জেমস রহিম রানা :
যশোরের বাঘারপাড়ায় সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করার সময় স্থানীয় জনতা এক নারীসহ পাঁচজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে ।
বৃহস্পতিবার উপজেলার খাজুরা বাজারে অবস্থিত সমবায় সমিতির পরিচালকদের কাছে চাঁদা দাবি করলে স্থানীয়রা তাদের আটক করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
এ সময়ে তাদের ব্যবহৃত লাল রঙের একটি প্রাইভেট কার, মোবাইল, একটি ক্যামেরা, ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাতৃভূমির খবর পত্রিকার পরিচয়পত্র ও কথিত অ্যাসাইনেন্টের কপি জব্দ করে পুলিশ।
গণপিটুনির শিকার আটক ব্যক্তিরা হলেন, সাংবাদিক দলনেতা পরিচয়দানকারী মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া গ্রামের হিরণ শেখের ছেলে নুরুদ্দিন শেখ (২৮), একই উপজেলার কলসেরকান্দি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৫), রাজধানীর বংশালের আগামাছি লেনের মঞ্জুর হোসেনের ছেলে এস.এম. শাহজাহান (৪২), যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া মেঠোপাড়া গ্রামের কিসমত দফাদারের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা ডলি (২৮) ও দৈনিক মাতৃভূমির খবর পত্রিকার স্টিকার সম্বলিত গাড়ি (যার নাম্বার ঢাকা মেট্রো- ক- ০৩- ৪৩৩৯) এর চালক মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার চর বাউশিয়া গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া ওরফে শুভ (২৪)।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে অভিযুক্তরা খাজুরা বাজারের আশার আলো সমবায় সমিতিতে গিয়ে নিজেদের ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাতৃভূমির খবর পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেন। তারা বলেন,‘আমরা ঢাকা অফিস থেকে অডিটে এসেছি। সমিতির কাগজপত্র বের করেন যাচাই-বাছাই করবো।’ এ সময় ওই সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও অফিস অডিটের অনুমতিপত্র দেখাতে বললে তারা ঘাবড়ে যান। সন্দেহ হলে সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও সভাপতি খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেন। পুলিশ আসার আগেই স্থানীয় জনতা অভিযুক্তদের গণপিটুনি দেয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ওই পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এর আগে বুধবার স্বপ্নের সেতু সমবায় সমিতি, সাহসী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি ও খাজুরা বাজার সমবায় সমিতিতে গিয়ে তারা সংবাদ প্রকাশ ও লাইসেন্স বাতিলের ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।
আশার আলো সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অফিসে এসে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করি। তাৎক্ষণিক আমি সমিতির সভাপতি সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলাকে ফোন করে ডাকি। এ সময় তারা অফিস অডিটের (অ্যাসাইনেন্ট কপি) একটি ভুয়া অনুমতিপত্র দেখায় আমাদের। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা সবাই ঘাবড়ে গেলে আমরা পুলিশকে খবর দিই।’
স্বপ্নের সেতু সমবায় সমিতির নির্বাহী পরিচালক উজ্জ্বল নন্দী অভিযোগ করে বলেন, ‘বুধবার সকালে তারা অফিসে এসে খাতাপত্র দেখে বলে, অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এ সময় সমিতির লাইসেন্স বাতিলের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা নেয় তারা। একই দিনে একই কৌশলে অভিযুক্তরা সাহসী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সভাপতি তপলা বৈরাগীর নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা ও খাজুরা বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদের নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দীন বলেন, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয়রা তাদের আটক করেন। বিষয়টি পুলিশ খবর পাওয়ার সাথে সাথে তাদেরকে হেফাজতে নেয়। চাঁদাবাজির বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া যে প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।