ঢাকাশুক্রবার , ৩ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

পলিথিনের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহার রোধে পরিবেশ আইনের প্রয়োগ

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৪ মে ২০২১, ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

মো. আব্দুল্লাহ আল মিযান

পরিবেশ সুরক্ষায় নিষিদ্ধ পলিথিনের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহার রোধ করা দরকার। আমাদের দেশে একটা সময় ছিল যখন বাজারে গেলে মানুষজন হাতে করে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে যেতেন। কিন্তু আশির দশকে প্রথম বাজারে পলিথিনের ব্যবহার শুরু হয়। এর পর থেকে বাজারে যে ধরনের দোকানেই যান না কেন বিনে পয়সায় পলিথিনের ব্যাগ দেয়া শুরু হল। পলিইথিলিন, যা জনপ্রিয়ভাবে পলিথিন নামে পরিচিত তা আসলে এক ধরনের পলিমার। অপচনশীল এ পদার্থ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। সহজে সকল দোকানে বিনে পয়সায় চাইলেই পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া যায়। পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক পরের দিকে পলিথিন ব্যবহার শুরু করেছে।
কিন্তু তা এতটাই বড় বিপর্যয় ডেকে আনে যে, ব্যবহার শুরুর ১৫ থেকে ২০ বছরের মাথায় ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে এর উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহারকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ সংশোধনের মাধ্যমে যে কোনো প্রকার পলিথিন ব্যাগ অর্থাৎ পলিথাইলিন, পলিপ্রপাইলিন বা উহার কোনো যৌগ বা মিশ্রণের তৈরি কোনো ব্যাগ, ঠোঙা বা যেকোনো ধারক যাহা কোনো সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় বা কোনো কিছু রাখার কাজে বা বহনের কাজে ব্যবহার করা যায় উহাদের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার বিষয়ে বলা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ৬ক ধারা সংযোজনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে। উক্ত আইনের ১৫ ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে। কেউ যদি পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে, তবে তার শাস্তি হবে অনধিক ১০ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ড। আর কোন ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন সামগ্রী বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, গুদামজাত, বিতরণ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে, তবে সে ক্ষেত্রে তার শাস্তি অনধিক এক বছর কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডই প্রযোজ্য হতে পারে। পরিবেশ সংরক্ষণ সংশোধিত ২০১০ সালের আইনের ৭(১) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তির কারণে পরিবেশ বা প্রতিবেশের ক্ষতি হলে সেই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক তা পরিশোধ করতে হবে এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বা উভয় প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুরুর দিকে বেশ কড়াকড়ি হলেও ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায় আইনের প্রয়োগ। আর এখন বাংলাদেশে এটি যে নিষিদ্ধ তার বোঝারই কোন উপায় নেই। পলিথিনের ব্যাবহার রোধের বিষয়টি দেশব্যাপী যে গুরুত্ব হারিয়েছে সেটি বাজারে গেলে বা রাস্তায় সামান্য একটু হাঁটলেই বোঝা যায়। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বজর্য যেখানে সেখানে ফেলে দিলে তা নর্দমায় আটকে গিয়ে পানির প্রবাহে বাধা দেয়। বাড়ীর দরজা থেকে শুরু করে নদী, নালা, ড্রেন সবখানেই মিশে গিয়ে যেন পৃথিবীর শ্বাসরোধ করে ফেলেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী।

এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে মশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। এসবের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ড্রেন ও জমে থাকা দূষিত পানি। পানি সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে পলিথিন এবং এ জাতীয় অন্যান্য প্যাকেট বাধা হয়ে থাকে। দুঃখের বিষয়, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই পলিথিনই এখন বেশুমার ব্যবহৃত হচ্ছে। এ নিয়ে কারো মধ্যে কোনো বিচলন নেই। পলিথিন থেকে সৃষ্ট এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্যান্সার ও ত্বকের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। তাছাড়াও ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগও ছড়াতে পারে। রঙিন পলিথিন জনস্বাস্থ্যের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। এতে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিনের কাপে চা পান করলে আলসার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। পলিথিনের অবৈধ উৎপাদন, আইনের প্রয়োগ না হওয়া, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না হওয়া এবং বিকল্প পন্য ব্যবহারে অভ্যস্থ না হওয়ায় পলিথিনের অবাধ ব্যবহার হচ্ছে। পলিথিন ব্যবহারের কারণে জনজীবন,
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পাটের কদর কমে যাচ্ছে, কমছে পাট চাষ। বন্ধ হচ্ছে পাট দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের কারখানা। বেকার হচ্ছে কুটিরশিল্পের মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। সারা বিশ্বে পাটের চাহিদা বাড়লেও আমাদের অবহেলা ও সচেনতার অভাবে সোনালি আঁশ পাট আজ বিলুপ্তির পথে।
আমাদের এ শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে করতে হবে। ক্ষতিকর পলিথিন থেকে বাঁচতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এবং ব্যাপকভাবে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে হলে আইনের কার্যকর প্রয়োগের পাশাপাশি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙ্গা সহজলভ্য করা ও ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরী। পরিবেশ বাঁচাতে অবশ্যই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাট, কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ উদ্ভাবনেরও বহুল ব্যবহারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ ও বিভাগগুলোকে কার্যকরভাবে উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা রাখা দরকার।

78 Views

আরও পড়ুন

রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টি, সাথে তুমুল বজ্রপাত

চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর নতুন কমিটি

পেকুয়ায় বজ্রপাতে দুই লবণ চাষির মৃত্যু

গাইবান্ধায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার

নওজোয়ানের সংবর্ধনায় চবি ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জনকারী মোবারক হোসাইন

শুধু গরমে গাছের গুরুত্ব নয়, গাছ লাগাতে হবে সারাবছর

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তীব্র তাপদাহে বাড়ছে রোগী : বারান্দা-মেঝেতে একের স্থানে তিন

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দোয়ারাবাজারে ধ’র্ষ’ণের পর কলেজ ছাত্রী খু’ন, খু’নী লিটন আটক!