ঢাকাশুক্রবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৪
  1. সর্বশেষ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এতো আত্নহত্যা কেন? এর সমাধান কোথায়??

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৭ জানুয়ারি ২০২১, ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

—————
কথায় আছে মানুষ নাকি বাঁচার জন্য ভাসমান খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে৷ তাহলে কেন আত্মহত্যার মতো একটি কাণ্ড অবলীলায় ঘটিয়ে ফেলে সেই মানুষ?

মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? এর কোনো উত্তর নেই৷ জীবন শেষ করে দেওয়াকে অনেকেই বেশ সাহসী, অনেকে কাপুরুষোচিত কাজ বলে আখ্যা দেন৷ এগুলো নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়৷ এসব মতবাদ একপাশে সরিয়ে একটি নিরপেক্ষ স্থানে এসে ভেবে দেখবার সময় বোধ হয় চলে এসেছে– কেন ঘটছে আত্মহত্যা৷ মোটা দাগে সামাজিক অবক্ষয় বলে চালিয়ে দিতে পারলেও আদতেই কি এই একটিই কারণ?

সাম্প্রতিক সময়ে অল্পদিনের ব্যবধানে এতগুলো শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা আমাদের সকলকে নাড়া দিয়ে গেছে। নিশ্চয়ই কোন একটা জায়গা ঠিকঠাক নেই। কিন্তু কী সেই জায়গা? কী সেই একক কারণ? কী সেই অনেকগুলো কারণ? এই প্রবণতা কি কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেই? অতীতে এরকম আত্মহত্যা প্রবণতা ছিল কি?

ইটালির কবি ও ঔপন্যাসিক সেসার পাভিস এ-প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এভাবে: “আত্মহত্যা করবার জন্য কারুর কারণের অভাব হয় না।”

কিছুদিন পরপরই পত্রিকার পাতায় ভেসে আসে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার সংবাদ। বিষণ্ণ করে তুলেছে। চিত্র কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নয়, আত্মহত্যার দিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও এগিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অহরহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। একই চিত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর থেকে মুক্ত নন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।২০২০ সালে শুরুটা ভালো হলেও প্রাণঘাতী করোনা প্রাদুর্ভাবের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় আত্মহত্যা নামের এই নতুন মহামারীর। করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আত্মহত্যার এ মিছিলে যুক্ত হয়েছেন ২৮ শিক্ষার্থী।পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত জটিলতা, বেকারত্ব, নি:সঙ্গতা, মানসিক চাপ, তীব্র বিষন্নতাকে কেন্দ্র করে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী।এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন শিক্ষার্থী। আর গত বছরেই আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন৷ যা গত ৩ বছরের পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিষন্নতা, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রতিদিনই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নাম। গত ২রা জানুয়ারি আত্মহত্যার মিছিলে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফাবিহা সুহা নামের ৩য় বর্ষের এক ছাত্রী বাবা-মায়ের উপর অভিমান করে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যা বা আত্মহনন ( ইংরেজি:Suicide) হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া। ল্যাটিন ভাষায় “সুই সেইডেয়ার” থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে।চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে এক ধরনের অপরাধরূপে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও পৃথিবীর প্রচলিত সব ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘প্রিভেন্টিং সুইসাইড: অ্যা সোর্স ফর মিডিয়া প্রফেশনালস ২০১৭’ জরিপ বলছে, ‘প্রতিবছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে একটি।’ আরও একটি জরিপ বলছে, ‘গত ৪৫ বছরে আত্মহত্যার ঘটনা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আত্মহত্যা।

দেশে দেশে আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শুধুমাত্র মানসিক দুশ্চিন্তাই আত্মহত্যার একমাত্র কারণ নয়। এর পিছনে কাজ করে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিণতি এবং জীবনধারণের অবনতির সুযোগ। তবে কারণ যাই হোক না কেন আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। কাছের মানুষ কোনো ধরনের সমস্যায় ভুগছে এটা বুঝতে পারলে তাকে অবশ্যই মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া জরুরি। নয়ত গবেষনার এ ফল দিন দিন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত। আর সমাজে ধর্ষণ, আত্মহত্যার ন্যায় নানান অপরাধ বাড়ছে। তাদের মতে, লকডাউনে অধিকাংশ সময় বাড়িতে বসে সময় কাটালে এরকম সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এসব রোধে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে যুবক-যুবতীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর চাকুরি না পাওয়া, জীবনের প্রতি হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, নারীদের ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় সামাজিক লজ্জা,বিয়ের পর যৌতুকের টাকার যোগান দিতে না পারা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, চরম দারিদ্র্য– এরকম নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

মানসিক অসুস্থতার কারণেই কি ঘটে আত্মহত্যা। ডিপ্রেশন। এই ডিপ্রেশন জিনিসটা আসলে কী? কেন এ ডিপ্রেশনে ভোগে মানুষ? ডিপ্রেশন হচ্ছে সেই রোগ যেটি মূলত চাওয়া-পাওয়ার পার্থক্যের কারণে সৃষ্টি হয়। এই ডিপ্রেশন মূলত অনেকটাই সামাজিক আর পারিবারিকভাবে সৃষ্ট। অমুকের ছেলের এত রেজাল্ট, তোর নাই কেন? ওমুকের দুটা গাড়ি, আমাদের নাই কেন? আমার কী নাই যে, সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল? এরকম শত শত প্রশ্ন মনে জেগে ওঠে। হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয় এভাবে। সেখান থেকেই আসে আত্মহত্যা।

‘‘আমি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত এই কথাটা চিৎকার করে বললেও আমরা চিকিৎসা করবো না৷ কিন্তু আমার ক্যান্সার বললে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বে চিকিৎসায়৷’’ সমাজে যে লোক দেখানো সংস্কৃতি, নৈতিক অবক্ষয়, ডিপ্রেশন মাথা চাড়া দিচ্ছে– এসব নিয়ে আমরা কবে ভাববো? ভাবার সময় কবে আসবে?

মানুষ কেন এত আত্মহত্যা করছে? বা কেন এই আত্মহত্যার প্রবণতা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মানসিক চাপ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অবসাদ ও হেনস্থার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।’ কিন্তু আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আকুল হয়ে বলেছিলেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’ অথচ এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে চলে যেতে অনেকেই তাড়াহুড়া করেন, করেন আত্মহত্যা।

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে, বাবা-মায়েরাও সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন সচেতন থাকে না।আমাদের বাবা-মায়েরা আসলে আমাদেরকে একটা প্রেশার কুকারের মধ্যে রাখেন। তাদের পছন্দের জীবন কাটাতে বাধ্য করেন। বাবা-মায়েরা সন্তানের মনের অবস্থা সহজে বুঝতে পারে না বলে তরুণরা মূলত বন্ধু-বান্ধবদের কাছে বলে থাকে। কিন্তু সেটাও আসলে ফলপ্রসূ হয় না।আমাদের মানসিক সেবা বা মেন্টাল হেলথের প্রতি আমাদের দেশে আসলে কখনোই জোর দেয়া হয় না। এটা একটা বড় ধরণের সমস্যা।

আত্মহত্যা প্রবণতারোধে করণীয়:

সঙ্গে সঙ্গে রায় না দিয়ে তারা কী বলছে শুনুন। তাদের অভিজ্ঞতা বা আবেগকে অশ্রদ্ধা করবেন না।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

মাদকাসক্ত ব্যক্তি, মানসিক রোগী, অভিবাসী, বেকার ও সাংস্কৃতিকভাবে শ্রেণিচ্যুতদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। এ কারণে তাদের প্রতি বিশেষ সহায়তা কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।

আমাদের দেশে যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন এবং উত্ত্যক্তকরণের ফলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব দূর করার জন্য প্রয়োজন নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর প্রতি নারী-পুরুষ সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাও আত্মহত্যা প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

আত্মহত্যার জন্য ৪টি বিষয়কে মূলত দায়ি করা হয়।এগুলোর উপর আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সামাজিক সচেতনতা, পারিবারিক সচেতনতা, ধর্মীয় আচারবোধে সম্পৃক্ততা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা।পরিবারের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব আত্মহত্যা ঠেকাতে সবচেয়ে বড় সমাধান।সৃজনশীল বিকাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে উৎসাহ। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি করতে হবে সচেতনতামূলক প্রচারণা। বৈশ্বিক বিপদের সময়ে শিক্ষার্থীর বেতন মওকুফ না করা, হল না খুলে পরীক্ষা নেয়ার মত চাপ থেকে শিক্ষার্থীকে নিস্তার দিতে হবে। শিক্ষার্থীকেও ভাবতে হবে জীবন এখানেই শেষ নয়। পরিবারের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণের পাশাপাশি মেনে চলতে হবে নিজের সাচ্ছন্দতা। আত্মহত্যা একটি মানসিক রোগ। বিষয়টি থেকে সমাজকে দুরে রাখার জন্য স্কুল-কলেজ প্রতিটি পর্যায়ে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং এবং প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে।সচেতন হওয়া দরকার সবার। অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।আসুন আত্মহত্যাকে না বলি। জীবনকে ভালোবাসতে শিখি।

লেখকঃ
আনোয়ার হোসেন হৃদয়
শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
সদস্য,বাংলাদেশ তরূণ কলাম লেখক ফোরাম,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

177 Views

আরও পড়ুন

শেরপুরে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামী কানন মিয়া গ্রেফতার

আদমদীঘিতে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

BIIHR ও অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত: নেতৃত্বে জবি শিক্ষার্থী ফয়সাল

পেকুয়ায় বনবিভাগকে ফাঁসাতে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছেন বনদস্যুরা

পেকুয়ায় বনবিভাগকে ফাঁসাতে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছেন বনদস্যুরা

কুতুব‌দিয়ার ইউ‌পি চেয়ারম্যান আজমগীর কারাগা‌রে

দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ দুই ইয়াবা কারবারি গ্রেফতার

দীর্ঘ ৮ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস এর ঢাকায় ফেরা নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ

এবার কুবির আরেক সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

নাগরপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন আলো এর দাফন সম্পন্ন

দোয়ারাবাজারে বালিউড়া বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন

যৌথ-বাহিনীর কেএনএফ বিরোধী অভিযান বন্ধের দাবীতে রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ’র অবরোধের ডাক

রাজশাহীতে আদালতে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত দুই বোন