ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

‘কিংবদন্তী আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌং স্মরণে

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২ আগস্ট ২০২২, ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

অ্যাডভোকেট মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী (বাবু)

কিংবদন্তী বরেণ্য আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্মরণে
পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক গুণী ব্যক্তির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যুগে যুগে কালে কালে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন তেমনি বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ.ক.ম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হলেন আলোকবর্তিতার মতো ও অবিস্মরিণীয় একটি উজ্জল নক্ষত্রের নাম। পরিশ্রম, সততা, মেধা, আন্তরিকতা ও অধ্যবসায়ের বলে পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন এক মহীরুহ। অতি অল্পদিনে চলে গেলেন আমাদের আইনজীবী সমাজের গর্বের মানুষ বিশাল হৃদয়ের এই মহাপ্রাণ ব্যক্তিটি। স্যারকে নিয়ে কিছু লেখার দুঃসাহস আমার কোনদিন হয়ে উঠেনি। আজ অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আন্তরিক শ্রদ্ধাভরে আমার চাচা শ^শুড় এই বরেণ্য আইনজীবী স্যারকে স্মরণ করছি। আমার চাচা শ^শুড় আ.ক.ম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন একজন প্রথিতযশা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, দেশ বরেণ্য সিনিয়র আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের বিভিন্ন বারের অনেক বিশিষ্ট গুণী আইনযোদ্ধা বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছ থেকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আইনজীবী পরিবারের তেমনি একজন সূর্য সন্তান ছিলেন ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, সাবেক চট্টগ্রাম জেলা পিপি (জীবনের শেষ অবধি পর্যন্ত) বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ.ক.ম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। যাঁকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য মানস কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘‘¯েœহের সিরাজ’’ বলে ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম ১৫ আসন (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) হতে নৌকার প্রতীক নিয়ে মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য নির্বাচন করার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনসহ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নীতি নির্ধারণী ষ্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও পটিয়া আইন কলেজের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এই বরেণ্য আইনজীবী আদালত পাড়ায় সর্বজন গুণীজন ও বিচারাঙ্গণে একজন আইনী অভিভাবক সহ আইন অঙ্গনের বটবৃক্ষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি ছিলেন। স্যারের আপন মেজ ভাই আমার শ^শুর বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম অ্যাডভোকেট মফিজুর রহমান চৌধুরীর উৎসাহ ,অনুপ্রেরণায় তিনি আইন অঙ্গনে পদার্পন করেন। শুরু করেন আইন বিষয়ে পড়াশুনা। আইনজীবী সমাজের অহংকার এই মহান ব্যক্তির জন্ম হয় ১৯৫৫ সালের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার চাকফিরানী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী হায়দার আলী সিকদার বাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে। শৈশবেই তিনি বাবা মরহুম মকবুল আহমেদ ও মাতা মরহুমা মায়মুনা খাতুন কে হারিয়েছিলেন। স্যারের শৈশব কাটে তাঁর সুজলা সুফলা প্রকৃতির আচ্ছন্ন ঘেরা নিজ গ্রামে। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান এই বরেণ্য আইনজীবী চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী শেষ করে আইনের বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম আইন কলেজ হতে আইনে ¯œাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং একজন আইনজীবী হিসেবেই তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। ধীরে ধীরে আইন জগতের এই অভিভাবকের আইনপেশায় সফলতা আসতে থাকে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ সুনাম অর্জন করেন। তিনি আইনজীবী পেশায় প্রায় সুদীর্ঘ ৪২ বছর অতিবাহিত করেছেন। স্যারের চেম্বার থেকে হাজার হাজার আইনজীবী জুনিয়রশীপ শেষ করেছেন। অনেকে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছেন এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট পদেও বহাল আছেন। আগাগোড়া একজন পেশাজীবী হয়েও বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেছেন। ছাত্র জীবন থেকে কর্মজীবনের সর্বস্তরে জবাবদিহিতা, সৎ ও সুস্থ রাজীতির বিকাশ, গণ মানুষের উন্নয়ন তথা সামাজিক কর্মকান্ডে তিনি সব সময় সক্রিয় ভুমিকা পালন করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু,গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সারাটা জীবন আন্দোলন করে গেছেন। তাঁর জীবনটাই ছিল গনতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ। এ ক্ষেত্রে তিনি পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ছাত্র জীবন হতেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন এবং ছাত্র অবস্থায় অসংখ্য নাটক ও উপন্যাস লিখেছিলেন। তাঁর স্বরচিত বিভিন্ন নাটকে নির্দেশনা,অভিনয় ও করেছেন। মানব সেবায় তাঁর অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। এই বিশিষ্ট আইনজীবী মেধায়, মননে, দক্ষতায়, অত্যন্ত জ্ঞানী, নিরহংকারী ও সহজ সরল ব্যক্তি হিসেবে অতি অল্প সময়েই সকলের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন এবং আদালত পাড়ায় অবিসংবাদিত আইনজীবী নেতা হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। একাধারে রাজনীতিবিদ, অধ্যাপক, আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন সুবক্তা হিসেবেও ভক্তদের কাছ থেকে প্রচুর সুনাম অর্জন করে নিয়েছিলেন ইতোমধ্যে। খুব অল্প কথায় তাঁর বক্তব্যের প্রধান প্রধান বিষয় কোন গুরুত্বপূর্ণ দিকই বাদ না দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতেন। ২০২২ সালের চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে চট্টগ্রাম বারের অডিটরিয়ামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সভায় এই অনলবর্ষী বক্তা সিরাজ স্যার বলেছিলেন ‘‘হিমালয়ের সাথে যেমন সিআরবি পাহাড়ের তুলনা হয়না, তেমনি সমন্বয়ের সাথে ঐক্য পরিষদের তুলনা হয়না’’। স্যারের এই বক্তব্য বেশ আলোড়ন ও সাড়া জাগিয়েছিল এবং তাঁর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক আইনজীবী তাঁর বক্তব্যটি লিখে সম্মানসূচক ষ্টাটাস ও দিয়েছেন। স্যারের তুলনা স্যার নিজেই। অন্য কারো সাথে এই মহান ব্যক্তির তুলনা চলেনা। স্যারের মৃত্যুর পর তাঁর একজন শুভানুধ্যায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন ‘‘ আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি কিন্তু উকিল সিরাজকে দেখেছি’’। এছাড়াও স্যারের একজন শিষ্য চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী রফিকুল হাসান সাহেব লিখেছিলেন- ‘‘টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া,রুপসা থেকে পাথারিয়া, কোথাও তুমি নেই, লুসাই থেকে কর্ণফুলী,সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্তে, তোমাকে মনে পড়বেই। …… এইভাবে কবিতা লিখে স্যারের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষ্টাটাস দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির যেকোন র্দুদিনে, সময়ে,অসময়ে, সংকটময় মুর্হুতে তিনি পাশে থেকেছেন। আইন অঙ্গণে দেওয়ানী,ফৌজদারী ও রাজস্ব্র আইনে পারদর্শী ছিলেন বিধায় যেকোন মুর্হুতে আইনগত যে কোন সমস্যার দ্রæত সমাধান দিতে পারতেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও স্যার প্রতি সপ্তাহে নিজ গ্রামে ছুটে যেতেন। গ্রামবাসীদের সুখে দুঃখে,ভালমন্দে, বিপদে আপদে সব সময় তাদের পাশে থাকতেন।

আতœীয়,অনাতœীয়,ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে মুল্যায়ন করেছেন শ্রষ্টার সৃষ্টি সেরা মানব হিসেবে। তিনি এলাকায় বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, সামাজিক সংগঠনের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দেশ বরেণ্য আইনজীবী ও একজন প্রতিভাবান মানুষ হওয়া সত্বেও সবার সাথে তিনি সহজ সরল মনোভাব পোষণ করতেন। সুবিধা বঞ্চিত অসহায় মানুষের প্রতি ছিলেন কোমল ও সহানুভুতিশীল। ‘‘কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত’’ জন্মিলে মরিতে হইবে। প্রকৃতির নিয়মের কাছে হার মেনে এই দেশ বরেণ্য আইনজীবী সবাইকে কাঁদিয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন রোজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামস্থ পার্কভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। ৬৭ বছর বয়সী এই স্যারকে তাঁর নিজ জন্মভুমি লোহাগাড়া থানার চাকফিরানী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী হায়দার আলী সিকদার বাড়ীর পারিবারিক গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। আইনী জগতের অভিভাবক এই মহান ব্যক্তির শুন্যতা কখনও পূরণ হবার নয়।

আতœীয়, অনাতœীয়, দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, আইনজীবীগন, সহযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সচিব, মেয়র, সাংবাদিক, সাধারন জনগন,পাড়া প্রতিবেশী তথা চট্টগ্রাম এর সর্বস্তরের জনগণ ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণ করেন। এখনও তাঁর অনুসারীরা গভীর শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করেন এবং তাঁর কবর জিয়ারত করেন। এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার পিপি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নানান গুনে গুনান্বিত অ্যাডভোকেট আ.ক.ম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর উজ্জল ও অসাধারণ কর্মজীবন তাকে তাঁর সময়ে একটি জীবন্ত কিংবদন্তী এবং পরবর্তী প্রজম্মের জন্য একটি স্মরণীয় নাম হিসেবে উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন আজীবন। আইনজীবী সমাজের এই মহামানবের উল্লেখ্যযোগ্য অবদানগুলো অনন্ত কাল ধরে মানুষের নিকট নজীর স্থাপন হয়ে থাকবে। শারীরীকভাবে স্যারের মৃত্যু হলেও তিনি আমাদের কাছে অমর অক্ষয় হয়ে থাকবেন সারাটা জীবন। অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে গভীর ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হয়ে আছেন, থাকবেন। কালের বিবর্তনে যাতে স্যারের স্মৃতি বিলীন হয়ে না যায়, আইনজীবী পরিবারের এই মহানায়কের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য চট্টগ্রাম বারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (ফোকাল পয়েন্ট) একটি স্মৃতিফলক নামকরনের জন্য চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির স্যারের সকল শুভানুধ্যায়ী,সহযোদ্ধা,বর্তমান ও সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মহোদয় ও বার কাউন্সিলের বর্তমান ও সাবেক সদস্যগন মহোদয়ের নিকট প্রাণের দাবী ও বিনীত আরজ জ্ঞাপন করছি। ভালো থাকুন স্যার পরপারে ভালো থাকুন। আল্লাহ আপনাকে বেহেস্তের উঁচু মাকামে নসীব করুক।


লেখক- অ্যাডভোকেট মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী (বাবু)

296 Views

আরও পড়ুন

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তীব্র তাপদাহে বাড়ছে রোগী : বারান্দা-মেঝেতে একের স্থানে তিন

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দোয়ারাবাজারে ধ’র্ষ’ণের পর কলেজ ছাত্রী খু’ন, খু’নী লিটন আটক!

দোয়ারাবাজারে চেলানদীতে ভেসে উঠলো নিখোঁজ ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিনের লা’শ

সজিব মিয়ার কবিতা “মাটি”

ভয়াল ২৯ এপ্রিল নিহতের স্মরণে ধলঘাটা এসোসিয়েশন’র বিভিন্ন কর্মসুচী পালন

নাগরপুরে গাছ কাটা কেন্দ্র করে প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২

তীব্র খরায় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে – ডা. অর্ণা জামান।

কুমারখালীতে বিনামূল্যে পানি, শরবত ও ক্যাপ বিতরণ

কবিতা:- নক্ষত্রের রাত