ঢাকাশুক্রবার , ৩ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

“ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট: স্থায়ী সমাধানের পথ!”

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রক্তভেজা মাটি শুকানোর পূর্বেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ইহুদীরা ‘একদিন এখানেই হবে আমাদের দেশ’ স্লোগানে ব্রিটিশ ফিলিস্তিনে অভিবাসিত হতে শুরু করে এবং স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে জমিজমা কিনে চাষবাস শুরু করে। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৩০ সালের গোড়ার দিকে। এক সময় তাদের দখলদারি স্লোগানের তেজস্বীতা ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পারার পর থেকে শুরু হয় Cold War, এক পর্যায়ে ১৯৩০ সালে ব্রিটিশরা ইহুদীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়ার ফলে ইহুদীরা স্বাধীন ফিলিস্তিনি এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়ে “মিলিশিয়া” নামে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে।

ইহুদী এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনিদের এই স্নায়ুযুদ্ধের প্রাক্কালে শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হিটলার গণহারে ইহুদি নিধনে ব্যস্ত হওয়ায় লক্ষ লক্ষ ইহুদী স্বাধীন ফিলিস্তিনে পালিয়ে আসলো। ফলশ্রুতিতে, এতদিনের স্নায়ুযুদ্ধ পেশীযুদ্ধে পরিণত হলো। এদিকে সংঘাত এড়ানোর দায়ে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন প্রস্তাবনা দিলো– ব্রিটিশ ম্যান্ডেটেরি ফিলিস্তিনে দুটি দেশ। একটি ইহুদীদের জন্য ‘ইসরাইল‘ নামে, আরেকটি বাকি আরবদের জন্য ‘ফিলিস্তিন’ নামে। ব্রিটেনের উক্ত প্রস্তাবনা মূলত আশ্রিত ইহুদীদের কাছে ফিলিস্তিনি মুসলমানদেরকে ইহুদি অধ্যুষিত বানানোর জন্য সহমর্মিতার নামে স্ট্যাবলিশ করার হঠকারী মিশন ছিলো। এটি বুঝতে পেরে ফিলিস্তিনি এবং আরব বিশ্ব সচেতনভাবে তাদের এই প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে। তবে জাতিসংঘ জেরুজালেমকে প্রস্তাবিত দেশের কোনোটাতেই অন্তর্ভুক্ত না করে একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক এলাকা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার কথা বললেও কার্যত তা কার্যকর হয়নি।

ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে জোরপূর্বক দখলদারি নিয়ে কয়েকগুণ তেজ নিয়ে যাত্রা করে ইসরায়েলরা বাইবেলের একটি কথার দোহায় দিয়ে, ‘ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমিতে ফিরে আসো!’
এ যেন তুমুল লড়াই শুরু হলো ফিলিস্তিনি এবং আশ্রিত ইহুদীদের সাথে। এদিকে, ইহুদীদের শক্তিমত্তা প্রয়োগে অনেকটা বিশ্ব মোড়লদের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তই দায়ী ছিলো। ব্রিটিশরা সমঝোতার অনেক প্রচেষ্টার পরেও ব্যর্থমনোরথে ঘোষণা দিল যে, “তাদের ১৯৪৮ সালের ১৫ মে সৈন্যসামন্ত গুটিয়ে চলে যেতে হবে।” তবে এ ক্ষেত্রে পরে ফিলিস্তিনের কী হবে সেটার দায়িত্ব তারা নেবে না মর্মে সাফ জানিয়ে দিয়ে খটকা লাগিয়ে রাখলো।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সৈন্যসামন্ত গুটিয়ে চলে যাওয়ার একদিন আগে, অর্থাৎ ১৪ মে গভীর রাতে জাতিসংঘের ১৮১ নম্বর রেজুলেশন অনুযায়ী বেন গুরিয়েন ‘ইসরায়েল’ নামক একটি রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে দিলো! ফলে, আরব লীগের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এ স্পর্ধাযুক্ত ঘোষণাকে চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করে সশস্ত্র যুদ্ধের ডাক দিলো। দফায় দফায় চলতে থাকা এ যুদ্ধের ২৭ দিন পর ইহুদীরা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। মূলত এটি ছিলো তাদের সমর প্রস্তুতির এক দুরন্ত কৌশলজাল। আরবরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিলো। অর্থাৎ তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে আরবদের উপর চড়াও হলো। আরবরা অনেকটা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় তাদের মোকাবিলা করছিলো।

ফলাফল:
বছরখানেক উভয় পক্ষের যুদ্ধ চলতে চলতে এক সময় ১৯৪৯ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হলো। কিন্তু একি! ফিলিস্তিনের গাজা থেকে গেছে মিশরের অধীনে, পশ্চিম তীর সহ আল আকসা কমপ্লেক্স হয়ে গেলো জর্ডানের অধীনে, আর জেরুজালেম সহ গোটা ফিলিস্তিনের বাকি অংশ দখল করে বসলো ইসরাইল! শুধু তাই নয়, ইসরাইলের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমির বাইরে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেটুকু ভূমি বরাদ্দ দিয়েছিলো, তার ৬০ শতাংশ চলে গেলো ইসরায়েলের দখলে। অর্থাৎ, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলতে আর কোনো কিছুই কার্যত অবশিষ্ট রইলোনা!
১৯৪৭ সালের দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আর ১৯৪৮-এর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে তৎকালীন ইহুদীদের সফল কূটকৌশল আর ফিলিস্তিনি-আরবদের কিছুটা অপরিপক্ব কলাকৌশলের সুদূরপ্রসারী ফলাফল কতটা বেশি বিষিয়ে উঠেছে তা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব দেখে সহজে অনুমেয়।
এভাবেই ১৯৪৮ সালের ভর দুপুরে একটি বিতর্কিত ‘ইসরায়েল’ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ফিলিস্তিনিদের কাছে দিনটি হচ্ছে ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের দিন। প্রতিবছর ১৫ মে ফিলিস্তিনিরা ‘নাকবা’ দিবস পালন করে আর ইসরায়েলিরা করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী!

স্থায়ী সমাধানের পথ:
আরব রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ এই সংকট মোকাবিলায় যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। যেমন-
১. কূটনৈতিক মধ্যস্থতা: আরব নেতৃবৃন্দ ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলদের সাথে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারেন। সমস্যার মূল চিহ্নিত করার মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রমাণ, ইহুদীদের অভিবাসী হিসেবে ঘোষণাসহ বিশ্ব মোড়লদের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ব্যাপারে মধ্যস্থতা করতে পারেন।

২. যুদ্ধবিরতি: একটি ফলপ্রসূ সংলাপের অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও সংঘাত বন্ধের জন্য অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা প্রদানের লক্ষে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন।

৩. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়: আরব রাষ্ট্রীয় মোড়লদের বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে তৎকালীন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৪. আঞ্চলিক কূটনৈতিক উদ্যোগ : প্রতিবেশি রাষ্ট্র সহ বিশ্বমোড়লদের সমন্বিত ও যুতসই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে আরব নেতৃবৃন্দের, যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার, শরণার্থী হিসেবে ইহুদীদের অধিকার, সীমানা বিরোধ ইত্যাদি সংকটের স্থায়ী সমাধান হয়।

৫. ভবিষ্যৎ বিরোধ নিষ্পত্তি: সর্বোপরি সমস্যার রুট পয়েন্ট চিহ্নিত করার মাধ্যমে একটি স্থায়ী, টেকসই সমাধান সম্ভব, যাতে করে ভবিষ্যতের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যায়।

সুতরাং আরব নেতৃবৃন্দের সাথে জাতিসংঘ সহ অন্যান্য বিশ্ব মোড়লদের নিরেপক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাধান-ই পারে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে।

লেখক: সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার।
শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, ও গবেষক।
ই-মেইল: sukawsar@gmail.com

238 Views

আরও পড়ুন

রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টি, সাথে তুমুল বজ্রপাত

চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর নতুন কমিটি

পেকুয়ায় বজ্রপাতে দুই লবণ চাষির মৃত্যু

গাইবান্ধায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার

নওজোয়ানের সংবর্ধনায় চবি ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জনকারী মোবারক হোসাইন

শুধু গরমে গাছের গুরুত্ব নয়, গাছ লাগাতে হবে সারাবছর

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তীব্র তাপদাহে বাড়ছে রোগী : বারান্দা-মেঝেতে একের স্থানে তিন

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দোয়ারাবাজারে ধ’র্ষ’ণের পর কলেজ ছাত্রী খু’ন, খু’নী লিটন আটক!