ঢাকামঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

আস্থা হারাচ্ছে দেশের চিকিৎসা খাত! কেন রোগীরা ছুটছেন ভারতে-সিঙ্গাপুরে?

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৯ এপ্রিল ২০২৪, ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

-মঈনুল হক মঈন

সম্প্রতি সুন্নাতে খাতনা করাতে গিয়ে কয়েকজন শিশুর মৃত্যু নিয়ে মানুষ ভয় পেয়েছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর। তাই ডানপন্থি বামপন্থি সবাই ভারতের দিকে ছুটছেন। সামান্য সুন্নাতে খাতনা করাতেও তারা ছুটছেন মধ্যবিত্তরা ভারতে এবং সামর্থবানরা সিঙ্গাপুরে। ডাক্তাররা ভালো ব্যবহার করে বাংলাদেশীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

আমার একটা ঘটনা বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর। তা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম :

আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগের কথা। আমার সন্তানের কোমরে চিন-চিন পেইন, মাঝে-মধ্যে কোমর থেকে হাটু পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে যায় সেই পেইনটি। বাচ্চার বয়স তখন ১৬ বছর। সিলেটে এক বছরে কুড়ি জন ডাক্তার দেখালাম। সিলেটে ‘রোগটি চিনতে পারলাম না’ সব ডাক্তার একই কথা বলেন। তারা প্রত্যেকেই আবার ফিসটা রেখে রেফার করেন অন্য ডাক্তারের কাছে।

রোগ হওয়ার এক বছর পর সোবহানীঘাটস্হ ইবনে সিনা হাসপাতালের ডাক্তারের চেম্বার থেকে আমার স্ত্রী মোবাইলে কল করে কেঁদে কেঁদে বলেন, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।

আমি ভাবলেশহীন মানুষ। ছিলাম সিলেট মহানগরীর জিন্দাবাজার রাজা মেনশন এর দীর্ঘ ২৫ বছরের ছাপার ব্যবসায়ী। কোনো বিষয়ে বেশি ভাবতাম না। তার কান্নার মাঝে যা বুঝলাম, আজ রোগ ধরা পড়েছে। টেস্ট করায় ১৬ হাজার টাকা লেগেছে।

ইবনে সিনার ডাক্তার বলেছেন, বাংলাদেশে শুধুমাত্র ঢাকার এক জায়গায় অপারেশন হয়। ইন্সপাইনাল কড অর্থাৎ পীঠের হাড্ডি অপারেশন করে ভীতরের নষ্ট পদার্থ বের করে ফেলে দিতে হবে। বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে অপারেশন হয়, তবে উন্নত কোনো দেশে করালে উত্তম হয়।

তারপর ইবনে সিনার ডাক্তারের বর্ণনাকৃত বাংলাদেশের অপারেশনের স্হান ঢাকার একমাত্র নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চারজন মিলে যাই। ডাক্তাররা শুধুমাত্র সিলেট ইবনে সিনার ডাক্তারের কাগজ দেখলেন। তারপর তাদের মূল্যবান সময়টা খরচ না করেই বললেন যে, এখানে ভর্তি হয়ে অন্তত ১৫/১৬ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তারপর অপারেশন।

খরচের কথা জানতে চাইলাম। তারা বললেন, যেহেতু হাসপাতালটি সরকারি, সেহেতু অপারেশনের কোনো খরচ লাগবে না। শুধুমাত্র ৬/৭ লাখ টাকার ঔষধপত্র লাগবে। আমাদের পক্ষে এতদিন থাকাটা অসম্ভব।

আমরা আবারও সিলেট চলে এলাম। ভাবতে লাগলাম কী করা যায়। ইবনে সিনার ডাক্তারের সাথে আবার যোগাযোগ করি। তাকে জিজ্ঞেস করি, সর্বস্ব বিলিয়ে আমরা না হয় অপারেশন করলাম। পুরোপুরি ভালো হবে তো? ডাক্তার বললেন, কোনো উন্নত দেশে করালে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর আমাদের দেশে করালে ৫০% সম্ভাবনা ভালো হওয়ার। এত টাকা খরচ করে ভালো হওয়ার নিশ্চয়তা আবার নেই।

ইবনেসিনার ডাক্তার বললেন, ২ মাসের মধ্যে চিকিৎসা না করালে পা-টি ব্যান্ড হয়ে যাবে। কিন্তু অপারেশন করার পরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।

আমার ইচ্ছা ছিল মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল সিঙ্গাপুরে যাওয়ার। সেখানে ২০০৪ সনে বেড়াতে গিয়েছিলাম। নিজ চোখে দেখে এসেছিলাম সেখানের স্বাস্থ্য সেবার মান। তারা একজন রোগীর যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সময় দেবে, তারপরও রোগ ফাইন্ড আউট করবে। কিন্তু সবার মত না থাকায় আর এগোয়নি।

আমরা যোগাযোগ করি নিউ দিল্লির নিউরো সাইন্স হাসপাতালে। তারা অফার করেন সর্বমোট বাংলাদেশী ১৫ লাখ টাকায় পুরো অপারেশন করে দেবেন। নিউরোসার্জনের ছবি ও যাবতীয় কাগজ পাঠানো হয় আমার ই-মেইলে। আমরা পাসপোর্টসহ আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করি।

ইতিমধ্যে আমার যোগাযোগ হয় জনৈক আমেরিকান বন্ধুর সাথে। তিনি আমার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চান। তিনি আমাকে সেখানকার একজন বিশিষ্ট নিউরো সার্জনের সন্ধান দেন। অতঃপর ডাঃ জামুরানোর সাথে যোগাযোগ হয়। তাঁর হিসাবে বাংলাদেশী প্রায় ১৬ লাখ টাকা অপারেশনের খরচ। তিনি তার পিএস ডিনাইস বাসেলের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তিনিও একজন ডাক্তার। ই-মেইলে আমাদের যোগাযোগ চলছিল।

বন্ধু আরো বললেন যে, ইন্ডিয়ায় গিয়ে ১৫ লাখ খরচের চেয়ে আমেরিকায় ১৬ লাখ টাকা খরচ করা উত্তম। ইন্ডিয়ায় প্রতারণার একটি ভয় আছে, যা আমেরিকায় নেই। আর আমার ম্যানেজার দিলোয়ার ভাই ছিলেন লন্ডন থেকে ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক ডিগ্রিধারী। তাই ই-মেইলে যোগাযোগে আমাদের যোগাযোগে খুব সুবিধা হয়েছিল।

যোগাযোগের এক পযার্য়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেই নিউরোসার্জন ডাঃ জামুরানোর কাছে মিশিগান সিটিতে যাওয়ার। কিছু আত্মীয় স্বজনরাও সাহস দেন। ডিনাইস বাসেল ও আমার বন্ধু ভিসার পাওয়ার জন্য যাবতীয় কাগজপত্র দেন। এরপর আমেরিকান দূতাবাসের এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করি। কিন্তু তারপরও ভিসার আবেদন রিফিউজ হয়।

ইবনে সিনার ডাক্তার বলেছিলেন, দুই মাসে পা ব্যান্ড হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে ডাক্তার দেখানোর পর চলে গেছে আরো দুটি বছর মানে মোট তিন বছর। শুধু পায়ে মাঝে মধ্যে সমস্যা করে। সাহস আমাদের অনেকটা বেড়ে গেল। এরই মধ্যে খবর পেলাম ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতালের এক সিলেটি ডাক্তার মাসে একদিন রোগী দেখেন সোবহানীঘাটে। ইবনে সিনা পয়েন্ট আর উপশহর পয়েন্টের মধ্যখানের একটি ক্লিনিকে। তার এপয়নমেন্ট নিলাম।

তিন বছরের আমাদের কাছে সিলেট ও ঢাকার ৪২ জন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে তিনি হতবাক। তিনি ইবনে সিনার ডাক্তারের একটি রিপোর্ট দেখিয়ে বললেন, এই রিপোর্টই সমস্যার মূল কারন। প্রথম বছরে ২০ জন সবাই অন্যজনের কাছে রেফার করেছেন, বাকী দুই বছরে ২২ জন ভুল ট্রিটমেন্ট করেছেন।

তিনি আমার কাছে ডাক্তার সমাজের পক্ষ থেকে ক্ষমা চান। বললেন, ডাক্তাররা কেউ পেছনে ফিরে তাকাননি। একজন যে ভুল করেছেন, সবাই সেই ভুল পথেই হেটেছেন। অযথাই আপনাদের কষ্ট দিয়েছেন। ভাগ্য ভালো যে, আপনারা এখনো অপারেশন করেননি। অপারেশন করালে সত্যি সর্বনাশ হয়ে যেত।

কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি। এই ঔষধ এক সপ্তাহ খাওয়ার পর প্রয়োজনে আমাকে এই ফোন নাম্বারে আমাকে জানাবেন। ঔষধ ৮০ টাকার কিনে আমরা বাসায় চলে এলাম। এই ঔষধ ব্যবহারের পর আজ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি।

ঢাকা-সিলেট দৌড়াদৌড়ি আর ডাক্তার দেখানো, আমেরিকা এম্বেসির ফিসহ আমাদের তিন বছরে প্রায় তিন লাখ খরচ হয়ে গিয়েছিল চিকিৎসা না করেই। এখন তার আর কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহর রহমতে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে এই ৮০টাকার ঔষধ সেবন করেই।

শিক্ষা :
রোগ যতদিন চিহ্নিত না হবে, ততদিন নতুন ডাক্তারকে কখনও পুরাতন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখাবেন না। তাহলে নিজে মাথা না ঘামিয়ে পুরনো সেই ভুলটাই পূনরায় করবে। কাউকে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেবেন অনেক ভেবে-চিন্তে। শুধু ডাক্তার বললেই আত্মঘাতী এই সিদ্ধান্ত নেবেন না। ডাক্তারের কথায় অপারেশন করালে আমাদের সন্তানটি আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত না।

148 Views

আরও পড়ুন

নাগরপুরে গাছ কাটা কেন্দ্র করে প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২

তীব্র খরায় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে – ডা. অর্ণা জামান।

কুমারখালীতে বিনামূল্যে পানি, শরবত ও ক্যাপ বিতরণ

কবিতা:- নক্ষত্রের রাত

ফেনী শহরের বিভিন্ন স্হানে পানি স্যালাইন বিতরণ করেন শিবির নেতাকর্মী’রা

স্কুল, মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের

সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড

কুষ্টিয়ায় মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই চালক নিহত

রাজশাহীর সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন, ১০ যাত্রী আহত।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৫ জেলার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা।

রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত।