নেত্রকোণা প্রতিনিধি
দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমা।
২৯ সেপ্টেম্বর ‘রাজনৈতিক বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে‘ দুর্বৃত্তদের কয়েক দফা হামলার শিকার হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন গারো সম্প্রদায়ের সাবেক এই জনপ্রতিনিধি। শনিবার দুপুরে সেখানেই তিনি মারা যান।
সুব্রত সাংমার বড় ভাই দুর্গাপুর উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইমন তজু বলেন, “হামলায় আহত হয়ে আমার ভাই নয় দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার দুপুর সোয়া ১২টায় তিনি মারা গেছেন।”
সুব্রত সাংমা (৪৭) উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের সুধীর মানখিনের ছেলে।
সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। স্থানীয়রা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে দুর্গাপুর সদরের উৎরাইল বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। শিবগঞ্জ বাজারে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান দুর্গাপুর থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, হামলার ঘটনায় আগে একটি মামলা হয়েছিল। এখন সেটিই হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে। সেই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছিলে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়ালকে।
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয় রাশিমণি বাজার এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত সুব্রত সাংমাকে মারপিট করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসার জন্য মোটরসাইকেলে করে তাকে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হচ্ছিল। পথে শিবগঞ্জের সোমেশ্বরী নদীর ঘাট এলাকায় পৌঁছলে আবারও হামলার শিকার হন সুব্রত সাংমা। এ সময় তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এই অবস্থায় সুব্রত সাংমাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় স্থানীয়রা। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুপুরে তিনি সেখানেই মারা যান।
হামলার ঘটনায় পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর থানায় মামলা করেন সুব্রত সাংমার বোন কেয়া তজু। মামলায় বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল, তার দুই ভাই শামীম মিয়া ওরফে শ্যুটার শামীম, বদিউজ্জামানসহ ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৬ জনকে আসামি করা হয়।
দুর্গাপুর থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, আগের মামলায় ১২ জন আসামি মঙ্গলবার নেত্রকোণার মুখ্য বিচারিক হাকিম-২ এর আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “বিএনপির আউয়ালের সঙ্গে সুব্রত সাংমার দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ করে আসছিল। আউয়াল এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর বিরোধিতা করে আসছিলেন সুব্রত সাংমা। শেষ নাগাদ সুব্রত সাংমাকে খুনই করে ফেললেন আউয়াল।”
“সুব্রত সাংমা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন বলিষ্ঠ নেতা। তিনি এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে অল্প ভোটের ব্যবধানে আব্দুল আওয়ালের কাছে হেরে যান। এর আগেরবার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। আমরা এই হত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।“
হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সন্ধ্যায় দুর্গাপুর পৌর শহরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হবে বলে জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।