ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ
  2. আন্তর্জাতিক

কি ঘটতে চলেছে তুরস্কের ভাগ্যে?

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
২ অক্টোবর ২০২০, ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

———————–

তুরস্ক ইউরোপ- এশিয়ার সংযোগে অবস্থিত চমৎকার সম্ভবনাময় একটি দেশ। তুরস্ক বর্তমান বিশ্বের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির একটি দেশ। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের দক্ষ হাতে এগিয়ে চলেছে তুরস্ক। আজ তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের একমাত্র আশা ভরসা। কারণ মধ্যপ্রাচ্য বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের দোসর হিসেবে কাজ করছে। সেখানে তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের পক্ষে সোচ্চার। তুরস্ক রোহিঙ্গা, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন সহ অনেক মুসলিম নির্যাতিত জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা তুরস্কের আগামী এক দশক নিয়ে আলোচনা করব।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় ঘটে কেন্দ্রীয় শক্তি এবং জয়লাভ করে মিত্রশক্তি। এ সুযোগে মিত্রশক্তি তুরস্কের খেলাফতের বিপর্যয় ঘটায়। পুরো তুরস্ককে খন্ড-বিখন্ড করে দেয়। এর আগে তুরস্কের ওসমানীরা পুরো ৪০০ বছরে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটায়। তাঁরা আরব দেশগুলো পরিচালনা করত। তাঁরা নিজেদের পবিত্র মক্কা ও মদিনা শহরের খাদেম বলে পরিচয় দিত ।কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কুখ্যাত লুজান চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ককে একেবারে পঙ্গু রাষ্ট্র পরিণত করে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো।

লুজান চুক্তি:ওসমানী সাম্রাজ্যের শুরু আনুমানিক ১৫৫০ সাল থেকে। তখন এর আয়তন ছিল প্রায় ৩৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির হাতে পরাজয় ঘটে কেন্দ্রীয় শক্তির।এর ফলে একে একে কেন্দ্রীয় শক্তির সকল রাষ্ট্রের উপর জুলুম নির্যাতন শুরু করে মিত্রবাহিনী। এর হাত থেকে নিস্তার পায়নি তুর্কি সাম্রাজ্যও‌। ফলে ওসমানী সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়। আর সর্বশেষ লুজান চুক্তির মাধ্যমে ওসমানী সাম্রাজ্যের গলা একেবারে চেপে ধরা হয়। এই চুক্তির মূল কারিগর ছিল ব্রিটেন। ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে এ কুখ্যাত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির একপক্ষে ছিল তুরস্ক অন্যপক্ষে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালির মতো রাষ্ট্রগুলো। এই চুক্তিতে কিছু শর্ত দেওয়া হয় তুরস্ককে।যার ফলে তুরস্ক নিজের দেশে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

লুজান চুক্তি পাঁচটি ধারা এবং তার বিশ্লেষণ:
১. খেলাফত ধ্বংস: এই চুক্তির মাধ্যমে খেলাফতের অবসান হয়। খেলাফতের মূল উপড়ে ফেলা হয়। খেলাফতের উত্তরাধিকারীদের হত্যা করা হয়।আর তাদের সমস্ত সম্পত্তি পশ্চিমারা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এর মাধ্যমে তুরস্কের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে।
২. সেক্যুলার রাষ্ট্র: এই চুক্তির মাধ্যমে তুরস্কের ইসলামী গৌরব মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। ইসলামী কার্যকলাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পবিত্র কুরআনের ভাষা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। মসজিদে আজান নিষিদ্ধ করা হয়। তাঁদের আরবি ও ফারসি ভাষা পরিবর্তন করে চাপিয়ে দেওয়া হয় ল্যাটিন ভাষা‌। এভাবে তুরস্ককে রাতারাতি অক্ষরজ্ঞান শূন্য করে দেওয়া হয়। ভাবতেই অবাক লাগে একটা জাতির ভাষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মাধ্যমে পরিবর্তন হয়ে গেল। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তুরস্ক অন্ধকারে মিশে গেল।

৩. জ্বালানি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা : বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতি সচল রাখতে জ্বালানি সম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ধারার মাধ্যমে তুরস্ক কোন প্রকার জ্বালানি উত্তোলন করতে পারবে না। তাঁরা নিজেদের দেশে উত্তোলন তো দূরে থাক অন্য কোন দেশকে জ্বালানি উত্তোলনে সাহায্য পর্যন্ত করতে পারবে না। তাঁদের জ্বালানি ক্রয় করতে হবে। এজন্য প্রতি বছর তুরস্কের একটা মোটা অংকের অর্থ খরচ হয় এই জ্বালানি ক্রয় করতে।
৪. বসফরাস প্রণালী: বসফরাস প্রণালী হলো ইউরোপ থেকে এশিয়ায় যাতায়াতের অন্যতম একটি যোগাযোগ মাধ্যম।
আর এই প্রণালী তুরস্কের সম্পদ। কিন্তু তুরস্ক এই প্রণালীতে কোন প্রকার অধিকার রাখতে পারবে না। কোন প্রকার ট্যাক্স, খাজনা আরোপ করতে পারবে না। তাঁদের শুধু পুতুলের মতো চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে।
৫. হেজাজ নিয়ন্ত্রণ: আজকের সৌদি আরব ছিল ওসমানীদের দখলে। সৌদি আরবে ওসমানীরা প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা
করতো‌। কিন্তু এই চুক্তির মাধ্যমে তাঁদের সেই কর্তৃত্ব কেঁড়ে নেওয়া হয়। এবং আমেরিকার মদদে ১৯৩২ সালে সৌদি রাজ বংশের উত্থান ঘটে।

২০২৩ সালে লুজান চুক্তির মেয়াদ শেষ। তারপর?
২০২৩ সালে শেষ হচ্ছে ১০০ বছরের সেই কুখ্যাত লুজান চুক্তি। এরপরে তুরস্ক আর কোন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকবে না। তুরস্ক বর্তমানে তেমন শক্তিশালী রাষ্ট্র না হলেও তাঁদের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা যেকোন মূল্যে চাইবে ফসফরাস প্রণালী দখল করতে। আর এজন্য সে ক্ষমতা তুরস্ক ইতিমধ্যে অর্জন করেছে। এছাড়া কৌশলগতভাবে তারা চীন, রাশিয়া, পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা করেছে। এর মাধ্যমে তাঁরা ইউরোপ থেকে এশিয়ায় যাতায়াতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে অনেকটা নিশ্চিত। এবং এ প্রণালীর মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে এটাও অনেকটা সুনিশ্চিত।

তুরস্ক প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ আহরণে মনোযোগী হবে। এর ফলে তাদের আর জ্বালানি কেনার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে না বরং তাঁরা জ্বালানি সম্পদে কর্তৃত্ব অর্জন করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর জন্য হুমকিও হতে পারে তুরস্ক।তুরস্ক তাদের হারানো ভূখন্ড উদ্ধারে সচেষ্ট হবে কিনা বলা মুশকিল। তবে এটা অনেকটা নিশ্চিত মুসলিম বিশ্বে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে। এবং তাঁরা তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে তৎপরও রয়েছে। মুসলিম নির্যাতিতদের পাশে তুরস্ক সবসময়ই আছে। ইতিমধ্যে তাঁরা দীর্ঘ ৮৬ বছর পর ঐতিহাসিক হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেছে। যা তাঁদের ইসলামের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করে। হয়তো এক সময় তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের গৌরব বৃদ্ধি করতে সফল হবে। খেলাফত নিয়ে বলাটা যদিও মুশকিল কিন্তু আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিত দিয়েছেন কেয়ামতের আগে আবার খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই এটা ভাবা অযৌক্তিক নয় যে তুরস্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে হারানো সেই খেলাফত বরং তাঁদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

তুরস্কের ক্ষমতায় রয়েছে এরদোগানের মতো একজন দক্ষ শাসক। এর ফলে তুরস্ক বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর আমরাও আশা করতে পারি তুরস্কের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের হারানো গৌরব যেন আবার ফিরে আসে।
——————
মোঃ লেমন বিশ্বাস
শিক্ষার্থী:রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

111 Views

আরও পড়ুন

বিশ্ব শ্রমিক দিবস : একটি পর্যালোচনা

কুবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

তীব্র তাপদাহে বাড়ছে রোগী : বারান্দা-মেঝেতে একের স্থানে তিন

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

দোয়ারাবাজারে ধ’র্ষ’ণের পর কলেজ ছাত্রী খু’ন, খু’নী লিটন আটক!

দোয়ারাবাজারে চেলানদীতে ভেসে উঠলো নিখোঁজ ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিনের লা’শ

সজিব মিয়ার কবিতা “মাটি”

ভয়াল ২৯ এপ্রিল নিহতের স্মরণে ধলঘাটা এসোসিয়েশন’র বিভিন্ন কর্মসুচী পালন

নাগরপুরে গাছ কাটা কেন্দ্র করে প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ২

তীব্র খরায় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে – ডা. অর্ণা জামান।

কুমারখালীতে বিনামূল্যে পানি, শরবত ও ক্যাপ বিতরণ

কবিতা:- নক্ষত্রের রাত