ঢাকাশুক্রবার , ৩ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

বঙ্গবন্ধু- বঙ্গতাঁজের ঘনিষ্ঠ সহচর মাষ্টার মতিউর রহমান

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২৮ মার্চ ২০২১, ১:৪৬ অপরাহ্ণ

Link Copied!

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটনঃ

রাজধানী থেকে বহুদূরে নিবিড় পল্লী গ্রামের এক ছেলে নীতি, আদর্শ, সততা ও দলের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা ও স্বাধীনতার কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গতাঁজ তাজউদ্দীন আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহচর। পাশাপাশি সামাজিকভাবে দেশপ্রেম, উদারতা,সহনশীলতা আর মানবিকতায় নিজ এলাকার গণমানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব । তিনি হলেন কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান মাষ্টার মতিউর রহমান সরকার। তিনি ছিলেন দুর্গাপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সবচেয়ে ত্যাগী কর্মীও নেতা। সৎ, নিষ্ঠাবান, লোভহীন ও দলীয় আদর্শের মূর্তপ্রতীক বরেণ্য এই রাজনৈতিক মানুষটি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। ২০১৫ সালের ২৬ মে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। পারিবারিক সম্পর্কের সুবাদে এবং একজন সাংবাদিক হিসেবে শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান স্যারের জীবদ্দশায় তাঁর কাছে যাওয়ার ও রাজনৈতিক জীবনের কিছু অতীত জানার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। এলাকার সন্তান হিসেবে প্রচার বিমুখ এই আলোকিত মানুষটিকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে আমার বহু দিনের। কিন্তু এতোদিন হয়ে উঠেনি। আজ আমি আপনাদের সামনে মাষ্টার মতিউর রহমান সরকারের বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
জন্মঃ মাষ্টার মতিউর রহমান সরকার বয়সের দিক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৫ বছরের ছোট ও বঙ্গতাঁজ তাজউদ্দীন আহমেদের সমসাময়িক ছিলেন। তিনি ১৯২৫ সালের পহেলে ফেব্রুয়ারিতে কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোসাইরগাও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জওয়াহের হোসেন সরকার ছিলেন একজন সমাজ সচেতন ব্যক্তি।
শিক্ষা জীবনঃ তিনি নিজ গ্রামের মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। ঐতিহ্যবাহী লাখপুর – শিমুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে এনট্রান্স (এসএসসি ) পাস করেন। লাখপুর -শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় সতীর্থ বন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম এটর্ণি জেনারেল ফকির সাহাবুদ্দীন আহমেদে। তাঁর সাথে স্কুল হোস্টেলের একই রুমে থাকতেন। স্কুল জীবনের পুরোটাই তিনি শাহাবুদ্দীন আহমদ এর সঙ্গে হোস্টেলে থেকে কাটিয়েছেন। শাহাবুদ্দীন আহমদ এর সাথে মতিউর রহমান সরকার এর শৈশবের দুষ্টুমির অনেক স্মৃতি এলাকায় এখনো কিংবদন্তি হয়ে আছে। তাদের স্কুল জীবনের এই সম্পর্ক পরবর্তীতে রাজনৈতিক জীবনে ও অটুট ছিল।
ছাত্র রাজনীতিঃ মাষ্টার মতিউর রহমান সরকার ছিলেন ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের একজন ত্যাগী কর্মী।
ভাষা আন্দোলনে মতিউর রহমানঃ
১৯৪৮ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ছাত্র সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সেই সমাবেশে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন বলেছিল, উর্দৃু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা – তখন সমবেত ছাত্র সমাজ ‘নো’ ‘ নো ‘ ধ্বনি উচ্চারণ করেছিলেন। মতিউর রহমান সরকার ও সেই সময় অন্যদের সাথে নো নো ধ্বনি তুলে বাংলা ভাষার পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনঃ তিনি পঞ্চাশের দশকে ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্নাচিত হন। মাষ্টার মতিউর রহমান ছিলেন দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কাপাসিয়া থানা আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি এর প্রতিবাদে আয়োজিত বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন।
১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্ট নির্বানের একজন কর্মী হিসেবে নিজ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনের সময় আড়াল স্কুল মাঠে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই জনসভায় হাতির পীঠে চড়ে অংশ গ্রহণ করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী । জনসভাকে সফল করার জন্য দিন রাত কাজ করেন।
১৯৫৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রানীগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে রানীগঞ্জ স্কুল মাঠের জনসভায় আনার প্রধান উদ্যোক্তা ও সংগঠক ছিলেন মাষ্টার মতিউর রহমান।রানীগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পাশের তহসিল অফিস সংলগ্ন স্থানে সেই জনসভায় আগত অতিথি ও কর্মীদের জন্যে খাবার পাকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান ও ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রহ করে ভারতে প্রশিক্ষণে পাঠান।
এভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম,আপন দক্ষতা ও নিবেদিত, একনিষ্ঠ আওয়ামীলীগ কর্মী ও নেতা হিসেবে মাষ্টার মতিউর রহমান সরকার হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহচর, বিশ্বস্ত বন্ধু ও সুহৃদ।
মতিউর রহমান ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বানে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয় প্রত্যশী ছিলেন। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তিনি ছাড়াও আরো ২ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশের প্রথম এটর্ণি জেনারেল ফকির শাহাবুদ্দিন আহমদ, চৌধুরী সাদির মোক্তার। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে পার্লামেন্টারী বোর্ডে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন ফকির শাহাবুদ্দিন আহমদ।
কর্মজীবনঃ তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সুনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। চাকরির সুবাদে তিনি নিজ ইউনিয়নের বেগুনহাটি, দড়িমেরুন, রানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ের সফল পিতা। এই আওয়ামী পরিবারের সবাই দলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বড়ছেলে সামসুল হুদা লালমিয়া দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সফল সাধারণ সম্পাদক এবং আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

লেখকঃ
শামসুল হুদা লিটন
অধ্যাপক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক।

112 Views

আরও পড়ুন

রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টি, সাথে তুমুল বজ্রপাত

চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় ছাত্র অধিকার পরিষদ এর নতুন কমিটি

পেকুয়ায় বজ্রপাতে দুই লবণ চাষির মৃত্যু

গাইবান্ধায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার

নওজোয়ানের সংবর্ধনায় চবি ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জনকারী মোবারক হোসাইন

শুধু গরমে গাছের গুরুত্ব নয়, গাছ লাগাতে হবে সারাবছর

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তীব্র তাপদাহে বাড়ছে রোগী : বারান্দা-মেঝেতে একের স্থানে তিন

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দোয়ারাবাজারে ধ’র্ষ’ণের পর কলেজ ছাত্রী খু’ন, খু’নী লিটন আটক!