ঢাকাশনিবার , ৪ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

আইন আলোচনা : ভূমি সংস্কার ও ভূমি ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৭ মে ২০২১, ১২:০২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

মো.আব্দুল্লাহ আল মিযান :

মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন হতেই ভূমি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে নানাভাবে। কোন কোন সংস্কার ছিল উন্নয়নমূখী। ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত আমাদের দেশে ১৯৮৪ সনে ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ জারী করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশটি বিভিন্ন দিক হতেই তাৎপর্যের দাবী রাখে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ৯৮নং আদেশের দ্বারা জমি-জমার মালিকানা সীমা নির্ধারণ করে ছিল ১০০ বিঘা। ১৯৮৪ সনের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ দ্বারা একটি পরিবার কৃষি- জমির খাস দখলে রাখার পরিমাণ সীমিতকরণ করা হয়েছে অর্থাৎ সর্বোচ্চ পরিমাণ ১০০ বিঘা হতে কমিয়ে ৬০ বিঘা করা হয়েছে।
কোন ব্যক্তি বা পরিবারের ৬০ বিঘার অধিক জমি থাকলে বা এর বেশি ক্রয় করলে অতিরিক্ত সম্পত্তির ৫০ বিঘার জন্য বাজার দরের ২০% এবং ৫০ বিঘার অতিরিক্ত জমির জন্য বাজার দরের ১০% ভাগ হারে ক্ষতিপূরণ দিয়ে উক্ত সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করবে। ইহার অর্থ হচ্ছে কোন পরিবার ৬০ বিঘার উপরে জমি নিজের মালিকানায় রাখতে পারবে না। কিন্তু
খাতা-কলমে আইন থাকলেও কার্যকারিতায় উহা সুফল পাওয়া যায় না। কেননা, যার টাকা আছে সে বিভিন্ন অজুহাতে নিজের নামে জমি রাখে। উল্লেখিত ৬০ বিঘার নির্ধারিত সীমা কে মানে। তাছাড়া অনেক চতুর ব্যক্তি নিজের নামে জমি না রেখে
নাবালক সন্তানের নামে জমি রাখেন। মূলতঃ প্রকৃত মালিক সে। যেমন এক ব্যক্তির দুই নাবালক সন্তান আছে। তার প্রচুর টাকা আছে। সে নিজের নামে ৬০ বিঘা এবং দুই সন্তানের নামে ৬০ বিঘা করে ১২০ বিঘা জমি রাখলেন। এতে করে সে অনেক জমির মালিক হয়ে গেল একাই। এ অধ্যাদেশের ৫নং ধারা দ্বারা স্থাবর সম্পত্তির সকল প্রকার বেনামী লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ অধ্যাদেশ আমলে আসার পর হতে কোন ব্যক্তিই তার নিজ উপকারার্থে অন্য কোন ব্যক্তির নামে কোন স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন না। ফলে, যার নামে স্বত্বের দলিল তাকেই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক বলে ধরে নেয়া হবে এবং এর বিপরীতে কোন প্রকার সাক্ষ্যই আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না। স্বত্বের দলিল যার নামে সে প্রকৃত মালিক নহে, সে অপর ব্যক্তির বেনামদার এ প্রকার কোন সাক্ষ্য
কোন আদালতে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য হবে না। এমনকি, রেজিষ্ট্রি বা দানপত্রের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হলেও প্রমাণ করতে হবে যে, নিজ প্রয়োজনে অথবা হস্তান্তর গ্রহীতার প্রকৃত প্রয়োজনেই উহা করা হয়েছে, উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে নয়। অপরদিকে
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এ ‘ঝধষব’ বা ‘বিক্রয়’ একটি বিশেষ ভূমিকার অবতারণা করেছে। অত্র আইনের ৫৪ ধারার মাধ্যমে বিক্রয়ের সংজ্ঞা বিঘোষিত হয়েছে।
সম্পত্তি হস্তান্তরের যে কয়টি পদ্ধতি রয়েছে বিক্রয়ের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর ইহাদের মধ্যে অন্যতম। বিক্রয়ের উপাদান হিসেবে সাধারণত আমরা দেখতে পাই ‘পক্ষবৃন্দ,

বিষয়বস্তু, হস্তান্তর, মূল্য ও বিক্রয়ের পদ্ধতি’। সম্পত্তি বিক্রয়ের দুইটি পদ্ধতি রয়েছে।

প্রথমত: রেজিষ্ট্রি দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রয় করা যায় এবং দ্বিতীয়ত: সম্পত্তির দখল অর্পন মাধ্যমে ((by delivery of the property) সম্পত্তি বিক্রয় করা যায়। অবশ্য এক্ষেত্রে বিক্রিত বিষয়বস্তুর মূল্য একশত টাকার কম হয়; কারণ একশত টাকার অধিক মূল্যের স্পর্শযোগ্য স্থাবর সম্পত্তি রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করতে হয়। স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার কিছু অধিকার ও দায়-দায়িত্ব রয়েছে।
সম্পত্তি বা উহার স্বত্বের কোন প্রচ্ছন্ন ক্রটি থাকলে, এবং সে সম্পর্কে বিক্রেতা অবহিত, কিন্তু ক্রেতার সাধারণ সতর্কতার দ্বারা জানতে পারা সম্ভব না হলে, উহা প্রকাশ করা বিক্রেতার একটি দায়িত্ব। এরূপ ত্রুটি প্রকাশ না করা বিক্রেতার পক্ষে প্রতারণামূলক আচরণের শামিল হবে। উক্ত ক্রটিগুলি সম্পর্কে অনুসন্ধান করা ক্রেতার কোন দায়িত্ব নহে। কিন্তু ত্রুটি বাহ্যত স্পষ্ট হলে, এবং সে সম্পর্কে ক্রেতা প্রকৃত বা আরোপিত নোটিশ পেয়ে থাকলে, বিক্রেতাকে দোষী সাব্যস্থ করতে পারবে না।
সম্পত্তির স্বত্ব সম্পর্কে বিক্রেতার দখলে বা ক্ষমতার মধ্যে যে সকল দলিল থাকে, ক্রেতা অনুরোধ করলে তিনি(বিক্রেতা) ঐগুলি পরীক্ষার জন্য ক্রেতাকে দিতে আইনত: বাধ্য থাকবেন। সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি সম্পর্কে অথবা উহাতে বিক্রেতার স্বত্ব সম্পর্কে ক্রেতা কোন প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে, বিক্রেতা যতদূর সম্ভব ঐ প্রশ্নগুলির উত্তর দিবেন। ক্রেতা যথাযথ সময়ে ও স্থানে বিক্রয়মূল্য হিসাবে পাওনা অর্থ প্রদানের জন্য পেশ করলে, বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তরের একটি দলিল সম্পাদন করে দিবেন। ইহা তার দায়িত্ব। বিক্রয়ের চুক্তির তারিখ হতে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দখল প্রদানের সময় পর্যন্ত, বিক্রেতা তার দখলে বা নিয়ন্ত্রনাধীনে আছে এমন সম্পত্তি ও দলিল পত্রাদি নিজ সম্পত্তি মনে করে যথাযথ যত্ন নিতে তৎপর হবেন। ক্রেতা বা বিক্রেতা কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির নির্দেশ ক্রমে কোন ব্যক্তিকে সম্পত্তি দখল প্রদানে বিক্রেতা বাধ্য থাকবে। ইহা তার দায়িত্ব। বিক্রয়ের তারিখ পর্যন্ত সম্পত্তির সকল প্রকার কর ও ট্যাক্স পরিশোধের দায়িত্ব বিক্রেতার। সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দায় সাপেক্ষে ((incumbrance)) বিক্রয় করা না হলে, বিক্রয়ের সময় বিদ্যমান সমস্ত দায় পরিশোধ করার দায়িত্বও বিক্রেতার উপর বর্তায়।
অন্যদিকে ক্রেতা যদি সম্পত্তিতে বিক্রেতার স্বত্ব সম্পর্কে এমন কোন তথ্য জানেন যা বিক্রেতা জানেন না বলে তিনি বিশ্বাস করেন, তবে ক্রেতা ঐ তথ্য বিক্রেতার নিকট প্রকাশ করবে। বিক্রয় সম্পূর্ণ করার সময়ে ও স্থানে বিক্রেতাকে অথবা তার নির্দেশিত ব্যক্তিকে সম্পত্তির মূল্য প্রদান করতে ক্রেতা অবশ্যই দায়ী থাকবে। তবে সম্পত্তি দায়মুক্ত অবস্থায় বিক্রয় করা হলে, সে ক্ষেত্রে বিক্রয়ের তারিখে কোন দায় বিদ্যমান থাকলে, ক্রেতা সম্পত্তির মূল্য হতে দায় পরিশোধের টাকা কাটিয়া রাখতে পারেন এবং পরে তাকে উহা যথাযথ প্রাপককে প্রদান করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিকানা ক্রেতার নিকট

হস্তান্তরিত হওয়ার পর, সম্পত্তির সকল ধরণের ক্ষতি, ধ্বংস বা মূল্যহ্রাস ক্রেতাকে বহন করতে হবে, যদি উহা বিক্রেতার দোষে ঘটেনি বলে প্রমাণিত হয়। সম্পত্তির মালিকানা লাভ করার পর উক্ত সম্পত্তির সকল সরকারী পাওনা, খাজনা, ট্যাক্স এবং দায় সাপেক্ষে সম্পত্তি ক্রয় করা হলে উহার সুদসহ আসল টাকা পরিশোধ করতে ক্রেতা আইনত: দায়ী থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিকানা লাভের পর ক্রেতা উক্ত সম্পত্তির উন্নতি অথবা উহার মূল্য বৃদ্ধির সুবিধা এবং খাজনা ও মুনাফা ভোগের অধিকারী হবে। সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির যথাযথ মূল্য দিয়া দখল না পেয়ে থাকলে ক্রেতা ঐ সম্পত্তির উপর দায় সৃষ্টি করতে পারেন এবং চুক্তির নির্দিষ্ট শর্তাবলী পালন অথবা উহার বাতিলের উদ্দেশ্যে ডিক্রী ((decree)) লাভের অধিকারী হন। কোন সম্পত্তির বিক্রয় সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই ক্রেতা ঐ সম্পত্তিতে কোন দোষ-ক্রটি আবিস্কার করলে, যে দোষ ত্রুটি বিক্রেতা ক্রেতার নিকট প্রকাশ করেনি, তবে সেক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা বা চুক্তিটি বাতিলের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।

115 Views

আরও পড়ুন

রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০ জনের মনোনয়ন পত্র জমা।

শেরপুরে ছাত্র কল্যান পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

মুক্তি পেছালো আল্লামা মামুনুল হকের

রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টি, সাথে তুমুল বজ্রপাত

চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর নতুন কমিটি

পেকুয়ায় বজ্রপাতে দুই লবণ চাষির মৃত্যু

গাইবান্ধায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার

নওজোয়ানের সংবর্ধনায় চবি ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জনকারী মোবারক হোসাইন

শুধু গরমে গাছের গুরুত্ব নয়, গাছ লাগাতে হবে সারাবছর

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন