ঢাকাশুক্রবার , ৩ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

জেনে নিন আপনার যত অধিকার
নিকাহ রেজিষ্ট্রি ও দেনমোহর প্রসঙ্গে-২ : এ এম জিয়া হাবীব আহসান

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৪ জুন ২০২১, ৭:৩০ অপরাহ্ণ

Link Copied!

প্রশ্নঃ স্ত্রী কর্তৃক স্বামী তালাক প্রাপ্ত হলে স্ত্রী কি মোহরানা খোরপোষের টাকা পাবেন?

উত্তরঃ আমাদের দেশে অনেকেরই এ ভুল ধারণাটি রয়েছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীকে স্বেচ্ছায় তালাক দেয় তাহলে স্ত্রী মোহরানা খোরপোষ পাবে না।এটা ঠিক নয়, তালাক যে ভাবেই হোক কিংবা না হোক মোহরানা খোরপোষ স্ত্রীর চরম এবং অবধারিত পাওনা। তাছাড়া ইদ্দতের সময় পর্যন্ত স্ত্রীর ভরনপোষনও স্বামীকে আদায় করে দিতে হয়। স্ত্রীর উপহারের (প্রাপ্ত) স্বর্ণালঙ্কার বাপের বাড়ী নিয়ে গেলে তা চুরি হয় না। বিষয় গুলোর পরিস্কার ধারণা সকলের থাকা দরকার। স্বামী স্ত্রী সহবাস না হলে শরীয়তের বিধান মতে মোহরানা অর্ধেক প্রদেয় ।
প্রশ্নঃ রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া বিয়ে করার পরিণতি কি?

উত্তরঃ বিয়ের রেজিস্ট্রেশন না করলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় । যেমনঃ-
বিয়ের প্রমাণ স্বরূপ কোনো দলিল না থাকলে স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো সময় বিয়ে অস্বীকার করতে পারে, ভরন-পোষণ দাবী করা যায় না, দেনমোহর দাবী করা যায় না, সন্তানদের মাতৃত্ব পিতৃত্ব নির্ণয়ে জটিলতা, সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার বঞ্চিত হতে হয়, কাবিননামায় স্ত্রীর তালাক দেয়ার ক্ষমতা উল্লেখ না হলে আদালতে বিচ্ছেদের মামলা ছাড়া সরাসরি তা প্রয়োগ করা যায় না, নানা রকম বৈবাহিক প্রতারণার শিকার হতে হয়, মামলা মোকাদ্দমায় উদ্ভব ও হয়রানির শিকার হতে হয় ।বাংলাদেশে বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে এটি না করা হলেও বিয়ে অবৈধ হয়ে যায় না। বিয়ে নিবন্ধীকরণ নারী ও শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার একটি নিশ্চয়তা। এটি অনেক অন্যায় ও অসহায়ত্বের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে পারে। দুঃখের বিষয় বিয়ে রেজিষ্ট্রি না হওয়া অনেকেই (প্রায় মহিলারা) নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়। অনেক সময় স্বামীও দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। রেজিষ্ট্রি ছাড়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তার সম্পত্তিতে ভাগ পায় না, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির ন্যায্য ভাগ হতে বঞ্চিত হয় ।

প্রশ্নঃ দেনমোহর কাবিন নামায় নির্ধারণ করা না হলে পরে স্ত্রী তা দাবী করতে পারেন কিনা ?

উত্তরঃ দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা না হলে কিংবা স্ত্রী কোন দেনমোহর দাবী করতে পারবে না মর্মে চুক্তি থাকলেও পরবর্তীতে স্ত্রী যথার্থ বা ‘উপযুক্ত’ দেনমোহরের পরিমান কত হবে তা নির্ভর করবে স্ত্রীর পিতার পরিবারের অন্যান্য মহিলা সদস্যের ক্ষেত্রে, তার পিতার বোনের ক্ষেত্রে দেনমোহর কত ছিল তার উপর ।

প্রশ্নঃ মোহরানা কত প্রকারের?

উত্তরঃ মোহরানা প্রধানত দু’ প্রকারের যথাঃ
ক) তলবি বা মুয়াজ্জেলঃ মোহরানার যে অংশ স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে চাহিবা মাত্র পেতে পারে তাকে তলবি দেনমোহর বলে । স্ত্রী যখন তখন এ মোহরানার দাবী করতে পারেন । এ মোহরানা না পেলে স্ত্রী স্বামীর দৈহিক মিলনে অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারে, সাথে সাথে মিলনের পরেও স্ত্রী এটা দাবী করতে পারে । যৌন মিলনের পুর্বে স্বামী দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা করলে তলবি মোহরানা না দেয়া পর্যন্ত আদালত উহা খারিজ করে দিতে পারেন কিন্তু যৌন মিলন হওয়ার পর আদালত তার মামলা খারিজ করবেন না । স্ত্রীর জন্য এ মোহরানা গুরুত্বপূর্ন। যদি কোন অবিবাহিতা গর্ভবতী মহিলা তার গর্ভ গোপন রেখে বিয়ে করে এবং এ গর্ভ স্বামীর গোচরীভূত হয়, তাহলেও স্ত্রীর তলবী মোহরানার দাবী ক্ষুন্ন হয় না । স্বামী তলবি মোহরানা দিতে অস্বীকার করতে পারে না ।
খ) বিলম্বিত বা মুয়জ্জেলঃ দেনমোহরঃ মোহরানার যে অংশ স্বামী মারা যাওয়ার পর কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্ত্রী পেতে পারে তাকে বিলম্বিত দেনমোহর বলে । বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পূর্বে স্বামী স্ত্রীকে বিলম্বিত মোহরানা দিতে পারে । তবে স্ত্রী এ মোহরানা পাওয়ার জন্য স্বামীকে তলব করতে পারে না বরং স্বামী এ মোহরানা স্ত্রীকে নগদ অর্থ বা অন্য কোন দ্রব্য সামগ্রী দ্বারা পরিশোধ করতে পারে।

প্রশ্নঃ অনাদায়ী দেনমোহরের মামলা কত দিনের মধ্যে করতে হবে ?

উত্তরঃ স্ত্রী তার দেনমোহরের অর্থ না পেলে সে এবং তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা, তার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। দেনমোহর আদায়ের মামলা দায়ের করার সময়সীমা হলো দেনমোহরটি দাবি ও তা প্রদানে অস্বীকৃতির তারিখ থেকে তিন বছর, অথবা যেখানে বিবাহ থাকাকালে এ জাতীয় কোনো দাবিই উপস্থাপিত হয়নি, সেখানে মৃত্যু কিংবা তালাকের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, তখন পর্যন্ত ১৯০৮ সালের তামাদি আইন, তফসিল-১, অনুচ্ছেদ-১০৩ ‘বিলম্বিত’ দেনমোহরটি আদায়ের সময় সীমা হলো মৃত্যু অথবা তালাকের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে ওই তারিখ থেকে তিন বছর [তফসিল-১, অনুচ্ছেদ-১০৪]। স্ত্রী লিখিতভাবে তালাকপ্রাপ্ত হলে, তামাদি আইনের ১০৩ ও ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্ত্রীকে ওই লিখিত তালাক দানের তথ্য বা সংবাদটি অবগত করার তারিখ থেকেই তামাদির সময় শুরু হবে যা আদায়ের দাবিতে মামলা দায়ের করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে।বকেয়া মোহরানার দাবিতে স্ত্রী মৃত স্বামীর সম্পত্তি দখল করে রাখতে পারবেন । উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ওই দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা দেনমোহর পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারবেন। কেননা ইসলামী আইনে দেনমোহরকে দেনা বলে বিবেচনা করা হয়। দেনমোহরের পরিমাণ যত বেশি হোক না কেন, পক্ষগুলোর মধ্যে স্বীকৃত হলে স্বামী তা সম্পূর্ণরূপে স্ত্রীকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। এমনকি স্বামীর আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও আদালত দেনমোহরানার দায় থেকে স্বামীকে মুক্তি দেবে না।
প্রশ্নঃ এক স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় স্ত্রী অন্য স্বামী গ্রহণ করতে পারে কিনা?

উত্তরঃ এক স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় কোন স্ত্রী অন্য কোন স্বামী গ্রহণ করা বেআইনী, এটার অর্থ একাধিক স্বামী এহণ করা। যে স্ত্রী লোকের স্বামী জীবিত রয়েছে এবং যাকে স্বামী তালাক দেয়নি বা বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি তার পুনরায় অন্য কোথাও বিয়ে হলে তা অবৈধ হবে। এ ধরনের বিয়ের ফলে সন্তানও অবৈধ হবে। কোন প্রকার স্বীকৃতির মাধ্যমে এ প্রকার বিয়েকে বিধিসিন্ধ বা বৈধ করা যাবে না। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি দন্ড বিধির ৪৯৩ ধারার মতে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৪৯৪ ধারার মতে যদি কোনো ব্যক্তি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৪৯৫ ধারা মতে যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় প্রথম বা পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন, তা যদি দ্বিতীয় বিবাহিত ব্যক্তি জানতে পারেন, তাহলে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

প্রশ্নঃ বর্তমান স্ত্রীর অনুমোদন / সম্মতি নিয়ে ২য় বিবাহ করা যায় কিনা? এ ধরনের বিবাহ রোজিষ্ট্রিতে কোন বাঁধা আছে কি?

উত্তরঃ একটি বিবাহ বিদ্যমান বা বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি বিবাহ বেআইনী না হলেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ । তবে, পুরুষ এক স্ত্রী বহাল থাকা অবস্থায় সালিশী পরিষদের অনুমতি নিয়ে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে । শরিয়ত এ সংখ্যাকে চার পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছে । অনায়াসেই একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে একথা ঠিক না। ১৯৬১ সনের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিধান মতে সালিশী পরিষদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি না নিয়ে কোন স্বামী একটি বিবাহ বজায় থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করতে পারবে না এবং অনুমতি ছাড়া কোন বিয়ে হলে তা বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন এ্যাক্ট অনুযায়ী রেজিষ্ট্রি করা যাবে না। শুধু মাত্র বর্তমান স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে অন্য বিয়ে করা যাবে না ।এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট তথ্য গোপনকারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অপরাধ আমলে আসবে এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের/ পৌরসভার চেয়ারম্যান অথবা সিটি মেয়র/ পৌর প্রশাসক্‌/ ক্যান্টনম্যান্ট এলাকার জন্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তির নিকট খেকে তথা সালিশী পরিষদ খেকে অনুমতি নিতে হয়। সালিশী পরিষদ বলতে মেয়র/ চেয়ারম্যান এবং পক্ষ সমূহের প্রত্যেকের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত পরিষদকে বুঝায়। এক স্বামী বহাল থাকা অবস্থায় কোন স্ত্রী কখনো আরেক স্বামী নিতে পারে না। কোন নারী বা পুরুষ তালাক দিয়ে ৯০ দিন ইদ্দত পালনের পর স্বাধীন ইচ্ছা মতে স্বামী বা স্ত্রী নিতে পারে ।

লেখক : আইনজীবী, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।

65 Views

আরও পড়ুন

রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টি, সাথে তুমুল বজ্রপাত

চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর নতুন কমিটি

পেকুয়ায় বজ্রপাতে দুই লবণ চাষির মৃত্যু

গাইবান্ধায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার

নওজোয়ানের সংবর্ধনায় চবি ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জনকারী মোবারক হোসাইন

শুধু গরমে গাছের গুরুত্ব নয়, গাছ লাগাতে হবে সারাবছর

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তীব্র তাপদাহে বাড়ছে রোগী : বারান্দা-মেঝেতে একের স্থানে তিন

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দোয়ারাবাজারে ধ’র্ষ’ণের পর কলেজ ছাত্রী খু’ন, খু’নী লিটন আটক!