫ হাজার ৮৫৭ জন এবং বন্দর থানা এলাকায় ১৮ হাজার ৭৭ জন নতুন ভোটার হন। এবার চট্টগ্রাম সিটি ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারণে নতুন ভোটাররা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। নগরীর ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ভোটার ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডে এক লাখ ২৩ হাজার ৭২৪ জন। আর সর্বনিম্ন ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে ১৫ হাজার ২৮৮ জন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে সংশ্লষ্টি ব্যক্তিকে সিটি এলাকার ভোটার, সংশ্লষ্টি ওর্য়াডরে ভোটার এবং বয়স ন্যূনতম ২৫ বছর হতে হয়। ইভিএমে ভোট হওয়ায় উপস্থিতি বাড়ানোর দিকেও নজর রয়েছে ইসির। ভোট হবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত।

 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে এবার ভোটার বেড়েছে প্রায় সোয়া এক লাখ, যাদের অধিকাংশই তরুণ। এই সোয়া লাখ ভোটারই জয়-পরাজয়ে ‘ফ্যাক্টর’ হবেন বলে প্রধান দুই প্রতিদ্বনদ্বী প্রার্থীর সংশ্লষ্টিরা মনে করছেন। সোয়া এক লাখ ‘তরুণ’ ভোটারই মেয়র নির্বাচনের জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন বলে সংশ্লষ্টিদের ধারণা।

 

আর নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থীরা নানা উদ্যোগও নিয়েছেন। দুই মেয়াদে হালনাগাদ হওয়ার পর যারা ভোটার হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নতুন ভোটার এবং তাদের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। যারা গত পাঁচ বছরে নতুন ভোটার হয়েছেন তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত এবং সমাজ-রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন।“তরুণরা সৎ, যোগ্য, আধুনিক মানসিকতা এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেবেন। নগরভবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যক্তির যোগ্যতাও বিবেচনা করবেন তরুণরা।” শুধু মেয়রপ্রার্থী নন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্ষেত্রেও তারা একই বিবেচনা করবেন । তরুণ ভোটারদের চিন্তাকে গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়রপ্রার্থী তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং সেখানে আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধাসম্বলিত ওয়াই-ফাই জোন করার কথা বলেছেন। দুই প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আধুনিক ও উন্নত’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজে ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ই-গর্ভনেন্স, অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীও তাদের ইশতেহারে গুরুত্ব সহকারে আধুনিক এলাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সুবিধা চালু করেছেন। অধিকাংশ প্রার্থী তাদের নির্বাচনী কর্মকা- নিয়ে পৃথক ওয়েবসাইটও খুলেছেন। এছাড়া প্রার্থীরা মোবাইল ফোন থেকে তাদের পক্ষে ভোট চেয়ে এসএমএসও দিচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অঙ্গীকার অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার সবারই রয়েছে। কিন্তু সবার কাছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে সকল বিতর্কের উর্দ্ধে রাখতে সরকারকেই সচেষ্ট হতে হবে । এই কমিশনের ক্ষমতা কম মনে করার কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত ক্ষমতা ইসিকে সংবিধান দিয়েছে। সরকারকে খুশি রাখতে গিয়ে দলীয় ক্ষতি করার কোন কারণ নেই। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও ভালো একটি নির্বাচন ইসি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ইতিহাস হয়ে যাবে। যা আগামী দিনের গণতন্ত্রের জন্য দৃষ্টান্ত হবে। আমাদের সমস্যা অনেক আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর হিংসা-বিদ্বেষ আছে। যুগে যুগে নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু মানুষকে তার গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে।

ভোটারবিহীন হোন্ডা, গুন্ডার ভোট জাতি দেখতে চায় না।

আমাদের দেখা আছে অতীতে বাক্সভর্তি ভোট দেওয়ার পর গণনার সময় দেখা যেত সেই এলাকায় এত ভোট নেই। সেই ভোট আর বাংলাদেশে চায় না।

দেশি-বিদেশিদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে হবে ।

আচরণবিধি কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে হবে ।

মোবাইল কোর্ট ও প্রশাসনকে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে ।

প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা জনগণকে নির্বাচনমুখী করবে, ভোটের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। প্রার্থীদের মধ্যে যেন গায়েবী মামলার আতংক না থাকে, নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রার্থী পরিচিতি ও নির্বাচনী অঙ্গীকার ঘোষণার ব্যবস্থা করতে হবে । মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, উদার গণতান্ত্রিক, উন্নত সমৃদ্ধ গতিশীল এক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে চাই। হানাহানি, রক্তপাত, সংঘাত, আগুন-সন্ত্রাস নয়, সহনশীলতাই আমাদের সামনে রাজনীতির সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা।আজকের বাংলাদেশে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা। এ অর্জনে কোনো একটি দল ভোটের বাইরে থাকলে তাদেরই লোকসান। অনেক সমস্যা ও জটিলতার পরও বাংলাদেশের মানুষ ভোটে সহনশীল পরিবেশ দেখতে চায়। সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। আজ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীগুলো নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে চায়। যাতে জবাবদীহিতামূলক সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে জনগণকে উপহার দেয়া যায়। সিটি কর্পোরেশনের কাজ হল নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা । পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মশা নিধন, রাস্তাঘাট নির্মান, জলবদ্ধতা নিরসন, নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও নির্মাণ ইত্যাদি কাজ ।

আকাশচুম্বী প্রতিশ্রুতিশীল মূলক নির্বাচন হওয়া চায় না, বাস্তবমুখী অঙ্গীকার চাই । আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ভোট দেখতে চাই আজ। জনগণই সিদ্ধান্ত নিক বাংলাদেশের আগামী নিয়ে। জিরো টলারেন্স; সুশাসন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ প্রিয় শব্দগুলো এ নির্বাচনে প্রতিফলিত হোক, এটাই আমাদের অঙ্গীকার ।

লেখকঃ কলামিষ্ট, আইনজীবী, মানবাধিকার ও সুশাসনকর্মী ।

76 Views

আরও পড়ুন

রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টি, সাথে তুমুল বজ্রপাত

চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর নতুন কমিটি

পেকুয়ায় বজ্রপাতে দুই লবণ চাষির মৃত্যু

গাইবান্ধায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার

নওজোয়ানের সংবর্ধনায় চবি ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জনকারী মোবারক হোসাইন

শুধু গরমে গাছের গুরুত্ব নয়, গাছ লাগাতে হবে সারাবছর

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তীব্র তাপদাহে বাড়ছে রোগী : বারান্দা-মেঝেতে একের স্থানে তিন

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দোয়ারাবাজারে ধ’র্ষ’ণের পর কলেজ ছাত্রী খু’ন, খু’নী লিটন আটক!