ঢাকাশুক্রবার , ১০ মে ২০২৪
  1. সর্বশেষ

রাবি ক্যাম্পাসে খেলনা বিক্রি করে ছেলে-মেয়েকে পড়াচ্ছেন মা

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
৬ আগস্ট ২০২৩, ৯:১০ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

আল মাহমুদ বিজয়,(রাবি প্রতিবেদক):

হাজার কষ্টের মধ্যেও ধরেছেন পরিবারের হাল। স্বামী থেকেও যেন না থাকার মতো। তিনি হাল না ধরলে হয়তো থেমে যেত তার সন্তানদের লেখাপড়া। অভাব অনটনে ভেঙে না পরে উত্তরণের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। অভাবের গণ্ডি থেকে মুক্ত করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য একাই লড়াকু সৈনিকের মতো লড়ে যাচ্ছেন সাবিনা। যিনি খেলনা বিক্রি করে পরিবারের খরচসহ পড়াচ্ছেন ছেলে-মেয়েকে।

বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) খেলনা বিক্রেতা সাবিনার কথা। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর মৌলভীবুধপাড়া। স্বামী-সন্তান দিয়ে পরিবারের রয়েছেন চার জন সদস্য।

স্বপ্ন ছিলো ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার। কিন্তু নিয়তি তার সহায় হয়নি। স্বামী রিকশা চালায় কিন্তু দেয়না কোনো খরচ। দুইবেলা খাবার জোগার করতেও পারতো না সাবিনা। বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসে বসিয়েছেন খেলনার দোকান। আগে শুধু বাদাম বিক্রি করতো সে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তার এই অসহায়ত্ব দেখে ওজন মাপার যন্ত্রসহ কিনে দেন দোকানের বেশ কিছু মালামাল।

এছাড়াও তার বাড়ির টিনের চালাটাও হয়ে গেছে ফুটা। যখন বৃষ্টি হয় টিনের চাল দিয়ে পানি পরে। বৃষ্টি শুরু হলে গামলা, ডিস পেতে বসে থাকতে হয় তাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাবিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে রাস্তার পাশে সাজিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন ধরনের খেলনা। এছাড়াও সামনে সাজনো রয়েছে বাদাম, ছোলাসহ কয়েকপ্রকার খাবারের কৌটা। সামনে রাখা আছে ওজন মাপার যন্ত্র। ওজন মাপার জন্য তিনি নির্ধারিত কোনো টাকা নেন না। যে যা দেয় তাতেই হয়ে যায় তার।

কথা হয় সাবিনার সাথে। মলিন কণ্ঠে সাবিনা বলেন, আমার একটা মেয়ে ও একটা ছেলে সন্তান। মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণীতে আর ছেলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। স্বামী থেকেও না থাকার মতো। আমাকে কোনো খরচ দেয়না। আমরা যে দুই বেলা খাবো এমন খরচটাও পাইনা। আমার সন্তানদের পড়শোনার খরচ চালাতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে গত ছয়-সাত মাস হলো এভাবে দোকান দিয়ে বসেছি।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে টিউবওয়েল নাই। অনেকে আশ্বাস দিলেও কেউ সাহায্য করেনি। ওজন মাপার যন্ত্র কিনে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মামারা। আর খেলনাগুলো পাঁচ হাজার টাকা ধার করে তুলেছি।

কেমন চলে তার দোকান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যে কয়দিন এসেছি আল্লাহ রহমতে একটা/দুইটা বিক্রি হয়েছে। এভাবেই কোনো রকমে দিন চলে যাচ্ছে সন্তানদের নিয়ে। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে। আল্লাহর কাছে আশা রেখেছি যতদিন সুস্থ থাকবো আমি যেন এভাবে সত পথেই কাজ করে খেতে পারি।

প্রতিদিন যা বেচাকেনা হয় তা দিয়ে এক কেজি চাল বা ডাল কিনে নিয়ে যাই তখন নিজেরও ভালো লাগে।

তিনি আরও বলেন, ‘ এখন প্রায় রাতে করে বৃষ্টি হচ্ছে আমি শুতে পারছিনা। যতখন বৃষ্টি হয় টিনের চাল দিয়ে পানি পরে। টিন ভালো না আমার ঘরের। ফুটা হয়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলে গামলা, ডিস পেতে বসে থাকতে হয়’।

সাবিনার বিষয় সত্যতা যাচাই করতে কথা হয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী পারভেজ আহমেদ জয়ের সাথে। তিনি বলেন, এই মহিলাকে প্রথমে দেখতাম বাদাম আর বিস্কিট নিয়ে বসতে। মোট টাকা হবে তখন সব মাল মিলে ২০০/৩০০ টাকার। এটা চোখে পড়লে আমি আর আমার ভাই রেজোয়ান ইসলাম মিলে সহায়তা করবার চিন্তা করি এবং তার সাথে কথা বলি যে আপনার জন্য কি করলে উপকৃত/খুশি হবেন? তারপর তিনি উত্তরে বললেন,তার দোকানটা বড় করে দিতে। সত্যতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে আমি আর ভাই বুথপাড়া গ্রামে যেখানে তাদের বাড়ি। তারপর আশেপাশে কয়েকজন কে জিগ্যেস করলাম বললো নিতান্ত গরীব। আমরাও সব দেখে আসলাম। তার আর্থিক অবস্থা একদমই খারাপ।

তাকে সাহায্যের বিষয়ে কথা হয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রেজোয়ান ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, তার আর্থিক অবস্থা ভালো না। তার জামাই রিকশা চালায় জামাইটা একটু অন্যরকমের টুকটাক নেশা করে। ক্যাম্পাসে টাকা তুলে তাকে সাহায্য করেছিলাম। আমরা তার বিষয়ে সব কিছু জানার পর ক্যাম্পাসে টাকা কালেকশন করলাম দুইদিন। অনেকে পারসোনালি হেল্প করেছে টাকা দিয়ে। টাকা তুলে দোকানের জন্য মোটামুটি যা লাগে কিনে দেওয়া হলো যা যা তিনি বলেছিলেন। এছাড়াও চাল ডাল তার ২ বাচ্চার খাতা কলম কিনে দেওয়া হলো এমনকি তাকে একটা ফোনও কিনে দেওয়া হয়েছিল।

এবিষয়ে কথা হয় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পিন্টুর সাথে। তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে আমি সবসময় চেষ্টা করি গরিব মানুষদের সহযোগিতা করার। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যাক্তিগত ভাবেও আমি সহযোগিতা করি। নলকূপের বিষয়গুলো এখন সরাসরি সিটি কর্পোরেশন দেখে। তাই আমরা সরাসরি কিছু করতে পারিনা। আমরা আগেও চেষ্টা করেছি সবার সহযোগিতা করার। এখনো সেই কাজ করে যাচ্ছি। অসচ্ছল কেউ থেকে থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই সাহায্য করবো তাকে।

352 Views

আরও পড়ুন

প্রথম ধাপে শেরপুরের দুই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা

শিক্ষকদের সাথে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ’ অফিস সহকারীর, প্রশ্রয়ের অভিযোগ সাবেক বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে

বুটেক্সের প্রথম দিনের ভর্তি শেষে ৬০ শতাংশ আসন ফাঁকা

চট্টগ্রামে বিমান বিধ্বস্ত : নিহত এক পাইলট

চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমান: আশংকাজনক অবস্থায় দুই পাইলট

জেলা আ.লীগের সভাপতিকে হারিয়ে সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন এমপি পুত্র

নওগাঁর পত্নীতলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গাফফার জয়ী

বিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পারভেজ কবীরের জয়

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব উদযাপন বৃহস্পতিবার

তানোরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ বিজয়ী হলেন যারা

বিশ্ব গাধা দিবস উদযাপন করবেন যেভাবে

গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ভোট বর্জন করলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী জিএম সেলিম